ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

চিকিৎসার অভাবে অন্ধ বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের স্ত্রী

প্রকাশিত: ০৭:০৯ এএম, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫

১৯৭১ সালে ল্যান্স নায়েক বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ যশোরের ঝিকরগাছ উপজেলার গোয়ালহাটি গ্রামে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। দেশ স্বাধীন হয়েছে তবে বর্তমানে চিকিৎসার অভাবে অন্ধ তার স্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা।

বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক শেখ নূর মোহাম্মদ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার (মহিখোলা) বর্তমান নূর মোহাম্মদ নগরে জন্মগ্রহণ করেন। দরিদ্র বাবা মো. আমানত শেখ ও মাতা মোসা. জেন্নাতা খানমের আশা ছিল ছেলে বড় হয়ে লেখাপড়া শিখে মানুষের মত মানুষ হয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। কিন্তু ডানপিটে নূর মোহাম্মদ আর বেশি দূর এগোতে পারেননি। স্থানীয় বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত অবস্থায় তার শিক্ষা জীবনের অবসান ঘটে।

এরপর ১৯৫৯ সালের ১৪ মার্চ নূর মোহাম্মদ তৎকালীন ইস্ট পাকিস্থান রেজিমেন্টে যোগদান করেন এবং কৃতিত্বের সঙ্গে প্রশিক্ষণ শেষে একই বছরের ৩ ডিসেম্বর দিনাজপুর সেক্টরে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ১৯৭০ সালের ১ জুলাই যশোর সেক্টর হেড কোয়ার্টারে বদলি হয়ে আসেন। ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধকালে ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ ৮ নং সেক্টরে সাবেক ইপিআর ও বাঙালি সেনাদের নিয়ে গঠিত একটি কোম্পানিতে যোগদান করেন।

৭১ এর ৫ সেপ্টেম্বর নূর মোহাম্মদ যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গোয়ালহাটি গ্রামের সম্মুখ যুদ্ধে একটি টহলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। সঙ্গী ছিল আরও ৪ জন সৈন্য। তারা পার্শ্ববর্তী ছুটিপুর পাকহানাদার বাহিনীর ঘাঁটির ওপর নজর রাখছিলেন। পাকবাহিনী টের পেয়ে বিপদজনক অবস্থার মুখে টহলধারী মুক্তিযোদ্ধাদের ফাঁদে ফেলার পরিকল্পনা করে। হানাদারদের এই পরিকল্পনা বুঝে উঠতেই নূর মোহাম্মদ সঙ্গীদের নিয়ে হানাদার বাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণ করেন। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ।

মারাত্মক আহত হলেন সঙ্গী নান্নু মিয়া। তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে হানাদারদের মর্টারশেল মারাত্মকভাবে জখম করে নূর মোহাম্মাদকে। মৃত্যু আসন্ন জেনেও তিনি সিপাহী মোস্তফা কামালের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিয়ে আহত নান্নু মিয়াকে নিয়ে সবাইকে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বলেন। উপায়ান্ত না পেয়ে তারাও তাই করলেন। কিন্তু একটি এসএলআর রেখে যান মারাত্মক আহত কমান্ডারের কাছে। নূর মোহাম্মাদ মৃত্যুপথযাত্রী হয়েও এসএলআর নিয়ে শেষবারের মত ঝাঁপিয়ে পড়েন হানাদারদের উপর। সেখানেই তিনি শহীদ হন। পরবর্তীতে নিকটবর্তী একটি ঝোঁপের মধ্যে এই বীরের মরদেহ পাওয়া যায়। শত্রুর বেয়নেটে তার দেহ ছিল ক্ষত-বিক্ষত, চোখ দু’টি কোটর থেকে উপড়ে ফেলেছিল নর পিশাচেরা।

ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ সঙ্গী সৈনিকদের প্রতি যে ভালবাসা প্রদর্শন করেছেন তার কোনো তুলনা নেই। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন এদেশের মাটিতে নূর মোহাম্মাদের রক্তের গন্ধ পাওয়া যাবে। যতদিন এ জাতি থাকবে ততদিন নূর মোহাম্মাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। কিন্তু তার সহধর্মিনী বর্তমানে অন্ধ হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। গত নভেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে সমস্যার কথা বলে এসেছেন। তিনি চলাফেরার জন্য একটি গাড়ি দাবি করেছেন।

জেলা প্রশাসক মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ বলেন, ল্যান্স নায়েক বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের স্ত্রী মিসেস ফজিলাতুন্নেছা অসুস্থ এটা আমার জানা নেই। আমাকে জানানো হয়নি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো এবং চিকিৎসাসহ অন্যান্য ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এসএস/এমএস