ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

স্বপ্নকে নিয়ে আর স্বপ্ন দেখবে না কেউ

প্রকাশিত: ০৫:৪৩ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫

কুড়িগ্রাম শহরের ব্যবসায়ী সুলতান আহম্মেদের একমাত্র ছেলে আলিফ আহম্মেদ স্বপ্ন (১৪) নিখোঁজ হওয়ার চতুর্থ দিন ল্যাট্রিনের সেফটি ট্যাংক থেকে তার গলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কুড়িগ্রাম শহরের ভেলাকোপা এলাকার হানাগর পাড়ার সিনিয়র নার্স মোর্শেদা বেগমের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার ঘটনায় মোর্সেদা বেগম ও তার ছেলে রিফাতকে পুলিশ আটক করে। ঘটনা জানাজানি হলে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করে। ঘিরে রাখে রহস্য ঘেরা ওই বাড়িটি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। এদিকে মরদেহ উদ্ধার করার খবরে স্বপ্নের পরিবারে শোকের মাতম শুরু হয়। গোটা সরদার পাড়ায় নেমে আসে শোকের ছায়া।

একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন বাবা সুলতান আহম্মেদ ও মা ফরিদা ইয়াসমিন। কোনো শান্ত্বনা বাণী শুনছেন না তারা। শোকাহত স্বজন ও প্রতিবেশীরা শান্ত্বনা জানানোর ভাষাও ভুলে গেছেন। সবার চোখে গড়িয়ে পড়ছে পানি। সুদর্শন ও মেধাবী স্বপ্ন আর নেই এ কথা ভাবতেও পারছেন না তারা।

কুড়িগ্রাম সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুর্শেদুল করিম মোহাম্মদ এতেশাম জাগো নিউজকে জানান, কুড়িগ্রাম শহরের সরদার পাড়ার খাদ্য ব্যবসায়ী সুলতান আহম্মেদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। গত সোমবার সকাল ১০টার দিকে আলিফ আহম্মেদ স্বপ্ন তার মা ফরিদা ইয়াসমিনকে টেবিলে নাস্তা দিতে বলে তিনতলা ফ্ল্যাট থেকে নিচে নামেন। বাসায় বলে যান বন্ধু রিফাতের সঙ্গে কথা বলে আসছি। এরপর আর ফেরা হয়নি।


তার ব্যবহৃত মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। সারাদিন খোঁজাখুুঁজির পর পরিবারের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার কুড়িগ্রাম সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। নিখোঁজ ঘটনার পর থেকে রিফাতের মা মোর্শেদা বেগম রিফাতের সঙ্গে কাউকে কথা বলতে দিচ্ছিলেন না। পুলিশের সন্দেহ হলে মা ও ছেলেকে বুধবার রাতে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার সকালে রিফাত আত্মগোপন করে। আর মোর্শেদা বেগম ফোন বন্ধ রাখেন। বিকেলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মোর্শেদা বেগম ও তার ছেলে রিফাতকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে স্বপ্নকে খুনের ঘটনা স্বীকার করে রিফাত।

তাদের দেয়া তথ্যের সূত্র ধরে রিফাতদের বাসার ল্যাট্রিনের সেফটিক ট্যাংক ভেঙে স্বপ্নের গলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ, সহকারী পুলিশ সুপার মাসুদ আলম ও ইউএনও আমিনুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে মরদেহ উদ্ধার এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

প্রতিবেশী রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, কুড়িগ্রাম সদর হাপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মোর্শেদা বেগম এক বছর পূর্বে ভেলাকোপার হানাগর পাড়া বাড়ি করে বসবাস করে আসছেন। স্বামী আতাউর রহমানকে তিন মাস আগে ডিভোর্স করেন। একমাত্র ছেলে রিফাতকে নিয়ে থাকতেন। তবে ওই বাসায় কারো যাতায়াত ছিল নিষিদ্ধ। এ বাড়িটি ছিল রহস্যময়। স্থানীয় আবেদ আলী নামে একজন বাড়িটি পাহারা দিতেন। আর রাবেয়া বেগম নামে এক গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন। এর বাইরে ওই বাসায় কারো প্রবেশাধিকার ছিল না।

মোর্শেদা বেগমের গ্রামের বাড়ি নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা এলাকায়।  তার প্রথম স্বামী রেজাউল মারা গেলে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সর্বশেষ বিয়ে করেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মচারী আতাউর রহমানকে। বিশাল দেহের অধিকারী মোশের্দা প্রায়ই স্বামী আতাউরকে মারধর করতেন। এরই এক পর্যায়ে গ্রামে সালিশের মাধ্যমে ডিভোর্স হয় তাদের। তাদের চলাফেরা, আচার আচরণ সবই ছিল রহস্যময়।


সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল-এ) মাসুদ আলম জাগো নিউজকে জানান, অভিযুক্ত মোশের্দা ও রিফাত ধুরন্ধর প্রকৃতির। রিফাত তার নাগেশ্বরী এলাকার এক বন্ধু আকাশের সহায়তায় এ খুনের ঘটনা ঘটায়।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আকাশ নাগেশ্বরী থেকে কুড়িগ্রামে আসেন একটি জ্যাকেট কিনতে। কিন্তু টাকা নেই। তখন রিফাতসহ বুদ্ধি করে স্বপ্নকে শিকার বানাতো। রিফাত প্রথমে মোবাইলে স্বপ্নকে ডেকে আনে। ফাঁকা বাড়িতে দুই বন্ধু স্বপ্নকে হাত-পা বেঁধে ফেলে। তাদের মূল টাগের্ট ছিল মুক্তিপণ আদায় করা। কিন্তু ৫ ফিট ১০ ইঞ্চি লম্বা স্বপ্নকে বাগে আতে পারছিল না। চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলে তারা ভয় পেয়ে যায়। এক পর্যায়ে মাফলার দিয়ে গলা পেঁচিয়ে ধরলে স্বপ্নের মৃত্যু হয়। পরে অন্যদের সহায়তায় মরদেহ গুম করতে ল্যাট্রিনের সেফটি ট্যাংকে ঢুকিয়ে দেয়।

আলিফ আহম্মেদ স্বপ্ন কুড়িগ্রাম কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র ছিল। আর ঘাতক রিফাত ছিল কুড়িগ্রাম রিভার ভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। দুজনে ছিল ঘনিষ্ট বন্ধু।

নাজমুল হোসেন/এমজেড/বিএ