ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

বিজয়ের উৎসবে ঢাবি ক্যাম্পাস

প্রকাশিত: ০৭:৩৩ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫

পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল……..; তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেবোরে, আমরা কজন নবীন মাঝি হাল ধরেছি শক্ত করে রে……….; কিংবা জয় বাংলা, বাংলার জয়………. গানগুলোতে মুখোরিত ছিল সারাটি দিন। এরই মধ্যে ঘনিয়ে আসে সন্ধ্যা। শুরু হয় রাজাকার, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে প্ল্যানচেট। এরপর নীল আকাশে কিছু সময় পর পর ফানুস উড্ডয়ন। সর্বশেষ রাত ১২টা ১ মিনিটে আঁতশবাজি। সবই যেন জানান দিচ্ছে কোনো এক মহা উৎসবের।

হ্যাঁ, বাঙালি হাসছে এখন বিজয়ের হাসিতে। ১৫ ডিসেম্বর শেষে আজ ১৬ ডিসেম্বর। ৪৪ বছর আগে আজকের এ দিনে পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। রাত ১২টা ১ মিনিটে নীল আকাশে ফানুসের পরিবর্তে ফোটানো হয়েছে আঁতশবাজি। এভাবেই বিজয়ের আগের রাতকে স্বাগত জানায় স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকারের ভূমিকায় থাকা ষোলকোটি বাঙালির স্বপ্নের জায়গা হিসেবে চিহ্নিত প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পুরো ক্যাম্পাসকে আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছে। ক্যাম্পাসের প্রতিটি একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনসহ হলগুলোকেও রাঙানো হয়েছে বিয়ে বাড়ির রঙে।

দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) কেন্দ্রিক সংগঠনগুলো আয়োজন করে থাকে বিজয় উৎসবের। তার ব্যত্যয় ঘটেনি এবারও। এ বছর সংগঠনগুলোর যৌথ উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে ‘রক্তে রাঙা বিজয় আমার-২০১৫’। তিন দিনব্যাপি এ কর্মসূচি শুরু হয় সোমবার থেকে।


এদিন দুপুর সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তনে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের হত্যাকারীর বিচারের দাবিতে মানববন্ধনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় এ কর্মসূচি। এতে টিএসসির সব সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। রাতে একই স্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি হয়।

মঙ্গলবার বিকেল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির উদ্যোগে টিএসসির সামনে চলছে ‘রোড টু ইন্ডিপেন্ডেন্স ১৯৭১’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। প্রদর্শনীতে ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে বাংলার নবাব সিরাজ উদ্দৌলার পরাজয়ের পর থেকে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত যারা অবদান রেখেছেন তাদের পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা যায় দর্শণার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। তারা ঘুরে ঘুরে দেখছেন সেগুলো। জানছেন বাঙালি জাতিসত্ত্বার বিকাশে যারা অবদান দিয়ে গেছেন তাদের।

মঙ্গলবার দুপুর ১টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফিক সোসাইটির আয়োজনে প্রদর্শনী করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র প্রদর্শনী। এরপর সাংস্কৃতিক ইউনিয়নের পরিবেশনায় দেশের ও বিজয়ের গান পরিবেশ করা হয়। বেলা সাড়ে ৪টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কুইজ সোসাইটির আয়োজনে কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুটি দল অংশ নেয়। দল দুটি হচ্ছে শামসুন্নাহার হল এবং বিজয় একাত্তর হল। এতে শামসুন্নাহার হল বিজয় একাত্তর হলকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইটি সোসাইটির আয়োজনে প্রজেক্টরে দেখানো হয় ‘অনলাইনে মুক্তিযুদ্ধ’ বিষয়ক একটি ডকুমেন্টরি।


সন্ধ্যার পর পরই শুরু হয় ভিন্ন রকম আয়োজন। প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির উদ্যোগে শুরু হয় প্লানচেট বিতর্ক। এতে মুক্তিযোদ্ধা, রাজাকার এবং বীরাঙ্গনার ভূমিকায় প্লানচেট করে ডিবেটিং সোসাইটির বিতার্কিকরা। এরপর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ঢাবি মাইম অ্যাকশনের আয়োজনে ‘বুমেরাং’ প্রদর্শনী করা হয়। এরপর স্লোগান’৭১ এর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

সন্ধ্যা ৭টা থেকে শুরু হয় বিজয়ের রাতকে স্বাগত জানানোর মূল আয়োজন। টিএসসির শান্তির পায়রার সামনে কিছু সময় পর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের আয়োজনে নীল আকাশে ফানুস উড্ডয়ন করা হয়। এরপর শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এখানে গান গায় গানপোকা, চিৎকার, চিরকুট, শিরোনামহীনসহ বেশ কয়েকটি ব্যান্ড।


এরপরই আসে সে মাহেন্দ্রক্ষণ। বুধবার দিনের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১মিনিটে আঁতশবাজির মাধ্যমে ঘুমন্ত নীল আকাশে আলোকঝটা ছিটানো হয়। বাঙালিকে জানান দেয়া হয়েছে আজকের দিনটি আমাদের বিজয় দিবস। এমন আয়োজনে ছিল স্লোগান’৭১।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও এসব আয়োজন দেখতে এবং আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে আসে হাজারো মানুষ। তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধ, কিশোর, শিশুসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষ হাজির হয়েছেন এমন মুক্তবুদ্ধির চর্চাকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত টিএসসিতে। এদিকে দিনটিকে আরও উৎসব মুখর করে তুলেছে বিপিএলের ফাইনাল ম্যাচও। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলে টিভি রুমগুলো ছিল দর্শকদের ভিড়ে পরিপূর্ণ।


এছাড়া আজ বুধবারও সাংবাদিক সমিতির প্রদর্শনী ছাড়াও সকাল ১০টায় সাইক্লিং ক্লাবের বিজয় র‌্যালি, পরিবেশ সংসদের বৃক্ষরোপন ও উন্মুক্ত চলচ্চিত্র প্রদর্শনী রয়েছে তিন দিনব্যাপি কর্মসূচিতে। এছাড়া দুপুর থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আয়োজনে রয়েছে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। যেখানে জেমস ও তার ব্যান্ডদলসহ কয়েকটি ব্যান্ড দল গান পরিবেশন করবে।

এমএইচ/বিএ