ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

তারকা হাসপাতাল : জরিমানা গুনে লাখে বাণিজ্য করে কোটিতে

প্রকাশিত: ০২:৩৯ পিএম, ১০ ডিসেম্বর ২০১৫

রাজধানীর অ্যাপোলো, ল্যাবএইড, স্কয়ার, ইউনাইটেডসহ পাঁচ তারকাখ্যাত হাসপাতালগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন সময় ঝটিকা অভিযান চালায়। এসময় অনুনোমোদিত ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম রাখার দায়ে তাদের লাখ লাখ টাকা জরিমানা করে। এরপরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবৈধ ওষুধ বিক্রি বন্ধ করছে না। পুনরায় চালিয়ে যাচ্ছে নিজেদের বাণিজ্য।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ওষুধ বিশেষজ্ঞ জাগো নিউজকে বলেন, হাসপাতালগুলোর অনুমোদনহীন এসব ওষুধ বিক্রি করে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা আয় করছে। আর সারাবছর কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করছে তারা। প্রায়শই কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে রোগীদের জিম্মি করে বেশি দামে ওষুধ ও বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম বিক্রি করছে। শুধু বিদেশিই নয়, দেশীয় ওষুধের ওপর শতকরা ২০ ভাগ সার্ভিস চার্জ আদায় করছে তারা।

এদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে কালেভাদ্রে কয়েক লাখ টাকা জরিমানা গুনলেও তাদের কাছে বিষয়টি যেনো কোনো ব্যাপারই না! একদিন লাখ টাকা জরিমানা দিলেও সারাবছর কোটি কোটি টাকা রোজগার করেন এজন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের জরিমানাকে তোয়াক্কা তারা (হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ) করেন না বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

মাত্র তিনদিনের ব্যবধানে ভ্রাম্যমাণ আদালত গত রোববার ধানমন্ডির ল্যাবএইড, বুধবার পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে অনুনোমোদিত ওষুধ সংরক্ষণ, মেডিকেল ডিভাইস ও সার্জিক্যাল অ্যাপারেটাসসহ বিভিন্ন অপরাধে যথাক্রমে ১০ লাখ ও ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা করে।

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়া কোনো ওষুধ বিক্রি সম্পূর্ণভাবে অনৈতিক হলেও মুমূর্ষু রোগীর প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবার দোহাই দিয়ে তারা বছরের পর বছর অনুনোমোদিত বিভিন্ন ওষুধ অবাধে বিক্রি করছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব হাসপাতালে অনুমোদনহীন ওষুধের বেশিরভাগই বিদেশি। এসব ওষুধের বিকল্প ভালো মানের ওষুধ দেশের বাজারে পাওয়া গেলেও হাসপাতালগুলো এমআরপি (মার্কেটিং রিটেইল প্রাইজ) এর চেয়ে অনেক বেশি দামে রোগীদের কাছে বিক্রি করছে।

তবে একাধিক বড় হাসপাতালের শীর্ষ কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, তাদের হাসপাতালে ভারতীয় চিকিৎসকরা চাকরি করেন। কোনো ধরনের বাণিজ্য নয়, অভ্যাসবশত কেবলমাত্র রোগীর স্বার্থে ওই ধরনের কিছু সংখ্যক ওষুধ প্রেসক্রাইব করা হয়।

রোগীর প্রয়োজন সাপেক্ষে হাসপাতালগুলো ওষুধ বিক্রি করতে পারে কি না? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোগীর সুচিকিৎসার্থে শুধু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই নয়, একজন সাধারণ মানুষও ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমোদন সাপেক্ষে ওষুধ আমদানি করতে পারে। কিন্তু ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়া যত প্রাণরক্ষাকারী ওষুধই রাখা হোক না কেন; তা অবৈধ ওষুধ হিসেবে গণ্য হবে।

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের ড্রাগ সুপার সৈকত কুমার কর বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিভিন্ন অভিযানে অংশগ্রহণকালে তিনি দেখেছেন, রোগীর চিকিৎসার জন্য দেশীয় ওষুধ থাকলেও তারা বিদেশি অনুনোমোদিত ওষুধ রাখছেন।

অভিযোগ রয়েছে- স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার প্রয়োজনীয় মনিটরিং ও সুপারভিশনের অভাবে বড় বড় হাসপাতালে দীর্ঘদিন যাবত অনুনোমোদিত ওষুধ, ইনজেকশন ও চিকিৎসা যন্ত্রপাতি অবাধে বিক্রি চলছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তাদের নিয়মিত মনিটরিংয়ের কথা থাকলেও তারা খাতা-কলমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেন।

বুধবার স্কয়ার হাসপাতালে অভিযানকালে ব্লাড ব্যাংকের লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার প্রমাণ মেলে। এমনকি জানা যায়, গত ৯ বছর ধরে লাইসেন্স ছাড়াই মোটা অংকের টাকা নিয়ে আইসিইউ, সিসিইউ পরিচালনা করছিলো এ তারকা হাসপাতালটি। তবে মহাখালীর কার্যালয় থেকে খুব দূরে না হলেও স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তাদের কাছে হাসপাতালটির সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য নেই!

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের একজন পরিচালক জাগো নিউজকে জানান, বছর দেড়েক আগে ল্যাবএইড হাসপাতালে অনুনোমোদিত ওষুধ জব্দ ও জরিমানা করে বেরিয়ে আসার মুখে হাসপাতালের কর্মকর্তাদের উস্কানিতে কর্মচারীরা তার গাড়ি আটকে দেন।

এছাড়া হাসপাতালগুলোতে নিয়মিত অভিযান চালালে নিছক বাণিজ্যের স্বার্থে বিদেশি অনুনোমোদিত ওষুধ বিক্রি বন্ধ হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এমইউ/আরএস/এসএইচএস/আরআইপি

আরও পড়ুন