ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

একসঙ্গে ৯০ জন পাক সৈন্যকে হত্যা করেছিলাম সেদিন

প্রকাশিত: ১১:২৬ এএম, ০৯ ডিসেম্বর ২০১৫

একাত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দামাল ছেলেরা। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত ও মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। বাঙালি জাতির মুক্তির সেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তৎকালীন ইষ্ট পাকিস্তান রাইফেলস’র (ইপিআর) নায়েক মো. রেজাউল হক।

সর্বশেষ সুবেদার মেজর পদে পদোন্নতি পেয়ে চাকরি থেকে অবসর নেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তান। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জাগো নিউজের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি আজিজুল আলম সঞ্চয়।

জাগো নিউজ : জাগো নিউজের পক্ষ থেকে আপনাকে বিজয়ের শুভেচ্ছা, কেমন আছেন?
রেজাউল হক : জাগো নিউজকেও বিজয়ের শুভেচ্ছা, আমি ভালো আছি।

জাগো নিউজ : জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য আপনার মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার গল্পটি যদি বলতেন?
রেজাউল হক : মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল প্রায় ৩১ বছর। তখন আমি ইপিআর-এ ইন্টেলিজেন্টস বিভাগে কর্মরত ছিলাম। আমরা ইপিআর-এ কর্মরত বাঙালিরা একে অপরের সঙ্গে বাংলাতে কথা বলতে পারতাম না, বাংলাতে কথা বললে পাকিস্তানিরা আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতো আর বলত, বাংলা মে কিউ বাত কিয়া, উর্দু মে বাত নেহি কার সাকতা কেয়া ? এ অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে ৭ই মার্চ আমরা কয়েকজন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর মিটিংয়ে যাই। এরপর ২৩ মার্চ রাতে আমরা ১২/১৩ জন সঙ্গবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের জয় বাংলা পতাকা পিলখানার প্যারেড গ্রাউন্ডে উত্তোলন করি। ২৫ মার্চ রাত ১২.৫ মিনিটের দিকে যখন পিলখানায় পাক বাহিনী অতর্কিত হামলা চালায় তখন আমি জীবন বাজি রেখেই পিলখানা থেকে আমার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘাটিয়ারা চলে আসি। পরে আসার ৩/৪দিন পর আমরা ৩/৪জন তৎকালিন ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ফোর বেঙ্গলের বি কোম্পানির অধিনায়ক মো. আইন উদ্দিন সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এরপর আইন উদ্দিন সাহেবের অধীনে আমরা যোগদান করে ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে থাকা ভারতের আগরতলার মনতলী সাব সেক্টরে যোগ দেই। যেহেতু আমরা প্রাক্তন সৈনিক ছিলাম তাই আমাদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়নি, যোগ দেয়ার পর সেখান থেকেই আমরা যুদ্ধ শুরু করি। যুদ্ধের সময় আমি আহত না হলেও আমর সহযোদ্ধা ও চাচাতো ভাই বীর প্রতিক সাইদুল হক গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। যেহেতু আমি সিকিউরিটি বিভাগে ছিলাম তাই আমার প্রধান দায়িত্ব ছিল সংবাদ সংগ্রহ করা এবং জায়গায় জায়গায় গিয়ে পাক সৈন্যদের খবর আনা ও যুদ্ধের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা তৈরিতে সহায়তা করা। এছাড়া আমার আরেকটি বিশেষ দায়িত্ব ছিল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ভারত থেকে বাংলাদেশে পৌঁছে দেওয়া ও যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে চায় তাদেরকে বাংলাদেশ থেকে প্রশিক্ষণের জন্য ভারত পাঠানো।

জাগো নিউজ : মুক্তিযুদ্ধকালীন কোন মুহূর্তটি আপনার বেশি মনে পড়ে?
রোজাউল হক : আমার একটি স্মরণীয় মুহূর্ত রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমাদের ব্যাটালিয়ন কমান্ডার আইন উদ্দিন সাহেব আমাদের আদেশ করলেন নোয়ামোড়া এলাকায় আমাদের সমস্ত মুক্তিযোদ্ধাদের যেতে হবে। আমরা ২২ নভেম্বর ভোর বেলা সেখানে পৌঁছালাম। তখন সেখানে পাক সৈন্যরা অন্যস্থানে যাওয়ার জন্য সবাই একসঙ্গে জড়ো হচ্ছিল। এমন অবস্থায় আমরা ব্রাশ ফায়ার করে একসঙ্গে ৯০ জন পাক সৈন্যকে হত্যা করেছিলাম। এছাড়া আরো অনেক অপারেশনের কথাই মনে পড়ে আমার।

জাগো নিউজ : অস্বচ্ছল ও অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকারের কি করণীয় আছে ?
রেজাউল হক : অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছেন যাদের তালিকায় নাম নেই। অথচ অনেকেই যুদ্ধ না করেও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন। এজন্য সরকারের উচিত দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে একটি কমিটি গঠন করে অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি করে তাদের আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

b-barea

জাগো নিউজ : মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকারি ভাতার পাশাপাশি স্থায়ী কোনো কিছু করার প্রয়োজন আছে?
রেজাউল হক : সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেমন প্রতি দুই ঈদে দুটি বোনাস পান আমাদের জন্যও সরকার দুটি বোনাসের ব্যবস্থা করতে পারে। এছাড়া আমাদের অনেক মুক্তিযোদ্ধাই নানা রোগে ভুগছেন, তাদের জন্য যদি সরকার একটি চিকিৎসা ভাতার ব্যবস্থা করে তাহলে আমরা অনেক উপকৃত হব।

জাগো নিউজ : আপনার পবিরের সদস্যরা কে কোথায় কি করছেন ?
রেজাউল হক: পরিবারে আমার স্ত্রী ও তিন ছেলে এবং এক মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে মো. জাহিদুল হক রেজা একটি সনামধন্য ওষুধ কোম্পানিতে সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজার ও মেঝো ছেলে মো. খাবিরুল হক রেজা মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে কর্মকর্ত রয়েছেন। এছাড়া একমাত্র মেয়ে সুলতানা রিমাকে বিয়ে দিয়েছি।

জাগো নিউজ : জাগো নিউজকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ?
রেজাউলক হক : আপনাকেও ধন্যবাদ।

এমএএস/এমএস