পাতে ফেরার অপেক্ষায় জারুয়া-আঙরাসহ আরও ৮ দেশি মাছ
বাঙালির পাতে ফেরার অপেক্ষায় পুষ্টিগুণ সম্পন্ন আরও অন্তত আট প্রজাতির দেশি মাছ। এরই মধ্যে বিলুপ্তপ্রায় ৬৪ প্রজাতির দেশি মাছের মধ্যে ৩১ প্রজাতির মাছের সফল প্রজনন সম্পন্ন হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে আরও আট প্রজাতির দেশি মাছ পাতে ফেরানো সম্ভব হলে এ সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৩৯-এ। তবে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) লক্ষ্য আরও বেশি মাছ ফেরানো।
সফল প্রজনন নিয়ে গবেষণা চলা এ আট প্রজাতির মাছ হলো- কাজলি, কুর্শা, গাঙ টেংরা, বাইলা, জারুয়া, বোল, আঙরা ও ঘারুয়া। এর মধ্যে জারুয়া, বোল, আঙরা ও কুর্শা মূলত তিস্তা নদীর মাছ।
বিএফআরআই মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি এ আট প্রজাতিসহ আরও কয়েক প্রজাতির মাছ যেন আগামী বছরের মধ্যে পাতে ফেরাতে পারি। তবে সবটা আমাদের হাতে থাকে না। কারণ এটা জোর করে হয় না। আমাদের চারটি কেন্দ্র চেষ্টা করছে। ফলে কতো প্রজাতির মাছ পাতে ফেরাতে পারবো সেটা নিশ্চিত করে বলা কঠিন।
পাবদা, গুলশা টেংরা, গুজি আইড়, চিতল, ফলি, মহাশোল, বৈরালি, বালাচাটা, গুতুম, কুচিয়া, ভাগনা, খলিশা, গজার, রানি, বাতাসি, পিয়ালিসহ ৩১ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছ চাষের পদ্ধতি উদ্ভাবন করে মৎস্যচাষিদের হাতে তুলে দিয়েছেন বিএফআরআই গবেষকরা। উদ্ভাবিত এসব মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ ও আয়োডিনের মতো প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ। এসব উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করে। পাশাপাশি রক্তশূন্যতা, গলগণ্ড, অন্ধত্ব প্রভৃতি রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলাশয় সংকোচন, অতি আহরণসহ নানা কারণে মাছের প্রজনন ও বিচরণক্ষেত্র বিনষ্ট হওয়ায় প্রাকৃতিক জলাশয়ে ছোট মাছের প্রাপ্যতা ক্রমে কমছে।
বিএফআরআই সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে পুকুরে দেশি ছোট মাছের মোট উৎপাদন ছিল ৬৭ হাজার ৩৪০ মেট্রিক টন, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আড়াই লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়। অর্থাৎ গত ১০ বছরে দেশীয় ছোট মাছের উৎপাদন বেড়েছে চারগুণ।
ড. ইয়াহিয়া বলেন, যেসব মাছ হারিয়ে গেছে সেসব মাছ ফিরিয়ে আনতে কাজ করছি আমরা। এছাড়া অপ্রচলিত মাছ কুচিয়া, কাঁকড়া নিয়েও কাজ করছি। আমাদের দেশে চাহিদা কম থাকলেও বিদেশে চাহিদা আছে।
‘দেশে মিঠাপানির ২৬০ প্রজাতির মাছের মধ্যে ছোট মাছ ১৪৩ প্রজাতির। এরমধ্যে ৬৪ প্রজাতির মাছ ছিল বিলুপ্তপ্রায়। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যম বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট বিলুপ্তপ্রায় এসব মাছ ফিরিয়ে আনছে। সব মাছই আমরা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। আরও বেশ কিছু প্রকল্প আমাদের হাতে আছে। আমরা কাজ করছি, ৬৪টি না হলেও চেষ্টা করছি যত পারা যায় ফিরিয়ে আনতে।’
এই গবেষক আরও বলেন, যেগুলোর বাণিজ্যিক গুরুত্ব আছে সেগুলো আমরা ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছি। শুধু ময়মনসিংহ থেকে কাজ করলে সব ফিরিয়ে আনতে পারবো না। আগে শুধু বিএফআরআই ময়মনসিংহের স্বাদুপানি গবেষণা কেন্দ্র থেকে বিলুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে গবেষণা পরিচালনা করা হতো। বর্তমানে বগুড়ার সান্তাহার, নীলফামারীর সৈয়দপুর ও যশোর উপকেন্দ্রেও বিলুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষণে গবেষণা হচ্ছে। তিস্তার মাছ নিয়ে কাজ করছে সৈয়দপুর উপকেন্দ্র।
‘আমাদের মূল উদ্দেশ্য দেশি মাছ সংরক্ষণ করা। দেশি মাছ বাঙালি সংস্কৃতির অংশ। এসব মাছ চাষের জন্য আমরা প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছি। সে অনুযায়ী উৎপাদন হচ্ছে। গত ১২ বছরে দেশি চাষের মাছের উৎপাদন বেড়েছে চারগুণ। আমাদের কয়েকটা প্রযুক্তি দিয়ে কাজ করতে হয়। প্রজনন প্রযুক্তি প্রথমে বের করতে হবে। এরপর কালচারের প্রযুক্তি। এজন্য দু-তিনটি কাজ আমাদের একসঙ্গে করতে হয়। নার্সারি প্রযুক্তি নিয়েও কাজ করতে হয়। কারণ ছোট মাছ বাঁচানো, রক্ষা করা কঠিন।’
ড. ইয়াহিয়া বলেন, সম্প্রতি আমরা সারাদেশে এই মাছ সুষমভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করছি। একটা লাইভ জিন ব্যাংক করেছি। এখানে বাংলাদেশে যত ছোট মাছ পাওয়া যায় সব নিয়ে আসবো। এরই মধ্যে ৯৮টি নিয়ে এসেছি। আমাদের অন্য তিনটি ব্যাংককে বলা হয়েছে—যে যেখানে যা পাও নিয়ে এসো। তিস্তা নদীতে বেশকিছু মাছ আছে। এটা অন্য এলাকায় পাওয়া যায় না। যেগুলো আমাদের এখানে এখন আসছে। হ্যাচারিতে পোনা উৎপাদন করে এসব মাছ টিকিয়ে রাখবো। এভাবে সারাদেশে ছড়িয়ে যাবে।
ময়মনসিংহের জিন ব্যাংকের একটি ব্যাকআপ দরকার বলে মনে করেন বিএফআরআই মহাপরিচালক। তিনি বলেন, কোনো কারণে একবার যদি এসব মাছ মারা যায় তাহলে আর পাওয়া মুশকিল। সৈয়দপুরেও হচ্ছে একটি লাইভ জিন ব্যাংক, কাজ চলছে। আজ যে মাছ আছে কাল সেটা নাও থাকতে পারে। তখন এই জিন ব্যাংক থেকে আমরা আবার প্রসার করবো।
তিনি বলেন, আরও ২৫টির মতো মাছ সংগ্রহ করবো। এগুলো আগের ৩১টির সঙ্গে যোগ হবে। আমরা চাই খাল-বিল, হাওর বাঁওড়ের সব মাছ পাতে ফিরুক।
এ বিষয়ে সৈয়দপুর উপকেন্দ্র প্রধান ড. খোন্দকার রশীদুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, সৈয়দপুর উপকেন্দ্রে আমরা মূলত তিস্তা অববাহিকার যে দেশি ছোট মাছ আছে সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। আমাদের এখানেও একটি লাইভ জিন ব্যাংক করেছি। এরই মধ্যে সক্ষম হয়েছি ৪০টি প্রজাতি সংগ্রহ করতে, যেগুলো বিলুপ্তপ্রায়। তবে কমনগুলো এখানকার জিন ব্যাংকে রাখিনি, এখানে যেগুলো আছে সেগুলো ময়মনসিংহে নেই বা কম আছে।
‘যেমন- বৈরালি, বৈরালির পাঁচটি প্রজাতি, হিরালু, বোল, জারুয়া, লইট্যা টেংরা, বটিয়াসহ বেশকিছু মাছ। মন্ত্রণালয় ও ডিজি মহোদয় চান এটা ময়মনসিংহের একটি রেপ্লিকা হবে। কোনো কারণে এক জায়গায় সমস্যা হলে আরেক জায়গায় যেন পাওয়া যায়।’
বিলুপ্তপ্রায় মাছের প্রজাতি ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে ড. খোন্দকার রশীদুল হাসান বলেন, নদী থেকে মাছ আনার পর ডেমোনেস্ট্রেশন করতে হয়। পুকুরের নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে কীভাবে এরা খাপ খাইয়ে নিচ্ছে সেটা দেখতে হয়। যেসব মাছ স্রোতের মধ্যে ডিম ছাড়ে সেগুলোকে পুকুরে অভ্যস্ত করতে সময় লাগে। অনেক সময় দুই বা চার বছর লেগে যায় স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরিয়ে আনতে। অনেক সময় নদী পর্যবেক্ষণ করে বিচরণক্ষেত্র দেখে পরে কৃত্রিম স্রোত তৈরি করে কাজ করা হয়।
এএ/কেএসআর/এইচএ/জেআইএম
টাইমলাইন
- ০১:২৪ পিএম, ২২ ডিসেম্বর ২০২১ ‘বিনার সূর্যমুখী জাত অবমুক্ত হলে তেল ফসলে বিপ্লব ঘটবে’
- ০৮:৫৫ এএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০২১ ‘সড়ক’ যেন গলার কাঁটা
- ০৮:৪৯ এএম, ০৯ ডিসেম্বর ২০২১ বোরোর চরের কাঁচামরিচ যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপে
- ০৯:০৫ এএম, ০৮ ডিসেম্বর ২০২১ বিলুপ্তির পথে লাফা বেগুন, বেশি ফলনের বেগুনে ঝুঁকছেন কৃষক
- ০৮:৩০ এএম, ০৭ ডিসেম্বর ২০২১ বারোমাসি টমেটোয় ১০ গুণ লাভ
- ০৩:৫৬ পিএম, ০৬ ডিসেম্বর ২০২১ সম্ভাবনার কুমির চাষে ‘বাধা’ আইনি জটিলতা!
- ১২:১৫ পিএম, ০৬ ডিসেম্বর ২০২১ সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে মালচিং চাষ, কম খরচে ভালো ফলন
- ০৮:৩৩ এএম, ০৬ ডিসেম্বর ২০২১ লেবু-মাল্টার জোয়ারে হারাতে বসেছে ফুলবাড়িয়ার হলুদ
- ১১:১২ এএম, ০৩ ডিসেম্বর ২০২১ শ্বশুরের দেওয়া ৪০ হাজার থেকে ২০ লাখ টাকার মালিক রাণী
- ০৮:০৪ এএম, ০৩ ডিসেম্বর ২০২১ নামাপাড়ার ছিপ যাচ্ছে সারাদেশে
- ১০:১৬ এএম, ০১ ডিসেম্বর ২০২১ এক গাছে ৪ সাইজের বরই, মিলবে আমের মৌসুমেও
- ০৮:২০ এএম, ৩০ নভেম্বর ২০২১ ‘তেল আমদানির ১৭ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করবে বিনাসরিষা’
- ০৪:২১ পিএম, ২৯ নভেম্বর ২০২১ মুক্তা চাষে সম্ভাবনা, বিক্রি নিয়েই দুর্ভাবনা
- ০২:০৭ পিএম, ২৯ নভেম্বর ২০২১ আধুনিক নগর গড়তে দরকার জনগণের ইতিবাচক সাড়া ও দপ্তরের সমন্বয়
- ১০:৫১ এএম, ২৮ নভেম্বর ২০২১ মেঘালয় ঘেঁষা দুই স্থলবন্দর, আমদানি-রপ্তানির নতুন দুয়ার
- ০৭:৫৩ পিএম, ২৬ নভেম্বর ২০২১ তিনবার এমপি হলেও এলাকাবাসীর কাছে প্রায় অচেনা
- ০৯:২৪ এএম, ২৫ নভেম্বর ২০২১ ফুলবাড়িয়ার লেবু যাচ্ছে ইউরোপে
- ০২:০৯ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০২১ কৃষকের ধানের মণ ৪৩ কেজিতে, ব্যবসায়ীর সাড়ে ৪০
- ০৬:৩৮ পিএম, ২৩ নভেম্বর ২০২১ ২২ পদের ভর্তার পিঠায় মাসে আয় ২ লাখ টাকা
- ০৮:২২ এএম, ২৩ নভেম্বর ২০২১ চিকিৎসকের পরামর্শে মাল্টাচাষ, লাখ টাকা খরচে আসছে কোটি টাকা
- ০২:৫৩ পিএম, ১৯ নভেম্বর ২০২১ ‘কৃষ্ণা কেবিন’র মিষ্টিতে ‘কৃতকার্য’ তিন প্রজন্ম
- ১০:৫৯ এএম, ১৯ নভেম্বর ২০২১ দেশি ছোট মাছ ফিরিয়ে আনতে বিপ্লব ঘটাবে জিন ব্যাংক
- ১২:১০ পিএম, ১৮ নভেম্বর ২০২১ বছরে নষ্ট ২০ হাজার কোটি টাকার ফসল, আসছে পরমাণু প্রযুক্তি
- ০৮:৫৮ এএম, ১৮ নভেম্বর ২০২১ তেলাপিয়ার নতুন প্রজাতি, প্রতিটির ওজন আড়াই কেজি
- ০৩:২৫ পিএম, ১৭ নভেম্বর ২০২১ পাতে ফেরার অপেক্ষায় জারুয়া-আঙরাসহ আরও ৮ দেশি মাছ
- ১১:৫০ এএম, ১৭ নভেম্বর ২০২১ আ’লীগের দুর্গ গফরগাঁও, একগুচ্ছ দাবি ভোটারদের
- ০৯:৫৯ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০২১ ‘গরু শিথানে নিয়া হুতি, চোরে নিলে আগে আমারে নেওয়া লাগবো’
- ০৮:৫৭ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০২১ এটাই বাংলাদেশের ‘প্রথম’ সৌদি খেজুর গাছ
- ০৪:৪৬ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০২১ ‘এখানে আ’লীগ-বিএনপি-জাপা এক পরিবার’
- ০২:১৬ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০২১ সৌদি খেজুর চাষে ‘পাগল মোতালেব’র বছরে আয় ৫০ লাখ টাকা
- ১২:১২ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০২১ চুলে খুলেছে হাজারো নারীর ভাগ্য