ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

ইমেজ সংকটে তারকা হাসপাতাল

প্রকাশিত: ০৩:৪৭ পিএম, ২১ ডিসেম্বর ২০১৫

দেশের নামিদামি হাসপাতালগুলো ইমেজ সংকটে পড়েছে। এই তালিকায় রয়েছে ইউনাইটেড, স্কয়ার, ল্যাবএইড ও পপুলার হাসপাতাল। সম্প্রতি র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) নেতৃত্বে বিভিন্ন সময় পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে নানা অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় রোগীদের বিশ্বাস ভঙ্গ হয়।

অভিযানকালে দেখা যায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়া আইসিইউ, সিসিইউ পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া প্রশাসন অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়া রেজিস্ট্রেশনবিহীন বিদেশি ওষুধ বিক্রি, মেয়াদোত্তীর্ণ রক্ত সংরক্ষণ করা হচ্ছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোগীর শ্লীলতাহানির মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটছে। নানা অনিয়মের অভিযোগে তারকা হাসপাতালগুলোকে বিপুল অঙ্কের টাকা জরিমানা করা ছিল বছরের শেষদিকের অন্যতম আলোচিত ঘটনা।

কিছুদিন আগ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের প্রচলিত ধারণা ছিল বড় বড় হাসপাতালের মালিকানার সঙ্গে রাঘব বোয়ালরা জড়িত থাকায় অনিয়ম করেও তারা সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাবে। তাদের বিরুদ্ধে কখনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না। কিন্তু সাধারণ মানুষের এমন ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে র‌্যাবের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযান সর্বমহলে প্রশংসিত হয়।

বড় বড় হাসপাতালে অনিয়মের চিত্র দেখে সাধারণ মানুষ এ সব প্রতিষ্ঠান দেখভালের দায়িত্বপালনকারী সংস্থা স্বাস্থ্য অধিদফতরের নীরব ভূমিকার সমালোচনা করে বলেছে, তারকা হাসপাতালের যদি এমন অনিয়ম হয় তবে সারাদেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা কথিত হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কি যে বেহাল দশা বিরাজ করছে তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদফতর অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধে সক্রিয় নয়।

অ্যাপোলো হাসপাতাল
গত ৮ সেপ্টেম্বর অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রি ও মজুতের অভিযোগে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে অভিযান চালায় র‌্যাব। র‌্যাব পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রতিষ্ঠানটিকে ১৬ লাখ টাকা জরিমানা করেন। এসময় ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমোদনবিহীন ৫১ প্রকারের প্রায় ১০ লাখ ওষুধ জব্দ করেন আদালত। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজ আহমেদ।

ল্যাবএইড হাসপাতাল
গত ৬ ডিসেম্বর অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রির দায়ে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। একইদিন ল্যাবএইড হাসপাতালের এক চিকিৎসকের সহকারীকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফিরোজ আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, ল্যাবএইড কর্তৃপক্ষ ওষুধ প্রশাসনের (ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) কোনো অনুমতি ছাড়াই বিভিন্ন ধরনের বিদেশি ওষুধ আমদানি ও বিক্রি করতো। এ ওষুধগুলো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক। তাই অবৈধভাবে এসব ওষুধ রাখায় ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

অভিযানে ল্যাবএইড থেকে ২৬ ধরনের অননুমোদিত ও আমদানি নিষিদ্ধ ওষুধ পায় র‌্যাব। এসব ওষুধ হার্ট, কিডনি, ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে রোগীদের ভেজাল ওষুধ সরবরাহ করায় ল্যাবএইড হাসপাতালের এক ডাক্তারের সহকারীকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

র‌্যাব জানায়, ল্যাবএইডের চিকিৎসক অধ্যাপক আলী হোসেন নিয়মিত ল্যাবএইডে রোগী দেখেন। তার সহকারী নজরুল ইসলাম ভেজাল ওষুধ বানিয়ে তা রোগীদের কাছে উচ্চমূল্যে বিক্রি করতেন। তাই তাকে জরিমানা করা হয়েছে। দোষ স্বীকার করে নেয়ায় শুধুমাত্র অর্থদণ্ড দেয়া হয় তাকে।

স্কয়ার হাসপাতাল
গত ৯ ডিসেম্বর বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালকে ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। র‌্যাব-২ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানকালে দেখা যায় হাসপাতালটির নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (আইসিইউ), করনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ), এইচডিইউ, এনআইসিইউ এবং ডালালেসিসের কোনো লাইসেন্স নেই। হাসপাতালটির ক্লিনিক এবং ল্যাবের লাইসেন্সও মেয়াদউত্তীর্ণ। ওই অভিযোগে হাসপাতালটিকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

হাসপাতালটির তিনটি ফার্মেসিতে অভিযানকালে দেখা যায়, মেডিকেল ডিভাইস ও সার্জিকাল অ্যাপেরাটাসের ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রেজিস্ট্রেশন (ডিএআর) এবং প্রেমিসেস লাইসেন্স নেই। ড্রাগ অ্যাক্টের বিধান অনুয়ায়ী এই অপরাধে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

দেখা যায়, হাসপাতালটির ব্লাড ব্যাংকের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৪ সালের জুন মাসে। নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন আইনের ধারা অনুযায়ী এই অপরাধে তাদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড ও টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) অনুমোদন না নিয়ে কেক তৈরি করায় স্কয়ারের ক্যাফেটেরিয়াকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়াও সিটি কর্পোরেশনের কাছ থেকে ফাস্টফুড বিক্রির অনুমোদন নিয়ে বেকারি পণ্য তৈরি করায় আরো ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

পপুলার হাসপাতাল
গত ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর পপুলার হাসপাতালের ধানমন্ডি শাখায় অভিযানকালে মেয়াদোত্তীর্ণ রক্ত সংরক্ষণ ও ২৩ ধরনের অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রির অপরাধে ৯ লাখ টাকা জরিমানা করে র‌্যাব।

র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম গণমাধ্যমেকে জানান, অভিযানের সময় পপুলারের ব্লাড ব্যাংক থেকে তিনটি রক্তভরা ব্যাগ পাওয়া যায়। এগুলোর মেয়াদ ৪-৫ দিন আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাছাড়া ব্লাড ব্যাংকের কোনো লাইসেন্সই ছিল না।

তিনি জানান, রক্ত পরিশোধন আইন-২০০২ অনুযায়ী তাদের ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া ২৩ ধরনের অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রি করায় পপুলার ফার্মেসিকেও ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

ইউনাইটেডে যৌন নিপীড়ন
রাজধানীর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করতে এসে যৌন নিপীড়নের শিকার হন এক নারী। যৌন নিপীড়নের অভিযোগে অভিযুক্ত স্টাফ নার্স সাইফুল ইসলামকে চাকরিচ্যুত করে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় যৌন হয়রানির সঙ্গে জড়িত সাইফুল ইসলাম ও ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না-তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

ঘটনায় জড়িত ওই হাসপাতালের ব্রাদার (স্টাফ নার্স) সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করে আগামী ৭ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় আদালতে হাজির করতে গুলশান থানার প্রতি নির্দেশ দেন আদালত।

স্বরাষ্ট্র সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, পুলিশের আইজি, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি), ডিএমপি কমিশনার, গুলশানের ডিসি ও এসি এবং গুলশান থানার ওসিকে উক্ত রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

এমইউ/এসকেডি/এসএইচএস/একে/আরআইপি

আরও পড়ুন