জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল চারলেন প্রকল্পে লুটপাট ও প্রতারণার অভিযোগ
জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চারলেন প্রকল্পে লুটপাট ও প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। অধিগ্রহণকৃত জমির ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পেতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন জমির মালিকরা। একদিকে ভূমি জরিপ কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় দালালদের যোগসাজসে ধানক্ষেত, পুকুর ও ডোবায় বাঁশের খুঁটি দিয়ে টিনের চালের ঘর নির্মাণ করে সরকারি অর্থ লুটে নিচ্ছে। অপরদিকে অনেকেই নিজের জমি ও প্রকৃত স্থাপনার সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে পথে বসেছে।
জয়দেবপুরের ভোগড়া থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার সড়কের দু’পাশে প্রায় ৩৬ হেক্টর জায়গা অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ৪শ ৫০কোটি টাকা। আড়াই বছর পরও জেলা প্রশাসন প্রকল্পকে সেসব জমি দিতে পারেননি। ২০১৩ সালে সড়কটিকে চারলেন করার কাজ শুরু হলেও, এখনো দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।
সাউথ এশিয়া সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন, সাসেক সংযোগ প্রকল্পের আওতায় চলছে এই অধিগ্রহণ। তবে জমি বুঝে না পেলেও, প্রকল্পটির সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদনে জমি অধিগ্রহণ বাবদ প্রায় ২শ ৮৪ কোটি টাকার ব্যয় দেখানো হয়েছে।
জয়দেবপুরের ভোগড়া থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার মহাসড়ক চারলেন করার প্রকল্পে লুটপাট ও প্রতারণার চিত্র উঠে এসেছে সরেজমিন অনুসন্ধানে। জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ আদায়ের নামে সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র।
অন্যদিকে কেউ কেউ জমির ন্যায্য মূল্য ও প্রকৃত স্থাপনার ক্ষতিপূরণটুকু পাচ্ছেন না। এ নিয়ে চরম হতাশায় পরেছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার কাটরা গ্রামের রিয়াজ উদ্দিন (৭০) অভিযোগ করেন, এ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা প্রতারণা করে আমাকে প্রথমে দুই কোটি ২৬ লাখ টাকা দেয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু এক কিস্তিতে ২৬ লাখ পাওয়ার পর আমি আর কোনো প্রকার টাকা পাইনি। এই টাকা পেতেও আমাকে দুই লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। তারা বলেছিল, এই টাকার পর আমাকে আরো দুটি কিস্তি দেয়া হবে। কিন্তু অফিস কর্তৃপক্ষ আমাকে আমার পাওনা বুঝিয়ে দিতে গরিমসি করছে।
এদিকে রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে রতন মিয়া ও রুস্তম মিয়া অভিযোগ করেছেন, ডিসি অফিসের জাহাঙ্গীর আমাদের আজকাল করে তিন মাস যাবৎ ঘুরাচ্ছে। আমরা আমাদের পাওনা বুঝে চাইলে তিনি আমাদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে।
এ ব্যাপারে একই উপজেলার পাকুল্যা এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন, সরকার ২০ লাখ টাকা মূল্যের জমির দাম ধরেছে ছয় লাখ টাকা। বড় কর্তাদের শতকরা ১০ টাকা ঘুষ দিয়ে আমাদের টাকা আনতে হয়েছে।
অন্যদিকে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা নিম্নমানের কাঠ, বাঁশ, টিন ও ইট দিয়ে তৈরি সেই সব ঘর তৈরিকারী দালালরা ঠিকই কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ভূমি অফিসের কর্মকর্তা কোনো প্রকার টাকা না দিয়ে, ঘরবাড়ি সরিয়ে নেয়ার নিদের্শ দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি, কর্মকর্তাদের কথামত কমিশন (ঘুষ) দিয়েও টাকা পাচ্ছে না তারা।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. লাল হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যারা আমাকে অভিযুক্ত করছেন তারা নিতান্তই আক্রশের বশবর্তী হয়ে এমন অভিযোগ করছেন।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মাহবুব হোসেন বলেন, চারলেনে জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি জেলা প্রশাসন দেখভাল করছে। এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। কেউ অভিযোগ করলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ ও নিষ্পত্তি করা হবে বলেও জানান তিনি।
বিএ