ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

করোনার থাবা: আয় কমেছে সংসদের দর্শনার্থী থেকে

সিরাজুজ্জামান | প্রকাশিত: ০৪:৫২ পিএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২

মহামারি করোনার কারণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ধসের মতো জাতীয় সংসদের দর্শনার্থী শাখায়ও ধস নেমেছে। দর্শনার্থী থেকে কমেছে সংসদের আয়। লুই আই কানের অনন্য এই স্থাপত্য দর্শনার্থীদের দেখিয়ে ২০১৬ সালে আয় হয়েছিল প্রায় ৩ লাখ টাকা। একই সময়ে সংসদ ভবনের শপথ কক্ষ এবং মন্ত্রী হোস্টেলের আইপিডি কনফারেন্স কক্ষ, সংসদীয় বিভিন্ন কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিয়ে আয় হয়েছিল ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। কিন্তু এখন এসব আয়ে ভাটা পড়েছে।

গত সাত বছরের তথ্য বিশ্লেষণে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সংসদের ভিজিট শাখা সূত্র জানায়, করোনার আগের দুই বছর আর করোনাকালের দুই বছরের বার্ষিক গড় দর্শনার্থী সংখ্যার ব্যবধান অনেক। করোনার আগের দুই বছরে বার্ষিক গড় দর্শনার্থী ছিল প্রায় ৫ হাজারের মতো। করোনার দুই বছরের বার্ষিক গড় দর্শনার্থী দেড় হাজারেরও কম। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২০ এ দর্শনার্থী ছিল অনেক বেশি। ২০২০ সালে বিভিন্ন শ্রেণির দর্শনার্থী এসেছেন ২ হাজার ৬১৯ জন। অন্যদিকে ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত দর্শনার্থী ছিল মাত্র ২৫৯ জন।

স্থাপনাটি যারা দেখতে আসতেন তাদের একটি বড় অংশ শিক্ষার্থী। ২০১৮-১৯ এর হিসাব অনুযায়ী, মোট দর্শনার্থীর যথাক্রমে ৫১ ও ৪৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। তবে করোনাকালে ২০২০ সালে তাদের হার ১৬ শতাংশ, ২০২১ এ কোনো শিক্ষার্থী দর্শনার্থী ছিল না। ২০১৫ সালে দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৪৬৯ জন, ২০১৬ সালে ৫ হাজার ৮১৩, ২০১৭ সালে ৭ হাজার ১৪৮, ২০১৮ সালে ৩ হাজার ৬১৬ ও ২০১৯ সালে ৬ হাজার ৩৪২ জন।

এ বিষয়ে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, বিশ্বের স্থাপত্যকলার বিস্ময় আমাদের জাতীয় সংসদ ভবন। এর গুরুত্ব ও স্থাপত্যকলা দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে অনেকেই আসেন। আমরা তাদের সবসময় উৎসাহ দেই। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সংসদের অনেক কার্যক্রমই বন্ধ ছিল। এজন্য দেশি বিদেশি দর্শনার্থী কমে গেছে।

jagonews24

সংসদের ভিজিট শাখার কর্মকর্তা উপসচিব ওবায়দুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, সংসদ ভবন পরিদর্শন করতে চাইলে বাংলাদেশিদের ভিজিট শাখাকে পরিদর্শনের কমপক্ষে সাতদিন আগে জানাতে হয়। ভবন পরিদর্শনের আবেদনকারীরা পরিকল্পিত ভিজিটের আওতায় পড়েন। বিদেশি দর্শনার্থীদের ক্ষেত্রে টিকিটের মূল্য ৫০০ টাকা। বাংলাদেশি দর্শনাথীদের ৫০ টাকা দিতে হয়। প্রথম শ্রেণি থেকে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কোনো প্রবেশ ফি নেই। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিকল্পিত ভিজিটের আওতাভুক্ত হতে হবে। সরকারি ছুটি ছাড়া রোববার থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তারা ভিজিট করতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, বিদেশিরা একদিন আগেই এ সংক্রান্ত ফরম পূরণ করে পাঠাতে পারবেন। এজন্য তাদের এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও ভিসার ফটোকপি দিতে হবে। সংসদের অনলাইনে এ সংক্রান্ত দরখাস্ত পাওয়া যায়। দরখাস্তটি পূরণ করে সচিব বরাবর পাঠাতে হয়।

জানা যায়, এ ধরনের পরিদর্শকরা মিনিস্টার হোস্টেল, সংসদের দক্ষিণ প্লাজা, দক্ষিণ প্লাজার ওপর দিয়ে সংসদ ভববে প্রবেশ (লেভেল-৩), লেভেল-৩ প্রদক্ষিণ, চেম্বার অ্যাসেম্বলি হাউজ, নর্থ প্লাজা, মসজিদ, এসআইএস রুম, কমিটি কক্ষ (যেখানে সংসদীয় কমিটির বৈঠক হয়), শপথ কক্ষ (এমপিরা যেখানে শপথ নেন), গ্রন্থাগার, প্রধান ফটক (লেভেল-১) দিয়ে বাহির হয়ে ১/১ মিনিস্টার হোস্টেল দেখার সুযোগ পান।

এমপি, মন্ত্রী বা সংসদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে দেখা করতে হলে কোনো ভিজিট ফি দিতে হয় না। এ ধরনের দর্শনার্থীরা সংসদে যার সঙ্গে দেখা করবেন তার সুপারিশ নিয়ে ভেতরে ঢুকতে পারেন। তবে তারা সব জায়গায় যেতে পারেন না।

২০১৬ সালে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সংগঠনের মোট ৫ হাজার ৮১৩ জনকে সংসদ ভবন ও সংসদ অধিবেশন দর্শন করানোর পাশাপাশি সংসদের ইতিহাস ও কার্যক্রম সম্পর্কে ব্রিফ করা হয়। এছাড়া বিদেশি দর্শনার্থীদের ফি বাবদ সংসদ ভিজিট শাখার মাধ্যমে ওই বছর প্রায় তিন লাখ টাকা আয় হয়। পরে এসব টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়।

সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, জাতীয় সংসদ ভবন আমাদের জন্য গর্বের। এখানে শুধু টাকার জন্য দর্শনার্থীদের আসতে উৎসাহ দেওয়া হয় না। বাংলাদেশকে তুলে ধরার জন্যও এটির ভূমিকা বিরাট।

তিনি বলেন, বিদেশ থেকে আসা দর্শনার্থীদের অধিকাংশই স্থাপত্যকলার শিক্ষার্থী বা গবেষক। তারা মূলত সংসদ ভবনের নির্মাণশৈলী নিয়ে গবেষণা করেন। করোনার কারণে তারাও আসতে পারছেন না। আশা করি করোনা চলে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

এইচএস/এমএইচআর/জিকেএস