জীবিকার সন্ধানে ঢাকামুখী মানুষ, বাড়ছে জনঘনত্ব
জীবিকার তাগিদে প্রতিদিনই ঢাকামুখী হচ্ছে মানুষ। প্রতিনিয়ত শিল্পকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ হওয়ায় ঢাকার প্রতি আস্থাশীল হচ্ছে অধিকাংশ মানুষ। এছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সার্বিক সুবিধা বিবেচনায়ও নগরীতে প্রতিনিয়ত ভিড় বাড়ছে। এদিকে জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জনদুর্ভোগ। ঢাকার বাইরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলে এ সংকট দূর হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) কীভাবে একটি শহরকে বসবাসযোগ্য করা যায় সেই নগর জীবনের কথা বলা আছে। শহরের পরিকল্পনার পাশাপাশি গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরের বিষয়টি বিকেন্দ্রকরণ করতে হবে। চায়নার মতো দেশগুলো প্রচুর মাইগ্রেট হওয়ায় বিকেন্দ্রীকরণ করে দেওয়া হয়েছে। নাগরিক সুযোগ, কাজের সুযোগ যদি স্থানীয় পর্যায়ে নিশ্চিত করা যায় তাহলে এটি অনেকটা সহজ হবে। স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রেও মানুষ শহরমুখী হয়। সার্বিকভাবে সরকার ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে নানা উদ্যোগ নিলেও তার সুফল পাচ্ছে না জনগণ। উল্টো নগরে যানজট, বায়ুদূষণ, জলাবদ্ধতা, বর্জ্য অব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন সমস্যা বেড়েই চলছে। নগরজীবনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হলে পরিকল্পনা বা নীতি যেগুলো আছে সেগুলো বাস্তবমুখী হতে হবে, শুধু কাগজে-কলমে লেখা থাকলে হবে না এগুলো প্রয়োগও করতে হবে। তাই শহরের সুবিধাগুলো বিকেন্দ্রীকরণ করা জরুরি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) হিসাব অনুযায়ী, ঢাকায় বর্তমানে ২ কোটিরও বেশি মানুষ বসবাস করছে। প্রতি বছর ঢাকা শহরে ছয় লাখ ১২ হাজার মানুষ যুক্ত হয়, যা দিনে এক হাজার ৭০০। পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল শহরগুলোর তালিকায় ঢাকা ১১তম। কিন্তু আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যার হিসাবে ঢাকা পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করে ৪৩ হাজার ৫০০ মানুষ। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে দেশে প্রথম আদমশুমারি অনুষ্ঠিত হয়। ওই শুমারিতে ঢাকা শহরের জনসংখ্যা ছিল মাত্র ১৬ লাখ।
এ বিষয়ে স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব জাগো নিউজকে বলেন, ‘অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মানুষের মুভমেন্ট নিয়ন্ত্রিত থাকবে এটা সংবিধানের বিপরীত। অর্থনৈতিক চাপে পড়েই মানুষ শহরমুখী হয়। কর্মক্ষমতা অনুযায়ী শহরের কর্মযোগ এবং কর্মের বিষয়ে বিনিয়োগ বেশি হওয়ায় কর্মক্ষেত্র শহরে অনেক প্রসারিত। নতুন করে যুক্ত হয়েছে জলবায়ু উষ্ণতা। এ কারণে সারা পৃথিবীতেই মানুষ নগরমুখী হচ্ছে। অর্থনীতির যে বেইজ ছিল কৃষি, সেখান থেকে ধীরে ধীরে আমরা শিল্পেও শিফট করছি। ফলে এক ধরনের নগরমুখিতা তৈরি হচ্ছে। ঢাকা শহর প্রায় ৩৫ শতাংশ জিডিপি কন্ট্রিবিউট করে। বাংলাদেশের ১০ শতাংশ মানুষ ১ শতাংশ জায়গার মধ্যে থাকে। এ বাস্তবতা একদিনে তৈরি হয়নি। নগরকেন্দ্রিকতায় আপনি রাষ্ট্রগঠন করেছেন। নগরে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু তৈরি করেছেন। তাই নগরমুখিতাকে নেতিবাচকভাবে দেখার সুযোগ নেই।’
যানজটের ভোগান্তি যেন নিত্তনৈমিত্তিক
তিনি আরও বলেন, ‘জলবায়ুর বৈশ্বিক উষ্ণতায় নদীর পাড়ের মানুষগুলো সিরাজগঞ্জের লোক ধীরে ধীরে শহরমুখী হবে, তখন আপনি তো তাকে ঠেকাতে পারবেন না। এটাও আমরা জানি আর ২০ বছর পর আমাদের যে ভূমি হ্রাস হবে সেই মানুষগুলো অবশ্যই স্থানচ্যুতি ঘটবে। ফলে তাদেরও ইন্টারনাল মাইগ্রেশন হতেই হবে। সবকিছু মিলে নগরমুখিতাকে নেতিবাচকভাবে দেখার সুযোগই নেই। বরং আমাদের প্রস্তুতি রাখতে হবে, নগরের সেবাগুলো গ্রামে নেওয়া। সেজন্য আমার গ্রাম, আমার শহর প্রকল্প সরকার গ্রহণ করেছে। আমাদের অবশ্যই এই অতিরিক্ত মানুষকে ধারণ করার এক ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে। দ্বিতীয়ত নগরের সঙ্গে গ্রামের সংযোগ সহজতর করতে হবে, যাতে গ্রামে থেকেই মানুষ নগরের কাজ দ্রততম সময়ে শেষ করে যেতে পারে। তৃতীয়ত অবশ্যই মূল নগরের পাশে মানুষ যেন আরবান এরিয়ায় বসবাস করতে পারে, যাতে নগরের ওপর চাপ কমে যাবে। এ কাজটি করা গেলে আমরা একটি ভারসাম্যপূর্ণ অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারব।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতাই হচ্ছে যেখানে ভালো কিছু থাকবে, আকর্ষণের জায়গা যেখানে থাকবে সেখানে সে যাবে। স্থানান্তরের বিষয়টি অ্যানালাইসিস করলে কতগুলো তাত্ত্বিক কারণ পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে আমাদের র্যুরাল টু আরবান মাইগ্রেশন কমন।
অন্যান্য জায়গায় দেখা যায়, একটা সিটি থেকে আরেকটা সিটিতে মাইগ্রেট করছে। কিন্তু আমাদের এখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মূল প্রবণতাটাই হচ্ছে র্যুরাল টু আরবান মাইগ্রেশন। তার মানে গ্রাম থেকে শহরমুখী হয়। কারণ এখানে সুযোগ-সুবিধা বেশি। এখানে কর্মক্ষেত্রে যারা মাইগ্রেট করে আসে, তার মূল কারণ হলো এখানে চাকরি পাওয়ার সুযোগ বেশি মনে করে মানুষ। দ্বিতীয়ত কাজের বাইরের কিছু সামাজিক প্রভাবক তথা স্থানীয় ফ্রাক্টরগুলোর প্রভাব থাকে। দারিদ্র্যপীড়িত, নদীভাঙন ও খরার মতো কারণেও সেখানেকার মানুষ মুভ করে রাজধানীতে। কাজ ছাড়া শিক্ষার জন্যও মানুষ ঢাকায় আসে। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবাসহ অন্যান্য নাগরিক সেবার জন্য মানুষ নগরমুখী হয়। কিন্তু উন্নয়ন যদি সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, ডিসেন্ট্রালাইজড করা যায় তাহলে অনেকটা সমাধান মিলতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের গার্মেন্টগুলোতে নারীরা অনেক বেশি সম্পৃক্ত। গার্মেন্টগুলো কোথায় অবস্থান করছে। বেশিরভাগ গার্মেন্টস শহরে, নগর বা ঢাকার মধ্যেই রয়েছে। এই গার্মেন্টস বা শিল্প কারখানাগুলোকে শহরের বাইরে বিকেন্দ্রীকরণ করতে পারলে হয়তো সেদিকেই লোকজন থেকে যেতো, শহরে আসত না। সিটি প্লিনিং যখন করা হয় যারা নগর পরিকল্পনায় জড়িত তাদের কতগুলো আরবান প্ল্যানিংয়ের ডিসাইড করতে হয়। কোনটা বিজনেস, কোনটা রেসিডেন্সিয়াল, কোনটা সার্ভিস ওরিয়েন্টেড হবে। বিভাগীয় পর্যায়ে পরিপূর্ণ পরিকল্পনা করে সেখানে স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ কোয়ালিটি সার্ভিসগুলো নিশ্চিত করে নাগরিক আস্থা তৈরি করতে পারবেন। তাই বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়াকে এনকারেজ করতে হবে।’
শত বছরের পুরোনো রাজধানী ঢাকাকে বসবাস উপযোগী, দৃষ্টিনন্দন ও নাগরিক সুবিধার আধারে পরিণত করতে ঢাকা স্ট্রাকচার প্ল্যান (১৯৯৫-২০১৫) বা ২০ বছর মেয়াদি বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু নানা অসঙ্গতি থাকায় ড্যাপ পরে সেগুলো সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়। এ কারণে বাস্তব কোনো চেহারা পায়নি পুরোনো সেই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পরিকল্পনা। বর্তমানে সংশোধিত ড্যাপ (২০১৫-৩৫) প্রণয়নের কাজ শেষ পর্যায়ে। ড্যাপে জনসংখ্যা ও চাহিদার বিশ্লেষণে বিস্তর তথ্য রয়েছে। সংশোধিত ড্যাপ প্রণয়নের কাজ চলছে ২ কোটি ৬০ লাখ মানুষের কথা মাথায় রেখে।
যানবাহনে তিল ধারনের ঠাঁই নেই। তবু ওঠার অপেক্ষায়
রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ ও ড্যাপ প্রকল্পের পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘যেকোনো সময় যখন পরিকল্পনা তৈরি করা হয় তার একটা নির্দিষ্ট জনসংখ্যা অনুমিত করেই করা হয়। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২ কোটি ৬০ লাখ মানুষ ঢাকা শহরে বসবাস করবে। এখন যদি এ শহরের মাত্রা ২ কোটি ৬০ লাখের জায়গায় ৩ কোটি হয়, তাহলে অবশ্যই নাগরিক সুবিধা, রাস্তা, আবাসন সবকিছুর ওপরই একটা চাপ তৈরি হবে। সেজন্যই নগর পরিকল্পনার দৃষ্টিকোণ থেকে শুধু একটি ক্যাপিটাল সিটি নিয়ে পরিকল্পনা করলে হবে না, পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে বাংলাদেশের যে আরবান সেন্টার পৌরসভা, ডিভিশনাল টাউন, ডিস্ট্রিক্ট টাউন আছে; সবগুলো নিয়ে।নিজ নিজ এলাকায় তার লোকাল কিছু ডিমান্ড আছে, সেগুলো অ্যাকোমোডেট করতে পারলে ঢাকামুখী মানুষের প্রবণতা হয়তো হ্রাস পেতে থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকামুখী প্রবণতা সত্যিকার অর্থে হ্রাস করতে না পারলে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পরিকল্পনা দিয়েও এটা সাকসেসফুল হওয়া যাবে না। সেজন্য আমাদের ঢাকার যে পরিকল্পনার ক্ষেত্রে ড্যাপে একটা বিষয় কিন্তু গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সেটা হলো জনঘনত্ব জোনিং। ঢাকার প্রতি এলাকায় কতো সংখ্যক জনগণ বসবাস করতে পারবে, তার একটি মাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। এর বাইরে যদি আসে তাহলে ওই এলাকার ক্যাপাসিটি লস করবে এবং সেই এলাকা বসবাসযোগ্যতা হারাবে। এর আগে কোনো পরিকল্পনায়ই জনঘনত্ব জোনিং যুক্ত করা ছিল না। এবার এ পরিকল্পনায় আমরা এটি যুক্ত করেছি। আশা করা যায় রাজউকসহ অন্যান্য সংস্থা যেমন- বিডা, বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, রিয়েল স্টেট ডেভেলপার রয়েছে, তারা এগিয়ে আসবে। তাহলেই এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকায় ধারণক্ষমতার চেয়েও বেশি মানুষ বাস করে। ফলে স্বাস্থ্যের সাথে যুক্ত বিষয়গুলো যথাযথ ভাবে পাচ্ছেন না নাগরিকরা। এতে স্বাস্থ্যগতভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। মানুষ গ্রাম বা শহরে যেখানে হোক যখন অসুস্থ থাকে চূড়ান্তভাবে সেটি জাতীয় শ্রমঘণ্টা থেকে কমে যায়। ফলে দেশে উৎপাদন ব্যাহত হয়। আবার এ অসুস্থ মানুষগুলোকে সুস্থ করার জন্য স্বাস্থ্যখাতে খরচ বেড়ে যায়। ফলে অপরিকল্পিত নগর চূড়ান্ত অর্থে স্বাস্থ্য জাতীয় অর্থনীতি, জাতীয় প্রবৃদ্ধি ও অগ্রগতিকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে।
হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমরা এককেন্দ্রিক একটি দেশ তৈরি করেছি। এবং সেটি আমরা ধারাবাহিকভাবে চলমানও রেখেছি। এক কেন্দ্র বলতে বাংলাদেশের সব ধরনের প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক অথবা রাজনৈতিক বা অন্য যেকোনো ধরনের বিষয় হোক না কেন তার একমাত্র কেন্দ্র হচ্ছে ঢাকা। ফলে ঢাকাকে কেন্দ্র করে জীবন-জীবিকা, আয়-রোজগার, সংস্থান ইত্যাদি বিষয়ে অনেক সুযোগ বেড়ে গেছে। যে কারণে মানুষ ঢাকায় আসে, ঢাকামুখী হয়। যদি আমরা দেশটিকে বহুকেন্দ্রিক করতে পারতাম তাহলে কিন্তু মানুষ বহু কেন্দ্রমুখী হতো না। এজন্য আমাদের যেটি দরকার প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক এবং শিল্পভিত্তিক অনেকগুলো কেন্দ্র গড়ে তোলা সেই কাজটি আমরা করিনি। বাংলাদেশের জন্য নগর পরিকল্পনার অন্যতম একটি ধাপ এটি হওয়া উচিত যে আমরা এককেন্দ্রিক বাংলাদেশের বদলে বহুকেন্দ্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলব। যদি বহুকেন্দ্রিক দেশ গড়ে তুলতে পারি তাহলে অনেকগুলো নগর হবে, সেই নগরের পরিকল্পনা এবং সেই নগরের মানুষের স্বাস্থ্যের পরিকল্পনা সহজেই এবং প্রয়োগযোগ্যভাবে করতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহর যে সংখ্যক মানুষের জন্য তৈরি হয়েছিল তার চেয়ে কয়েকগুণ মানুষ এ শহরে বাস করে। ফলে স্বাস্থ্যের সাথে যুক্ত যে বিষয়গুলো- খাবার, থাকার জায়গা, পরিধেয় বস্ত্র, শরীরে কতোটা রোদ বা বাতাস লাগবে, আমি হাঁটার জন্য কতোটা মাটি পাবো, আমার চারদিকে কী পরিমাণ গাছ থাকলে আমার নিশ্বাসের সাথে বের হওয়া কার্বনডাই অক্সাইড শুষে নিতে পারবে, আমার নগরে কী পরিমাণ পানির আধার থাকলে সেই পানি বাতাসটা একদিকে শীতল রাখবে অন্যদিকে পরিষ্কারও করবে; একই সাথে আমি যে নগরীতে বাস করব সেখানকার বায়ুমান, শব্দমান, আলোকমান কেমন হবে সবগুলোই নির্ধারণ করতে পারতাম। কিন্তু কয়েকগুণ বেশি মানুষ বসবাস করায় সবকিছুই কিন্তু বিপর্যস্ত বা তছনছ হয়ে গেছে। যে কারণে বসবাস অযোগ্য নগরের তালিকায় ঢাকা অনেক বছর ধরে প্রথমদিকে রয়েছে। অতএব নগরপরিকল্পনা দিবসের প্রধান বিষয় হওয়া উচিত যে আমরা নগরকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলব। সেজন্য ঢাকাকেন্দ্রিক নগর ব্যবস্থা থেকে সরে গিয়ে বহুকেন্দ্রিক, যদি ৬৪টি জেলায় ৬৪টি নগরী মানুষের জীবন-জীবিকার অধিকাংশ সংস্থান হয়ে যায়, তাহলে কিন্তু মানুষ ঢাকামুখী হবে না এবং এতে ঢাকাবাসীও যেমন বাঁচবে সারাদেশের মানুষও বাঁচবে। এতে দেশের জনস্বাস্থ্য রক্ষা পাবে।’
আইএইচআর/এসএইচএস/এমএস