ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

জামালপুরে অসংখ্য বধ্যভূমি পড়ে আছে অবহেলায়

জেলা প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ০৩:১৫ এএম, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫

স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতেই হানাদার বাহিনী জামালপুর মহকুমা সদর ছাড়াও সীমান্তবর্তী বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া কামালপুরে শক্তিশালী ঘাঁটি স্থাপন করেছিল। এই ঘাঁটি থেকে হানাদার বাহিনী তাদের দোসর আল-বদর রাজাকারদের নিয়ে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে। যুদ্ধকালীন সময়ে হানাদার বাহিনীর অসংখ্য নৃশংতার চিহ্ন আর বধ্যভূমি ছড়িয়ে আছে সীমান্তবর্তী ধানুয়া কামালপুরসহ বকশীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে।

স্বাধীনতার ৪৪ বছরেও এসব বধ্যভূমি আর গণকবর চি‎হ্নিত আর সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি।

Jamalpur

একাত্তরে যুদ্ধের শুরুতেই বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছাড়াও আশপাশের বেশ কয়েকটি জেলা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ১১নং সেক্টর গঠিত হয়। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা জেলার মহেন্দ্রগঞ্জ এলাকায় কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বাধীন ১১নং সেক্টরের হেড কোয়াটার স্থাপন করা হয়। বিপরীতে এপাশে বকশীগঞ্জের ধানুয়া কামালপুরে হানাদার বাহিনীর ঘাঁটি স্থাপন করা হয়।

Jamalpur

এই অঞ্চলে হানাদার বাহিনীর অন্যতম শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল ধানুয়া কামালপুর। স্বাধীনতা যুদ্ধে এই ১১নং সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বকশীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত হয় হত্যাযজ্ঞ। হানাদার বাহিনী বকশীগঞ্জের মাটিতে গণধর্ষণ ও নিরীহ বাঙালীর উপর হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠে। এখানকার অনেক যুদ্ধই ইতিহাসে জায়গা করে নিলেও এখানকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শহীদ হওয়ার স্থান, বধ্যভূমি আর গণকবরগুলো অযত্ন অবহেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে।

বকশীগঞ্জ এন এম উচ্চ বিদ্যালয়, উলফাতুন নেছা সরকারি বালিকা বিদ্যালয় ও ধানুয়া কামালপুর বিডিআর ক্যাম্পে হানাদার বাহিনী গড়ে তোলে নির্যাতন সেল। সেখানে শত শত মুক্তিকামী মানুষকে ধরে এনে লাইনে দাঁড় করে চোখ বেঁধে নির্বিচারে হত্যা করা হয়। কামালপুরের সবচেয়ে বড় দুইটি বধ্যভূমি বেদখল হয়ে গেছে। এছাড়া কামালপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সংলগ্ন বধ্যভূমিটি পুকুর ও বাড়ি করে বেদখল করা হয়েছে।

Jamalpur

বকশীগঞ্জ এন এম উচ্চ বিদ্যালয়ের উত্তর পাশের বধ্যভূমিটিকে হানাদাররা মৃত্যুকূপ হিসেবে ব্যবহৃর করতো। মৃত্যুকূপ ছাড়াও প্রতিটি বধ্যভূমিতে নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করে একেকটি গর্তে ১৫/২০ জনকে মাটিচাপা দেয়া হতো। সেখানে দেয়া হয়েছে স্কুলের টয়লেট। বকশীগঞ্জের গরুহাটি বধ্যভূমিতে প্রায় দু্ই শতাধিক নর-নারীকে হত্যা করে গণকবর দেয়া হয়েছে। সেই গণ কবরগুলো অবহেলিত হয়ে পড়ে রয়েছে। শুধু ধানুয়া কামালপুরের বর্তমান বিডিআর ক্যাম্পের আশপাশের এলাকায় অর্ধশতাধিক গণকবর রয়েছে অবহেলায়। পুরো গণকবর এলাকাটিই জঙ্গলে পরিণত হয়েছে।

একাত্তরের ৩১ জুলাই হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়াবহ যুদ্ধে ক্যাপ্টেন সালাহ উদ্দিন মমতাজসহ ৬৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবরগুলোও চিহ্নিত হয়নি এখনো। হানাদারদের সঙ্গে সন্মুখ যুদ্ধে মৃধাপাড়া ব্রিজ এলাকায় সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহের গুলিবিদ্ধ হয়ে এক পা হারান। কর্নেল তাহেরের পা হারানোর স্থানটিও একটি গণকবর। স্বাধীনতার পর প্রায় ৪২ বছর সেটিও অযত্ন-অবহেলায় পড়েছিল। সম্প্রতি সেই স্থানটিতে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা বাবুল চিশতী ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহেরের নামে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে দিয়েছেন।

Jamalpur

এছাড়াও প্রাচীর নির্মাণ করে আট শহীদের গণকরব সংরক্ষণ এবং শহীদ ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন মমতাজ বীর উত্তম স্মৃতি ক্লাব নির্মাণ করা হয়েছে।

বকশীগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা আলী আহমেদ, মো. লাল মিয়া, মজিবর রহামান, আবুল কাসি, সিরাজুল হক বাদু, সলিম উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে জাগো নিউজকে জানান, যখন দেখি যাদের রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে তাদের কবরটাও অরক্ষিত আর অনাদর অবহেলায় পড়ে আছে শহীদের কবর তখন খুব কষ্ট হয়। আগামী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে এসব স্মৃতিচিহ্ন শনাক্ত করে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

এমজেড/এমএস