নিজামীর দণ্ড কার্যকরে আরো তিন ধাপ
একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ফলে নিজামীর রায় কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু করবে কর্তৃপক্ষ। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে তার দণ্ড বহাল রাখার পরেও নিয়ম অনুযায়ী আরো তিনটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে।
প্রথম ধাপ : নিজামীর বিরুদ্ধে রায় ও পর্যবেক্ষণ লেখার পর সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের বিচারপতিদের স্বাক্ষর শেষে পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হবে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটে এবং রায়ের কপি বিচারিক আদালতে গেলে তারা মৃত্যুপরোয়ানা পাঠাবেন কারাগারসহ সংশ্লিষ্ট স্থানে।
দ্বিতীয় ধাপ : পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি প্রকাশের পর আইন অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করার সুযোগ পাবে আসামি। দণ্ডের বিষয়ে বিচারিক আদালত অর্থাৎ ট্রাইব্যুনাল থেকে মৃত্যুপরোয়ানা জারির করলেও রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি হওয়া আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
তৃতীয় ধাপ : রিভিউ আবেদনে রায় বহাল থাকলে রাষ্ট্রপতির কাছে অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে পারবে অপরাধী। রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার পর রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করা না করার উপর সিদ্ধান্ত হবে। তবে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা নাকচ করলে আসামির দণ্ড কার্যকরে আর কোনো বাধা থাকবে না।
অর্থাৎ আপিল বিভাগে মানবতাবিরোধী অপরাধে মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল থাকলেও রায় কার্যকরে এখনো এই তিনটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে।
এদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে এ পর্যন্ত চার জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
নিজামীর মামলাতেও এর (আইনি ধাপ) ব্যতিক্রম ঘটবে না বলে জানান রাষ্ট্রে প্রধান আইন কর্মকতা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, নিজামীর মামলায় সব নিয়ম অনুসরণ করা হবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল আরো বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের আপিল মামলায় পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের দিন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে পারবেন। তবে সেটা হবে নিজামীর আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি প্রকাশ করার পরের ধাপ।
তিনি বলেন, আসামিপক্ষের রিভিউ আবেদনের জন্য রাষ্ট্র বসে থাকবে না। দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিবে রাষ্ট্র। আসামিরা রিভিউ দায়ের করলে তখন দণ্ড কার্যকর প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে।
মাহবুবে আলম বলেন, রায় প্রকাশের পর পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি সংশ্লিষ্টদের পাঠানো হবে। বিচারিক আদালত (ট্রাইব্যুনাল) দণ্ডিতের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করবে। বিধি মোতাবেক রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) করতে পারবেন আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষ।
এর আগে গত ৬ জানুয়ারি নিজামীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিলের রায় ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগ। শীর্ষ এ জামায়াত নেতার বিষয়ে রায়ে সংক্ষিপ্ত অংশ প্রকাশ করা হয়।
ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আসা এটি ষষ্ঠ মামলা, যার চূড়ান্ত রায় হল। এর আগে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আনা আরো ৫টি মামলা আপিলে নিষ্পত্তি হয়েছে।
নিজামীকে বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং গণহত্যা ও ধর্ষণসহ সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) ৮টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ৪টিতে মৃত্যুদণ্ড ও ৪টিতে যাবজ্জীবন রায় দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলে ৩টিতে মৃত্যুদণ্ড ও ২টিতে যাবজ্জীবন বহাল রেখে সংক্ষিপ্ত রায় প্রকাশ করেছে আপিল বিভাগ।
বাংলাদেশের মন্ত্রী পরিষদে দায়িত্ব পালনকারী তৃতীয় কোনো মন্ত্রী ৭১’এ সংগঠিত মানবতাবতাবিরোধী অপরাধে সর্বোচ্চ দণ্ড পেলো। এর আগে সাবেক মন্ত্রী জামায়াতের আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপি’র সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মামলায় নিজামীকে গ্রেফতারের পর একই বছরের ২ অগাস্ট তাকে মানবতাবিরোধী মামলায় আটক দেখানো হয়।
এদিকে সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা যায়, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আনা আরো ৯টি আপিল মামলা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
আপিলে শুনানির অপেক্ষায় থাকা মামলার আসামিরা হলেন- জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলী, এটিএম আজহারুল ইসলাম ও আব্দুস সুবহান, আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত মোবারক হোসেন, জাতীয় পার্টির নেতা সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার ও সাবেক এমপি পলাতক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাহিদুর রহমান, বাগেরহাটের শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার ও খান আকরাম হোসেন।
এফএইচ/আরএস/পিআর