‘ফ্রি তদবির করা হয়’
তদবির লবিংয়ে তটস্থ গোটা বিশ্ব। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। স্থান-কাল-পাত্র ভেদে এর নাম প্রকার ভিন্ন হলেও উদ্দেশ্য একটাই ‘অর্থ উপার্জন’। দেশের পাসপোর্ট অফিস, ভূমি অফিসসহ বিভিন্ন জায়গায় তদবির দালালির খবর হরহামেশাই চোখে পড়ে। মহাজনি প্রথা বিলুপ্তির জন্য যে রকম ক্ষুদ্র ঋণকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা হয়েছে তেমনি দালালি প্রথা গোছাতে এরও প্রাতিষ্ঠানিকীরণের চিন্তা রয়েছে বিভিন্ন মানুষের।
যার যেমন চিন্তা, যার যেমন সামর্থ্য সেই অনুযায়ী ব্যস্ত নিজের অাখের গোছাতে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে মানুষ বহুলাংশে সচেতন হলেও থেমে নেই তদবিরবাজরাও। তদবিরবাজদের খপ্পরে পড়ে কত মানুষ যে নিঃস্ব হয়েছে, গভীর সাগরে কতজনের সলীল সমাধি হয়েছে কিংবা গহীন জঙ্গলে কত মানুষের গণকবর পাওয়া গেছে, তার কোনো হিসেব নেই।
শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের চারপাশে নানান রঙ্গ-ঢংয়ের হরেক রকমের তদবিরবাজদের দেখা যায়। বৈচিত্রময় তদবিরের এমনই এক বিজ্ঞাপন চোখে পড়লো রাজধানীর সৌন্দর্যের প্রাণকেন্দ্র হাতিরঝিলে।
নিকেতন গেটের বিপরীত দেয়ালে ফ্রি তদবিরের একটি বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে। বিজ্ঞাপনটিতে লেখা রয়েছে ‘ফ্রি তদবির করা হয়। অবাধ্যকে বাধ্য, জ্বীন ভূতের আছর, ব্যবসা মন্দা ও যে কোনো সমস্যার সমাধান দেয়া হয়।’ যোগাযোগ- ০১৯১...১৩৮৭।
সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যতিক্রমধর্মী এমন বিজ্ঞাপন দেখে পথযাত্রীরা ব্যঙ্গাত্মকভাবে মজা করছেন। আবার কয়েকজন বিজ্ঞাপনের সামনে বসে ছবি তুলছেন।
এমনই একজন খালিদ হোসেন। তিনিও বিজ্ঞাপনটির সামনে বসে একটি ছবি তুলছিলেন। কথা হয় তার সঙ্গে। হাস্যোজ্জল ভঙ্গি নিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা শহরকে আজব শহর বলা হয়। তবে নগর জীবনে এমন কিছুর দেখা মেলে যার সঙ্গে আসলেই আজব বিষয়ের সামঞ্জস্য রয়েছে। মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতেই কৌশলে চমকপদ বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে।
এদিকে বিজ্ঞাপনে দেয়া নম্বরে কথা হয় মফিজুর রহমানের সঙ্গে। কর্পোরেট দুনিয়ায় আপনি কেন নিঃস্বার্থভাবে ফ্রি তদবির করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফ্রি কেন করছি (দীর্ঘশ্বাস), ফ্রি বলতে আমাদের এখানে শুরুতেই হাদিয়ার কোনো ব্যবস্থা নাই। যদি কোনো কিছুর প্রয়োজন হয় তাহলে তা জোগাড় করে নিয়ে আসতে হবে।
কাজ হয়ে যাওয়ার পর পেমেন্ট করতে হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, না। তবে আপনি যে কারণে আসছেন তা যদি আল্লাহ ফয়সালা করে দেন। আমরা গ্যারান্টি দিয়ে কোনো কাজ করি না। যারা করে বানোয়াট। যারা নিজের হায়াতের গ্যারান্টি দিতে পারেন না তারা কিভাবে অন্য কিছুর গ্যারান্টি দেবে।
তিনি আরো বলেন, সপ্তাহে দুই দিন (রোব ও বৃহস্পতিবার) বিকেল তিনটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খিলগাঁও এর গোরানে মক্কা মসজিদের পাশে তাদের অফিস রয়েছে।
এ বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণ করলে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, পুরো দেশেই এমন বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। পাবলিক যদি এসব না বুঝে তাহলে আমরা কী করবো।
এমএম/এসকেডি/আরএস/পিআর