ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

নীল দলে ভাঙন, কোণঠাসা সাদা দল

প্রকাশিত: ০৩:২৬ এএম, ১০ ডিসেম্বর ২০১৫

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির কার্যকরী পরিষদ নির্বাচন-২০১৬ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রোববার (১৩ ডিসেম্বর)। ঢাবি’র শিক্ষকদের এ নির্বাচন প্রভাব ফেলবে জাতীয় রাজনীতিতেও। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের লাউঞ্জ, বিভাগীয় অফিস, বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবসহ সব জায়গায় বইছে নির্বাচনী আমেজ। প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রার্থীরা। নিজের পক্ষে ভোট টানতে নানা ধরনের নির্বাচনী অঙ্গীকার নিয়ে ভোটারদের কাছে হাজির হচ্ছেন তারা।

রোববার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাব ভবনে চলবে এ নির্বাচন। এ বছর শিক্ষক সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ মোট ১৫টি কার্যকরী পরিষদ পদের বিপরীতে তিনটি প্যানেল ও স্বতন্ত্রসহ মোট ৩৯ জন প্রার্থী লড়ছেন। যার মধ্যে সরকার সমর্থিত আওয়ামী লীগের নীল দল এবং বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সাদা দল সবকটি পদে তাদের প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। নিজেদের সঠিক মূল্যায়ন না পেয়ে ও সক্রিয়তা হারানোর ভয়ে নীল দল থেকে পৃথক হয়ে এ বছর নির্বাচন করছেন প্রগতিশীল শিক্ষকরা। নতুনভাবে তারা তাদের গোলাপী প্যানেল গঠন করেছে। তারা ৮টি পদে প্রার্থী দিয়েছে। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পদে লড়ছেন একজন। যিনি সাধারণ-সম্পাদক হিসেবে লড়বেন। নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক সাবেক চেয়ারম্যান শরিফ উল্লাহ ভূঁইয়া।

এদিকে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই প্রার্থীরা নিজেদের প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। সব প্রার্থীই নিজ পক্ষে ভোট টানতে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। শিক্ষকদের বেতন-ভাতার দাবি-দাওয়া নিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা ছাড়াও শিক্ষকদের অন্যান্য বিষয় নিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছেন তারা।

এছাড়া শিক্ষকদের বেতন-ভাতা সংক্রান্ত জটিলতা, দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, নীল দল থেকে বেরিয়ে বামধারার শিক্ষকদের নতুন প্যানেল ঘোষণাসহ বেশ কয়েকটি বিষয় প্রভাব ফেলবে নির্বাচনী ফলাফলে। অন্যদিকে গত ২০০৯ সাল থেকে একদলীয়ভাবে বিপুল সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগের কারণে কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে বিএনপি-জাময়াত সমর্থীত সাদা দল। গত বছর এ নির্বাচনে ১৫টি পদের সবকটিতে ভরাডুবি হয় তাদের। তবে এবার বিভিন্ন ইস্যু সামনে থাকায় ভোটাররা তাদের প্রার্থীদের নির্বাচিত করবে বলে আশাবাদী সাদা দল থেকে সদস্য পদে মনোনীত প্রার্থী পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম।

অন্যদিকে নির্বাচনকে ঘিরে সরকার সমর্থিত নীল প্যানেলে শুরু হয়েছে টানাপোড়ন। নীল দলের অনেক শিক্ষকই মনে করছেন সবকটি পদ আওয়ামী লীগ সমর্থিত হওয়ায় সরকার শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া গুরুত্বের সাথে মূল্যায়ন করছেন না। তাই এ নির্বাচনে এটিও প্রভাব ফেলবে। তাছাড়া, বিষয়টির সুরাহা না হওয়ায় এক ধরনের অস্বস্তিতে আছেন সরকার দল সমর্থিত নীল প্যানেলের শিক্ষক নেতারাও। অন্যদিকে নীল দলে নিজেদের সঠিক মূল্যায়ন না পাওয়া, বেতন-ভাতা সংক্রান্ত কারণ ও নিজেদের সক্রিয়তা হারানোর ভয়ে অস্তিত্ব রক্ষার্থের এ বছর পৃথক প্যানেল ঘোষণা করেছে বামধারার শিক্ষকরা। তাই স্বাভাবিকভাবেই নীল দলের ভোট দু’ভাগে ভাগ হয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে সুযোগ পেতে পারে সাদা দল সমর্থিত প্রার্থীরা। এছাড়া বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত কয়েক বছরে বিপুল শিক্ষক নিয়োগ, বেতন-ভাতা সংক্রান্ত সাম্প্রতিক জটিলতা এবং দেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে নীল দলের সাথে বিরোধ রয়েছে গোলাপী দলের। তাই এ নির্বাচনের ফলাফলে এসব বিষয় বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সারাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন-ভাতা নিয়ে সরকারের অবস্থান এ নির্বাচনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। এদিকে এবার নির্বাচনে বাম সমর্থক শিক্ষকরা আলাদা প্যানেল দেয়ায় ক্যাম্পাসে নানা ধরনের গুঞ্জন শুরু হয়েছে।

তবে এটি নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে দাবি নীল দলের সভাপতি পদপ্রার্থী এবং শিক্ষক সমিতির বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের। তিনি বলেন, ‘তাদের আলাদা প্যানেল গঠন কোন ধরনের প্রভাব ফেলবে না। নির্বাচনে অংশ নেয়াটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। তাদের সাথে আমাদের কোনো মতবিরোধ নেই। আরো প্যানেল হলেও আমাদের কোনো সমস্যা হবে না।’

অন্যদিকে গোলাপী প্যানেল থেকে সহ-সভাপতি মনোনীত অধ্যাপক ড. নেহাল করিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা মনে করেছি আমাদের সক্রিয়তা রক্ষা করার জন্য আলাদা প্যানেল করা দরকার, সেজন্য আমরা আমাদের আলাদা প্যানেল প্রকাশ করেছি। মূলত অস্তিত্ব রক্ষার্থে আমরা আমাদের নতুন প্যানেল ঘোষণা করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কোন শিক্ষকের কাছে ভোট ভিক্ষাও চাচ্ছি না কিংবা হাত পাও ধরছি না। বর্তমানে নির্বাচনে ভোটাররা কোন প্রার্থী দেখেন না, তারা মুখস্ত ভোট দিয়ে থাকেন। তবে আমরা আশাবাদী আমাদের প্রার্থীদের ভোটাররা অবশ্যই বিজয়ী করবেন।’

নতুন প্যানেল গঠনের কারণ নীল দল থেকে সঠিক মূল্যায়ন না পাওয়াও হতে পারে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেটিও কারণ হয়ে থাকতে পারে। কারণ পৃথিবীর চিরচারিত নিয়ম হচ্ছে বড়রা ছোটদের অবজ্ঞা করা। আমাদের মনে হচ্ছে আমরা তাদের সাথে নিজেদের সঠিক মূল্যায়ন পাচ্ছি না। যার কারণে আমরা আমাদের নতুন প্যানেল তৈরি করছি।’

সাদা দলের সদস্যপদে প্রার্থী পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিক্ষক সমিতি মূলত শিক্ষকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ করে থাকে। কিন্তু গত কিছু দিন যাবত শিক্ষকদের বেতন ভাতা ও সম্মানির যে বিষয়টা নিয়ে আমরা আন্দোলন করে যাচ্ছি। সেটি এখন পর্যন্ত কোন ধরনের আলোর মুখ দেখেনি। মূলত সরকারি দলের লোক হলে সরকার থেকে কিছু আদায় করা কঠিন হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে আমার বিশ্বাস আমাদের সাদা দলের মনোনীত প্রার্থীরা এবার সে দিক থেকে শিক্ষকদের দাবি সমূহ নিয়ে দাঁড়াবে। সে জন্য আমাদের শিক্ষকদের নির্বাচিত করাবে বলে আমি আশা প্রকাশ করছি।’ নীল দলের ভাঙনের ব্যপারে তিনি বলেন অবশ্যই এটি নির্বাচনী মাঠে প্রভাব রাখবে।

সরকার সমর্থিত নীল দলের প্রার্থীরা হলেন- সভাপতি পদে শিক্ষক সমিতির বর্তমান সভাপতি, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, সহ-সভাপতি পদে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: ইমদাদুল হক, কোষাধ্যক্ষ পদে শিক্ষক সমিতির বর্তমান কোষাধ্যক্ষ ব্যবসায়ে শিক্ষা অনুষদের ডিন ও ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সুরেন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক পদে শিক্ষক সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও আর্থ অ্যান্ড অ্যানভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, যুগ্ম-সম্পাদক পদে ইংরেজি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক নীলিমা আকতার।

এ ছাড়া ১০ জন সদস্য পদের প্রার্থীরা হলেন- কলা অনুষদের ডিন এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ জেড এম শফিউল আলম ভূইয়া, অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান, খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: নিজামুল হক ভূঁইয়া, আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: রহমত উল্লাহ, অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাবিতা রিজওয়ানা রহমান, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: মাসুদুর রহমান, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: আফতার আলী শেখ, গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক লাফিফা জামাল।

পক্ষান্তরে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সাদা দলের প্রার্থীরা হলেন- সভাপতি পদে ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: সিরাজুল ইসলাম, সহ-সভাপতি পদে মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: আখতার হোসেন খান, কোষাধ্যক্ষ পদে মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এ বি এম শহিদুল ইসলাম, সাধারণ-সম্পাদক পদে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, যুগ্ম সম্পাদক পদে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সালাম।

এ ছাড়া ১০ জন সদস্য পদের প্রার্থীরা হলেন- ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ার উদ্দিন চৌধুরী, ফার্মাসিউটিক্যাল ক্যামিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ টি এম জাফরুল ইসলাম, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও সিনেট সদস্য অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. দিলীপ কুমার বড়ুয়া, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও সিনেট সদস্য ড. মামুন আহমেদ, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: আবদুল করিম, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক মো: আবদুল হাকিম, পরিসংখ্যান, প্রাণ পরিসংখ্যান ও তথ্য পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ও ইন্টারন্যাশনাল হলের প্রভোস্ট সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য মো: লুৎফর রহমান, মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মামুন চৌধুরী এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক হোসনে আরা বেগম।

গোলাপী দলের প্রার্থীরা হলেন- সহ-সভাপতি পদে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম, কোষাধ্যক্ষ পদে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মহিউদ্দীন, যুগ্ম-সম্পাদক পদে পালি ও বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সুমন কান্তি বড়ুয়া।

এছাড়া ৫টি সদস্য পদের প্রার্থীরা হলেন- ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফকরুল আলম, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ, পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এম আকতারুজ্জামান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: সাহাদাৎ হোসেন এবং দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম সালাহউদ্দিন। আর একমাত্র স্বতন্ত্রপ্রার্থী-সাধারণ-সম্পাদক পদে-আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান।

এমএইচ/এআরএস/পিআর