চিঠিতেই আটকে আছে চিনিকলের বহুমুখী উৎপাদন
# মিলগুলোর প্রস্তাব বাস্তবসম্মত না হওয়ায় তা গ্রহণযোগ্য হয়নি।
# প্রস্তাব নেওয়ার পর কিছুই জানায়নি বিএসএফআইসি, অভিযোগ ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের।
# সরকারি চিনিকলে বিদেশি বিনিয়োগ আনতে চায় বিএসএফআইসি।
দেশের সবগুলো চিনিকলের আয়ুষ্কাল প্রায় শেষ। অধিকাংশই ব্রিটিশ আমলের। অন্যগুলোর বয়সও ৩০-৫০ বছর। ফলে চিনি উৎপাদনে বড় অংকের লোকসান গুনছে প্রতিটি মিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে চিনিকলগুলোতে বহুমুখী পণ্য উৎপাদনের তাগিদ দিয়ে আসছে সরকার। ২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর একই পরামর্শ দেয় জার্মান বিশেষজ্ঞ দল। চিনিকল মালিকরা প্রস্তাবও দেয়। তবে সেই ‘প্রস্তাব বাস্তবসম্মত নয়’ জানিয়ে সবগুলো চিনিকল বিদেশি বিনিয়োগে দেওয়া যায় কি না সেটা চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছে বিএসএফআইসি।
গত বছরের শুরুতে বহুমুখী বা উপজাত পণ্য উৎপাদনের উপায় খুঁজতে শুরু করে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)। প্রতিটি মিল কী ধরনের বহুমুখী পণ্য উৎপাদন করে লাভজনক হতে পারে সেটা জানাতে মিলগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের চিঠি দেয় সংস্থাটি।
এরপর গত বছর জুনে বিভিন্ন মিল থেকে প্রস্তাবও এসেছে। কিন্তু পরবর্তীকালে থেমে গেছে সে উদ্যোগ। তবে বিএসএফআইসি বলছে, মিলগুলো থেকে যে প্রস্তাব এসেছে সেগুলো বাস্তবসম্মত নয়। ফলে সেসব প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএসএফআইসির ১৫টি চিনিকলের প্রস্তাবে বহুমুখী পণ্য হিসেবে স্পিরিট ও অ্যালকোহল উৎপাদন, ফলের রস প্রক্রিয়াজাতকরণ, পানি পরিশোধনাগার নির্মাণ, রাইস মিল, ফ্লাওয়ার মিল, হিমাগার স্থাপন এবং পশুপালনেরও প্রস্তাব ছিল। যার কোনোটিতে সায় দেয়নি বিএসএফআইসি।
এ বিষয়ে জাগো নিউজের কথা হয় কয়েকজন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে। তারা জানান, প্রস্তাব নেওয়ার পর থেকে এ বিষয়ে কিছুই জানায়নি বিএসএফআইসি।
ঠাকুরগাঁও চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাখাওয়াৎ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আমরা হিমাগার স্থাপনসহ কয়েকটি প্রকল্পের প্রস্তাব করেছি। কিন্তু প্রস্তাব নেওয়ার পরে সে বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি।
এ বিষয়ে বিএসএফআইসি পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রধান কবির আহাম্মদ সরকার জাগো নিউজকে বলেন, তাদের (মিল কর্তৃপক্ষের) এসব প্রস্তাব বাস্তবসম্মত নয়। এসব করে মিল লাভজনক দূরের কথা, টেকানো যাবে না। এমন কিছু প্রস্তাব আমরা চাচ্ছি, যাতে মিলগুলো তাদের খরচ পুষিয়ে লাভজনক হতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা আরও ভাবছি। বহুমুখী পণ্য উৎপাদনের থেকে এখন চিনিকল নিয়ে নতুন পরিকল্পনায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। থাইল্যান্ড ও জাপান আমাদের তিনটি চিনিকলে বিনিয়োগ করতে চায়। সেভাবে সবগুলো চিনিকল বিদেশি বিনিয়োগে দেওয়া যায় কি না সেটা আগে চেষ্টা করা হবে।
পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের তথ্যমতে, দেশে মোট সরকারি ব্যবস্থাপনায় চিনিকল আছে ১৫টি। এর মধ্যে ৯টি উৎপাদনে রয়েছে। বাকি ছয়টিতে আখ মাড়াই কার্যক্রম চালু থাকলেও সরাসরি উৎপাদনে নেই। দেশের চিনিকলগুলোর অধিকাংশেরই তিন থেকে চার হাজার একর জমি রয়েছে। কিছু মিল ছোট, যার মধ্যে সবচেয়ে ছোট পাবনা চিনিকল লিমিডেট। এর আয়তন ৬০ একর।
বড় মিলগুলোর মধ্যে কেরু অ্যান্ড কোং (বাংলাদেশ) লিমিটেড, সেতাবগঞ্জ সুগার মিলস, নর্থবেঙ্গল সুগার মিলস, রংপুর সুগার মিলে বড় ধরনের বিনিয়োগ আশা করছে বিএসএফআইসি। ছোটখাটো মিল বা ফ্যাক্টরিতে বহুমুখী পণ্য উৎপাদনে এসব মিলের জমি নষ্ট হবে। ফলে পরবর্তীসময়ে নতুন বিনিয়োগ মিলবে না।
এসব বিষয়ে বিএসএফআইসির চেয়ারম্যান মো. আরিফুর রহমান অপু জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের (বিএসএফআইসি) আর্থিক পরিস্থিতি ভালো নয়। যে কোনো উদ্যোগ নিতে হলে অবশ্যই ভেবেচিন্তে নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, হুটহাট বিনিয়োগের সক্ষমতাও এ সংস্থার নেই। বড় বিনিয়োগের পরিস্থিতিও নেই। বিদেশি বিনিয়োগের যেসব প্রস্তাব, আমরা সেগুলো আগে পর্যালোচনা করছি।
জানা যায়, দেশের ১৫টি চিনিকলের মধ্যে তিনটি ত্রিশের দশকের, তিনটি পঞ্চাশের দশকের, সাতটি ষাটের দশকের এবং দুটি বাংলাদেশ স্বাধীনতার পরে স্থাপিত হয়।
এগুলো ৪০ থেকে ৫০ বছরের আয়ুষ্কাল ছিল। ফলে অধিকাংশ চিনিকলের যন্ত্রাংশ অতি পুরাতন ও জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় এগুলির স্থাপনকালীন উৎপাদন ক্ষমতা ও দক্ষতা যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছে। ১০ টি চিনিকলের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল অনেক আগে শেষ হয়ে গেছে। মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে ৯টি চালু রাখা হয়েছে এখন।
এনএইচ/কেএসআর/এএ/এমএস