ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

প্রকাশ হচ্ছে সাঈদীর পূর্ণাঙ্গ রায়

প্রকাশিত: ০১:৪৬ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫

একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সুপ্রিমকোর্টের আপলি বিভাগে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় খুব শিগগিরই প্রকাশ হতে পারে। সুপ্রিমকোর্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এর আগে দুই শীর্ষ অপরাধী বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরেই চলছে অপর শীর্ষ অপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের প্রক্রিয়া।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সূত্র মতে, মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত জামায়াতের নায়েবে আমির সাঈদীর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের কার্যক্রম শেষের দিকে। শিগগিরই রায় প্রকাশের অপেক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, আপিল বিভাগের সকল প্রক্রিয়া শেষে ডিসেম্বর মাসেই প্রকাশ পেতে পারে সাঈদীর রায়। তা না হলে আগামী বছর ২০১৬ সালের প্রথম সপ্তাহে বের হতে পারে সাঈদীর আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায়।

সাঈদীর পরে আপিলের রায় ঘোষণা হলেও ৩০ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত রায় প্রকাশ পায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরীর।

মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে আপিলের সংক্ষিপ্ত রায়ে আমৃত্যু কারদণ্ড পাওয়া সাঈদীকেও রিভিউ আবেদন করে সর্বোচ্চ সাজার মুখোমুখি করতে চান রাষ্ট্রপক্ষ। এ লক্ষ্যে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর ফাঁসির দণ্ডাদেশ পুনর্বহালের আরজি জানাবেন বলে জানিয়ে রেখেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

তিনি বলেছেন, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর আইন নির্ধারিত ১৫ দিনের মধ্যেই সাঈদীর সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে রিভিউ আবেদন করা হবে।

অন্যদিকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি ও খালাস চেয়ে রিভিউ আবেদন করবেন সাঈদীও। সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী জানান, তারা খালাস চেয়ে রিভিউ করবেন।   
 
ফলে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে যেমন আপিল করেছিলেন রাষ্ট্র ও আসামি উভয়পক্ষ, ঠিক তেমনি দুই পক্ষই প্রস্তুত হচ্ছেন আপিল মামলার রায়েরও রিভিউ আবেদন করতে। তবে তার আগে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর মুজাহিদ ও সাকার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাজা হওয়ায় আপিল বা রিভিউ কোনটিই করেনি রাষ্ট্রপক্ষ।

২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সাঈদীকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ড থেকে দণ্ড কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। আপিল মামলার সংক্ষিপ্ত ওই রায় দেন সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ। বেঞ্চের অন্য চার বিচারপতি হচ্ছেন, বর্তমান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।

রায় ঘোষণার সময় বেঞ্চে থাকা পাঁচ বিচারপতির মধ্যে এখন পর্যন্ত দুই বিচারপতি ইতোমধ্যে অবসরে চলে গেছেন। তবে সাঈদীর রায় ঘোষণার সময় বিচারপতিগণ ভিন্নমত পোষণ করে তিন রকম রায় ঘোষণা করেছেন বলে সুপ্রিমকোর্ট সূত্রে জানা গেছে। বেঞ্চের একজন বিচারপতি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন, অপর তিনজন বিচারপতি তাকে দিয়েছেন আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং একজন বিচারপতি সাঈদীকে দিয়েছেন খালাস।

রায় পর্যালোচনায় জানা গেছে, বিচারপতিরা সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে আমৃত্যু কারাবাস দেন সাঈদীকে। এর মধ্যে বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা সব অভিযোগ থেকে সাঈদীকে খালাস দেন। আর বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মৃত্যুদণ্ড দেন। অন্যদিকে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি এসকে সিনহা ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেন।

ট্রাইব্যুনাল থেকে আপিল বিভাগে আসা ১৫টি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার মধ্যে পাঁচটির চূড়ান্ত রায় দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। সেগুলোর মধ্যে চারটির পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পেয়েছে এবং দণ্ড কার্যকর হয়েছে।

২০১৬ সালের ৬ জানুয়ারি অপর শীর্ষ মানবতাবিরোধী জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর আপিলের রায়ের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।

আরো সাতটি আপিল শুনানি শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে। তার মধ্যে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার জব্বার (পলাতক); তার সর্বোচ্চ সাজা চেয়ে আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। অন্যদিকে মীর কাসেম আলী, মোবারক হোসেন, আজহারুল ইসলাম, সৈয়দ কায়সার আহমেদ, আব্দুস সুবহান এবং মাহিদুর-আফসার আপিল করেছেন তাদের বিরুদ্ধে দেয়া দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে।
 
এর মধ্যে ট্রাইব্যুনালের রায়ে ৯০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম ও আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীম মৃত্যুবরণ করায় তাদের আপিল অকার্যকর ঘোষণা করেছেন সুপ্রিমকোর্ট।

ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ২৮ মার্চ সাঈদী ও সরকারপক্ষ পৃথক দুটি আপিল (আপিল নম্বর : ৩৯ ও ৪০) আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনালের রায়ে সাজা ঘোষিত না হওয়া ৬টি অভিযোগে শাস্তির আর্জি জানিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আর সাঈদীর ফাঁসির আদেশ থেকে খালাস চেয়ে আপিল করে আসামিপক্ষ।

মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিন হাজারেরও বেশি নিরস্ত্র ব্যক্তিকে হত্যায় সহযোগিতা, আট নারীকে ধর্ষণ, বিভিন্ন বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট, ভাঙচুর এবং একশ’ মতান্তরে একশ’ ৫০ জন হিন্দুকে জোরপূর্বক মুসলমান করাসহ ২০টি  অভিযোগ ছিলো ট্রাইব্যুনালে সাঈদীর বিরুদ্ধে।

ওই ২০টি অভিযোগের মধ্যে আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত ৫টি অভিযোগ। এর মধ্যে দুটিতে অর্থাৎ ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগে আমৃত্যু, একটিতে অর্থাৎ ১০ নম্বর অভিযোগে যাবজ্জীবন, একটিতে অর্থাৎ ৮ নম্বর অভিযোগে ১২ বছর ও একটিতে অর্থাৎ ৭ নম্বর অভিযোগে ১০ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে সাঈদীকে।

এছাড়া ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত ৬, ১১ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ আপিল বিভাগের রায়ে প্রমাণ না পাওয়ায় এসব অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি।

২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারিতে সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। সে রায়ে তার বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণের আটটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে দুটি অপরাধে অর্থাৎ ৮ ও ১০নং অভিযোগে সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। প্রমাণিত অন্য ৬টি অর্থাৎ ৬, ৭, ১১, ১৪, ১৬ ও ১৯নং অভিযোগে আলাদাভাবে কোনো সাজা দেননি ট্রাইব্যুনাল।

এফএইচ/এসএইএচএস/এমএস