দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ব বাজারে নজর সারা লাইফস্টাইলের
আন্তর্জাতিক পোশাক উৎপাদনে স্নোটেক্স আউটারওয়্যার লিমিটেডের অভিজ্ঞতা দীর্ঘ সময়ের। তাদের লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড ‘সারা’। কম দামে মানসম্মত পোশাক ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিতে যাত্রা শুরু হয় প্রতিষ্ঠানটির। দেশি ও বিদেশি ফেব্রিকে ব্র্যান্ডের পোশাক তৈরি করছে তারা।
মিরপুর, বসুন্ধরা সিটি, মোহাম্মদপুর, বারিধারা, বনশ্রী, উত্তরা ও রংপুরে রয়েছে সারার আউটলেট। এই সাতটি আউটলেট নিয়ে এরই মধ্যে লাইফস্টাইল জগতে সারা নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের পাশাপাশি শিশুদের জন্যও রয়েছে বাহারি সব পোশাক। ঐতিহ্য ও পাশ্চাত্য ফ্যাশন ট্রেন্ড অনুসরণ করে স্বল্পমূল্যে ভালো মানের পোশাক ক্রেতাদের হাতে তুলে দিচ্ছে দেশীয় এই ব্র্যান্ড।
বর্তমান সময়ে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড সারা লাইফস্টাইলের যাত্রায় রয়েছে একজন নারী উদ্যোক্তার প্রচেষ্টার গল্প। তিনি ব্র্যান্ড পরিচালক শরীফুন রেবা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে শিক্ষাজীবন শেষ করে সাংবাদিকতা করেন দৈনিক আজকের কাগজসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে। মাঝে পেশায় দীর্ঘ বিরতির পর নতুনভাবে কিছু করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে শুরু করেন দেশীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড সারা লাইফস্টাইল।
মাত্র সাড়ে তিন বছরেই দেশের মানুষের জনপ্রিয় ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে সারা। ব্র্যান্ডটির সার্বিক বিষয় নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন শরীফুন রেবা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইসমাইল হোসাইন রাসেল।
জাগো নিউজ: সারা লাইফস্টাইলের বয়স সাড়ে তিন বছর, এর মধ্যে প্রায় দুই বছর ছিল করোনার প্রভাব। সাড়ে তিন বছরের জার্নিটা কেমন ছিল?
শরীফুন রেবা: করোনাকালীন জার্নিটা মোটামুটি সবার জন্য খারাপই ছিল। সব সেক্টর, ইন্টারন্যাশনাল ব্র্যান্ডও সংকটে পড়েছে। আমাদেরও নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। আমরা দুটি ঈদ ও একটি পহেলা বৈশাখ ধরতে পারিনি। ২০২০ সালে করোনার বছরে আমরা পহেলা বৈশাখ ও ঈদের জন্য প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে সবকিছু বন্ধ হয়ে গেলো। ২০২০ সালে আমাদের ঢাকার মধ্যে সাতটি স্টোর নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সে বছর আমরা একটিও নিতে পারিনি। তবে আমরা সব সংকট অনেকটাই সামলে নিয়েছি। আমরা এখন চেষ্টা করছি ঘুরে দাঁড়ানোর।
জাগো নিউজ: আপনি তো সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী এবং সাংবাদিকতা পেশাতেও কাজ করেছেন কিছুদিন। তারপর শুরু করলেন সারা লাইফস্টাইল। এই গল্পটা শুনতে চাই-
শরীফুন রেবা: আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তির পর কয়েকটি গণমাধ্যমে কাজ করেছি। পাস করার পর আজকের কাগজে ফুলটাইম সাংবাদিকতা শুরু করি। দীর্ঘ সময় কাজ করার পর বিয়ে আর দুই সন্তান জন্ম নেওয়ার পর কিছুটা বিরতি দেই। দীর্ঘ সময় সাংবাদিকতায় বিরতির পর আবার নতুন করে শুরু করা কঠিন। তারপর ভাবলাম নিজে থেকে কিছু করা দরকার। অনেকদিন থেকে পরিকল্পনা চলছিল। যেহেতু স্নোটেক্সে আমাদের ২০ থেকে ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা আছে, সেটিকে কাজে লাগিয়ে যদি কিছু একটা করা যায়। স্নোটেক্সের যেসব প্রোডাক্ট হয় তা তো বায়াররা বাইরে নিয়ে যান। তাই চিন্তা করলাম দেশের মধ্যে যদি এমন কোনো ব্র্যান্ড করতে পারি যেখানে সাধারণ মানুষ কম দামে প্রোডাক্ট কিনতে পারে। সেখান থেকেই এ রকম পরিকল্পনা করে সারার যাত্রা শুরু।
জাগো নিউজ: গত কয়েক বছরে শীতকালীন পোশাক হিসেবে সারা লাইফস্টাইল বেশ সাড়া ফেলেছে। এবারের শীতে নতুন কী ধরনের কালেকশন থাকছে?
শরীফুন রেবা: প্রতিবছরের মতো এবারও প্রোডাক্টে নতুনত্ব থাকবে। মূলত জ্যাকেট, হেভি জ্যাকেট, হুডি জ্যাকেট, নাইট জ্যাকেট, লেডিস জ্যাকেট শীতে বেশি থাকে। এছাড়াও ছেলেদের ডেনিম জ্যাকেট বা শার্ট তো থাকছেই। নতুন করে ডেনিমের কুর্তি, টপস, বাচ্চাদের কিছু পোশাক এনেছি। ডেনিমের লেডিস প্রোডাক্টগুলো কিন্তু আমরাই নতুনভাবে শুরু করেছি। আর ছেলে ও মেয়েদের জন্য ডেনিমের শাল করেছি, এটি সম্ভবত আমরাই প্রথম করেছি। শীতকালে প্যান্ট-শার্টে ডেনিমের নতুন নতুন প্রোডাক্ট আসছে।
জাগো নিউজ: সারার ব্যাগ না নিলে ডিসকাউন্ট থাকছে শুনেছি। হঠাৎ করে কেন এই উদ্যোগ?
শরীফুন রেবা: আমরা যখন বিভিন্ন দেশে ঘুরতে যাই তখন আমরা দেখেছি, অনেক প্রোডাক্ট কেনার পর আমাকে জিজ্ঞাসা করছে ব্যাগ লাগবে কি না। তার মানে আমি যদি চাই তাহলে ব্যাগটি নিতে পারি। আর ব্যাগটি না লাগলে বাড়তি টাকাটা দিতে হচ্ছে না। এই কারণে কারো কাছে একটি ব্যাগ থাকলে হয়তো আরেকটি ব্যাগ তার কাজে লাগছে না, সেক্ষেত্রে তিনি ব্যাগটি না নিয়ে ডিসকাউন্ট নিতে পারেন। এক্ষেত্রে আমরা ব্যাগ না নিলে ৪০ টাকা ডিসকাউন্ট দিচ্ছি। বাইরে থেকে দেখেই এটি চালু করা এবং আমরা দেখছি এটি বেশ ভালো সাড়া দিচ্ছে।
জাগো নিউজ: ঢাকার বাইরে রংপুরে প্রথম আউটলেট উদ্বোধন করা হয়ছে। অন্য শহরেও আউটলেট করার পরিকল্পনা আছে কি না-
শরীফুন রেবা: আমরা আসলে নতুন, এখনো শিখছি। রিটেইল ব্র্যান্ডে তো আমাদের সাড়ে তিন বছর। আমাদের স্নোটেক্সের পথ চলা, সিস্টেম সবই আলাদা। কিন্তু সারা লাইফস্টাইল নিয়ে আমরা নতুন করে শিখছি। আমরা এখনো সেই পর্যায়ে যেতে পারিনি। আমাদের পরিকল্পনা ছিল ২০২০ সালেই ঢাকায় আরও কয়েকটি আউটলেট করার। ঢাকাতে আরও কিছু স্টোর বাড়িয়ে সেখান থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে তারপর ঢাকার বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু ঢাকার মধ্যে যেহেতু আমরা সেই আউটলেটগুলো করতে পারিনি তাই রংপুরে সব সুযোগ-সুবিধা মিলে যাওয়ায় সেখানে যাত্রা শুরু করেছি। এরপর আমরা ওয়ারিতে আগামী মাসে (জানুয়ারি) শুরু করতে পারবো। ঢাকায় এরকম আরও দুই/এক জায়গায় আউটলেট করে টার্গেট পূরণের পর ঢাকার বাইরেও করবো।
জাগো নিউজ: দেশের গণ্ডি পেরিয়ে দেশের বাইরেও কি আমরা সারাকে দেখতে পাবো?
শরীফুন রেবা: সারাকে বৈশ্বিক ব্র্যান্ডে পরিণত করার পরিকল্পনা তো অবশ্যই আছে। আন্তর্জাতিকভাবে আত্মপ্রকাশ করার উদ্দেশ্য নিয়েই সারার যাত্রা শুরু করেছি। স্নোটেক্স ২৫ বছরে যে অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে সেখানে সারার তো মাত্র শুরু। সাড়ে তিন বছরে যতটা এসেছি ততটা আশাও করিনি। সারাকে বৈশ্বিক ব্র্যান্ডে পরিণত করার স্বপ্ন তো আমরা দেখিই। এখন যেমন আমরা ক্রেতাদের সন্তুষ্ট করতে পারছি, আগামী ১০ বছর পর যদি সব এমনই ঠিকঠাক থাকে তাহলে দেশের ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার চিন্তা করতে পারবো। তবে আমাদের স্বপ্ন আছে, আশা করি সারাবিশ্বে সারা ছড়িয়ে যাবে।
জাগো নিউজ: ক্রেতাদের কাছ থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
শরীফুন রেবা: ক্রেতাদের ভালো সাড়া পাচ্ছি বলেই আজ সারা সাড়ে তিন বছরে একটা ভালো অবস্থানে আসতে পেরেছে। ক্রেতাদের সন্তুষ্টিই আমাদের প্রথম টার্গেট। ক্রেতারা হ্যাপি থাকলে আমরা হ্যাপি। প্রতিনিয়ত আমাদের আউটলেটগুলোতে সার্ভে করা হচ্ছে। ক্রেতাদের চাহিদার ওপর ভিত্তি করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। সেই অনুযায়ী আমাদের ডিজাইনাররা কাজ করছেন, ম্যানেজমেন্ট কাজ করছে। ক্রেতাদের চাহিদা মাথায় রেখেই প্রতিটি প্রোডাক্ট ডিজাইন করা। আর পোশাকের দাম যাতে ক্রেতার সাধ্যের মধ্যে থাকে সেদিকে আমরা লক্ষ্য রাখছি। সব শ্রেণির মানুষের কথা চিন্তা করেই সারার প্রোডাক্টের দাম নির্ধারণ করেছি। কম দামে ভালো জিনিস দিতেই আমরা কাজ করছি। মানসম্মত ভালো প্রোডাক্ট কম দামে দেবো, এই বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েই আমরা সারার সবকিছু নির্ধারণ করি। যাতে ক্রেতারা সন্তুষ্ট থাকেন।
স্নোটেক্স গ্রুপের লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড সারা কাজ শুরু করেছে ২০১৮ সালের মে মাস থেকে। ঢাকার মিরপুর-৬ এ অবস্থিত সারা প্রথম আউটলেট নিয়ে কাজ শুরুর পর বসুন্ধরা সিটির লেভেল ১, ব্লক-এ’র ৪০ এবং ৫৪ নম্বর শপটি ছিল সারার দ্বিতীয় আউটলেট। তৃতীয় আউটলেট হরো মোহাম্মদপুরে বাড়ি-১৯ বি/৪সি ও বি/৪ ডি, ব্লক-এফ, রিং রোড- এই ঠিকানায়। উত্তরায় সারার পোশাক পাওয়া যাবে হাউজ নম্বর-২২, সোনারগাঁ জনপদ, সেক্টর-৯, উত্তরা, ঢাকা- এই ঠিকানায়। বারিধারা ‘জে’ ব্লকে আছে সারার আরেকটি আউটলেট। আর সম্প্রতি বনশ্রীতে চালু হয়েছে দৃষ্টিনন্দন আরও একটি আউটলেট। এছাড়াও ঢাকার বাইরে সারার প্রথম আউটলেটের কার্যক্রম শুরু হয়েছে রংপুরে জাহাজ কোম্পানির মোড়েই।
আইএইচআর/ইএ/এএ/এমএস