ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

লকডাউনেও উৎপাদনে পোশাকশিল্প, পরিবহন সংকটে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা

ইয়াসির আরাফাত রিপন | প্রকাশিত: ০৪:৩১ পিএম, ০৮ জুলাই ২০২১

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে এ দফায় সরকারের কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে ১ জুলাই। এর আগে কয়েকবার অনেকটাই ঢিলেঢালা হলেও এবার লকডাউনে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি চেকপোস্ট বসিয়েছে সেনাবাহিনীও। অতিপ্রয়োজনীয় ছাড়া সব ধরনের যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। বন্ধ রয়েছে জরুরি সেবাদান ছাড়া সব ধরনের অফিস।

অন্যদিকে এ অবস্থায়ও উৎপাদনে রয়েছে রফতানিমুখী শিল্পকারখানা। বিশেষ করে তৈরি পোশাক কারখানা পুরোপুরিই খোলা রয়েছে। গত বছর শ্রমিকরা আক্রান্ত হলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন উদ্যোক্তারা। পরে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রতি জোর দেয় কারখানাগুলো। এতে সুফলও আসে। এবারও সেই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই উৎপাদন অব্যাহত আছে।

অধিকাংশ কারখানায় শ্রমিকদের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শ্রমিক নেতারা। তারা বলছেন, কারখানার পার্শ্ববর্তী এলাকায় শ্রমিকের বাসা নেই। স্বল্প বেতনে সাশ্রয়ী বাসা পেতে তারা কারখানা থেকে দূরে থাকেন। দূর থেকে হেঁটে আসতে নানা ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। পথের দূরত্বের কারণে কারখানায় দু-এক মিনিট দেরি হলেই শ্রমিকদের বেতন কাটা হচ্ছে।

গত বছর করোনার প্রথম ঢেউয়ে বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেকটাই পাল্টে যায়। শত শত বহুজাতিক কোম্পানির শ্রমিকরা ছাঁটাইয়ের শিকার হন। বন্ধ হয়ে যায় হাজারো শিল্প কল-কারখানা। এর ধাক্কা লাগে দেশের রফতানি আয়ে নেতৃত্ব দেয়া পোশাকখাতেও।

একের পর এক বাতিল হতে থাকে রফতানি আদেশ। এতে শঙ্কা দেখা দেয় পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে এ খাতে জড়িত প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিকের জীবন-জীবিকা নিয়ে।

এর পরই সরকারি সহযোগিতা আর ক্রেতাদের নতুন করে পণ্যের অর্ডারে ঘুরে দাঁড়ায় পোশাক শিল্প। তাতে উদ্যোক্তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশে চলমান লকডাউনের মধ্যেও উৎপাদন অব্যাহত রাখেন।

jagonews24

এবারও চলছে একইভাবে। এবার কারখানাগুলো সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে শতভাগ মাস্ক পরা নিশ্চিত করায়। একই সঙ্গে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ও শারীরিক দূরত্বও গুরুত্ব পাচ্ছে কারখানায়।

হাতেগোনা কিছু কারখানায় দূরের শ্রমিকদের আনার ব্যবস্থা রাখা হলেও বেশিরভাগ কারখানারই নিজস্ব পরিবহন নেই। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শ্রমিক নেতারা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দত্ত জাগো নিউজকে বলেন, ‘কারখানা এলাকায় বাসা ভাড়া বেশি হওয়ায় বেশিরভাগ শ্রমিকই দূরে থাকেন কম ভাড়ার বাসায়। আগে গণপরিবহনের মাধ্যমে দূরের শ্রমিকরা কারখানায় এসে কাজ করতে পারত। কিন্তু এখন তা বন্ধ। আবার কারখানাগুলো পরিবহন না রাখায় শ্রমিকদের আসা-যাওয়ায় বড় ভোগান্তি তৈরি হয়েছে। কিছু কারখানা নিজস্ব পরিবহনের ব্যবস্থা করলেও বেশিরভাগ কারখানাই করেনি। অনেকে ভাড়া বাঁচাতে একসঙ্গে ছোট গাড়ি-রিকশায় আসছেন। এতে আরও স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। পরিবহন ব্যবস্থার অভাবে কোনো শ্রমিক কারখানায় উপস্থিত হতে না পারলে তাকে চাকরিচ্যুতির হুমকি দিচ্ছে, বেতন কাটা হচ্ছে।’

শ্রমিক নেতা মোহাম্মদ ইয়াসিন বলেন, ‘লকডাউনে সবকিছু বন্ধ থাকলেও মালিকদের চাপে গার্মেন্টস চালু রেখেছে সরকার। মালিকদের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা ও কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা চালু রাখার কথা বলা হলেও আসলে মালিকরা তা মানছেন না।’

jagonews24

অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শ্রমিকদের করোনা ভ্যাকসিন ও চাকরির নিরাপত্তা প্রদানের আহ্বান জানান তিনি।

বিজিএমইএ বলছে, শিল্পের সব শ্রমিক (কর্মকর্তা-কর্মচারী) ও বিদেশিদের জরুরি ভিত্তিতে করোনার টিকা দেয়ার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকেও ইতিবাচক আশ্বাস পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে বিজিএমইএ’র পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা পোশাক খাতের সব শ্রমিকের জন্য টিকা চেয়েছি। পাশাপাশি এ খাত সংশ্লিষ্ট বিদেশি বায়ারদের জন্যও টিকার কথা বলেছি। আমরা গত মাসে মৌখিকভাবে চেয়েছিলাম, কিন্তু সোমবার (৫ জুলাই) চিঠির মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানানো হয়েছে।’

এ বিষয়ে তৈরি পোশাক শিল্প উদ্যোক্তা এবং বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সর্বাত্মক বিধিনিষেধ চলছে দেশে। পোশাক কারখানাগুলো কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। আমরা নিজস্ব পরিবহনের মাধ্যমে দূরের শ্রমিকদের কারখানায় আনার ব্যবস্থা রেখেছি।’

jagonews24

তিনি বলেন, ‘যারা স্বাস্থ্যবিধি মানতে পারবে না তাদের কারখানা চালু রাখতে পারবে না। আমরা এবার কারখানা এবং কারখানার বাইরে শ্রমিকদের সার্বক্ষণিক মাস্ক পরতে উৎসাহিত করছি। এতে তারাও ইতিবাচক। যদিও কারখানায় এর আগেও কাপড়ের মাস্ক পরে থাকতে হতো। এবার আমরা খুব বেশি সতর্ক আছি শ্রমিকদের নিয়ে। আমরা শারীরিক দূরত্ব মেনেই তাদের কাজে রাখছি। সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা আছে। তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। দুপুরের খাবারের সময়ও একসঙ্গে বসানো হচ্ছে না শ্রমিকদের।’

লকডাউনে কিছু চালু থাকবে আর কিছু বন্ধ থাকবে এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিষেজ্ঞরা।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘খোলা এবং বন্ধের কারণে কোভিড-১৯ মানুষের মাঝে আরও বিস্তার লাভ করবে। মনে রাখতে হবে সর্বাত্মক বিধিনিষেধ কখনও ‘কোমল বা কঠোর’ হয় না। বিধিনিষেধে জরুরি প্রতিষ্ঠান ছাড়া সবকিছু বন্ধ থাকবে। সেটা কারখানা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হতে পারে। এতে সংক্রমণ কমে আসবে। আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে আরও কঠোর হতে হবে।’

ইএআর/এমএইচআর/এসএইচএস/জেআইএম