ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

এলপিজি: সরকার নির্ধারিত দাম মানছেন না খুচরা বিক্রেতারা

মাহবুবুল ইসলাম | প্রকাশিত: ১১:৪৮ এএম, ১৭ জানুয়ারি ২০২২

বছরের শুরুতেই জানুয়ারি মাসের জন্য এলপি গ্যাসের দাম ৫০ টাকা কমিয়ে ১ হাজার ১৭৮ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। একই সঙ্গে প্রতিটি এলপিজি বিক্রি করা দোকানে নির্ধারিত মূল্যতালিকা প্রদর্শনেরও নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ এনার্জি অ্যান্ড রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। কিন্তু খুচরা বিক্রেতা পর্যায়ে নির্ধারিত দাম ও মূল্য প্রদর্শনের নির্দেশনা দুটোই মানা হচ্ছে না।

এক সপ্তাহজুড়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকটি হোলসেলার ও খুচরা বিক্রেতার দোকান ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। হোলসেল পর্যায়ে বিইআরসি নির্ধারিত দাম রাখা হলেও আরও ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেশি রাখছেন খুচরা বিক্রেতারা। অন্যদিকে মূল্য প্রদর্শনের নির্দেশনা হোলসেলাররা মানলেও মানছেন না খুচরা বিক্রেতারা।

রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, খিলগাঁও এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকার বাজার, অলিগলিতে বেশকিছু দোকানে ১২ কেজির এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম রাখা হচ্ছে ১ হাজার ২৩০ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকা পর্যন্ত। কোনো কোনো দোকানে ১ হাজার ২৭০ টাকাও মূল্য দাবি করা হচ্ছে। অথচ জানুয়ারি মাসের শুরুতেই ভোক্তা পর্যায়ে ১২ কেজি এলপিজির দাম ১ হাজার ১৭৮ টাকা নির্ধারণ করে বিইআরসি।

ক্রেতাবেশে বাড্ডার হোসেন মার্কেটের পেছনের গলিতে মেসার্স রিনা ফাতেমা মেটাল নামে এক খুচরা বিক্রেতার দোকানে গিয়ে ১২ কেজির এলপিজির দাম জানতে চাইলে জাগো নিউজের প্রতিবেদকের কাছে ওই দোকানের মালিক ১ হাজার ২৫০ টাকা দাবি করেন। তার দোকানে একাধিক কোম্পানির এলপিজির ১০ থেকে ১৫টি সিলিন্ডার রয়েছে। ‘দাম না কমানো হয়েছে’ এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘সরকার দাম কমাইছে, আমিও তো কমাইছি। আগে তো ১ হাজার ৩০০ টাকা ছিল। ৫০ টাকা কমাইয়া এখন আড়াইশ রাখি।’

এলপিজি: সরকার নির্ধারিত দাম মানছেন না খুচরা বিক্রেতারা

সরকার তো ১ হাজার ১৭৮ টাকা দাম নির্ধারণ করেছে, আপনি কেন এত বেশি রাখছেন প্রশ্ন করলে ওই দোকানদারের উত্তর, ‘আমার দোকান ভাড়া কি সরকার দেয়? আমার সব সার্ভিস সরকার দেয় নাকি?’ আপনার দোকানে এলপিজির মূল্যতালিকা কোথায়, প্রশ্ন করলে তার উত্তর, ‘তালিকার খবর জানি না’।

উত্তর বাড্ডার সাঁতারকুল এলাকায় এলপি গ্যাস বিক্রি করে ভাওয়াল ট্রেডার্স। রড-সিমেন্টের পাশাপাশি এ দোকানের ভেতরে ও বাইরে বেশকিছু এলপিজির সিলিন্ডার সাজানো আছে। ক্রেতাবেশে দাম জানতে চাইলে দোকানের মালিক বলেন, ‘বিক্রি করি ১ হাজার ২৫০ টাকা করে, চাইলে ১ হাজার ২৩০ রাখতে পারুম আরকি।’ সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে এত বেশি রাখছেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গ্যাসের চাহিদা বেশি, কিন্তু কোম্পানির পক্ষ থেকে সার্ভিস কম। এজন্য আমাকে আশপাশের দোকান থেকেও কিনে আনতে হয়। তাই দামও একটু বেশি।’ দোকানে চার্ট লাগানোর কথা থাকলেও লাগাননি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চার্ট লাগানোর কথা জানি না। সরকার লাগাইতে বলছে, তাহলে আমাদের লসের বাকি পয়সা সরকার দিক।’

একাধিক খুচরা বিক্রেতার দাবি, তাদের কাছ থেকে ১ হাজার ১৮০ টাকা করে দাম রাখেন হোলসেলাররা। সঙ্গে আছে গাড়ি ভাড়া। এজন্য তারাও দাম বেশি রাখেন।

এলপিজি: সরকার নির্ধারিত দাম মানছেন না খুচরা বিক্রেতারা

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেন শাহজাদপুর সুবাস্তু টাওয়ারের বিপরীত পাশে রিদয় এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার মো. শাবলু। বেশ কয়েকটি কোম্পানির হোলসেলার হিসেবে এলপিজি বিক্রি করেন তারা। দোকানটিতে গিয়ে দেখা যায়, ম্যানেজারের টেবিলের পাশেই গ্যাসের মূল্যতালিকা টাঙানো। সরকার নির্ধারিত দামেই বিক্রি করছেন তারা।

গ্যাসের দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে দোকানের ম্যানেজার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা কোম্পানি থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮০ টাকার মধ্যেই পাই। ১১শ টাকায় পাইকারি বিক্রি করি। খুচরা কাস্টমার এলে সরকার নির্ধারিত ১ হাজার ১৭৮ টাকায় বিক্রি করি।’ গাড়ি ভাড়া দিয়ে নিতে হয় খুচরা বিক্রেতাদের এমন অভিযোগ তাকে জানালে তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেদের গাড়ি দিয়ে বিনা চার্জে দিয়ে আসি।’ গ্যাসের সংকট আছে খুচরা বিক্রেতাদের এমন দাবির কথা জানালে তিনি বলেন, ‘কোনো সংকট নেই। এক সপ্তাহে সংকট দেখা দিলে তার পরের সপ্তাহেই গ্যাস ভরপুর থাকে। স্থায়ী কোনো সংকট নেই।’

এলপিজি: সরকার নির্ধারিত দাম মানছেন না খুচরা বিক্রেতারা

উত্তর বাড্ডা বাজারের পাশেই এলপিজির বড় ডিলার বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স। দোকানটিতে গিয়ে দেখা যায়, কাগজে প্রিন্ট দিয়ে সরকার নির্ধারিত মূল্যতালিকা টাঙানো। দোকানের মালিক মামুনুর রশিদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘খুচরা দাম সরকার নির্ধারিত ১ হাজার ১৭৮ টাকা রাখি। যদি কোনো কাস্টমার বলেন, তার বাসায় দিয়ে আসতে হবে, তবে রিকশা ভাড়াসহ গিয়ে লাগিয়ে দিয়ে আসার কারণে সার্ভিস চার্জ হিসেবে ১ হাজার ২৫০ টাকা রাখি।’ পাইকারি কত দামে বিক্রি করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কেনা ১ হাজার ৮০ টাকার মতো পড়ে। আমরা কমিশন পাই। এজন্য কোনো কোনো পাইকারকে ১ হাজার ৬০ হলেও দিয়ে দেই।’ খুচরা বিক্রেতারা কমে পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের কাছ থেকে নেয় কম দামে, বিক্রি করে বেশি দামে। এজন্য আমাদেরও বদনাম হয়।’ মূল্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকার অভিযান চালালে খুব ভালো হবে। খুচরা বিক্রেতারা নিয়ম মানে না। এজন্য আমাদেরও বদনাম হয়।’

খুচরা বিক্রেতা পর্যায়ে দামে অনিয়ম ও তালিকা না টাঙানোর বিষয়ে নজরে আনলে বাংলাদেশ এনার্জি অ্যান্ড রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সদস্য (গ্যাস) মকবুল ই ইলাহী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা যে কোনো ধরনের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব। আমরা নিজেরা তো আর মোবাইল কোর্ট নামাতে পারি না। যদি কোনো ভোক্তা দোকান থেকে বেশি দাম দিয়ে কিনেছেন এমন দাম উল্লিখিত স্লিপ নিয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ করেন, তবে আমরা সেখানেই ভোক্তা অধিকার আইন অনুযায়ী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে পারবো।’

এলপিজি: সরকার নির্ধারিত দাম মানছেন না খুচরা বিক্রেতারা

দোকানে মূল্যতালিকা প্রদর্শনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আগে তো একদমই এটার চর্চা ছিল না। এখন তো বিভিন্ন জায়গায় মূল্য টাঙিয়ে রেখে বিক্রি শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে যেন সবাই এ চর্চাটা করে সেজন্য আমরা কাজ করে যাবো। সবাইকেই তার জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে। যাদের চোখে অনিয়ম ধরা পড়ছে, গণমাধ্যমসহ সাধারণ মানুষ তারা যেন আমাদের বিষয়টি জানান।’

গত বছর ডিসেম্বরে এলপিজির সর্বশেষ দাম ছিল ১ হাজার ২২৮ টাকা। এবছর জানুয়ারি মাসের জন্য ৫০ টাকা দাম কমিয়ে ১ হাজার ১৭৮ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। একই সঙ্গে দোকানগুলোতে সরকার নির্ধারিত বিক্রয়মূল্য টাঙিয়ে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এমআইএস/এমআরআর/এএ/জেআইএম