ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

জটিলতায় ধুঁকছে রাবার ড্যাম নির্মাণ প্রকল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৩:৪৭ পিএম, ২১ জুন ২০২১

কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের জন্য রাবার ড্যাম নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে তিনটি রাবার ড্যাম নির্মাণের কথা থাকলেও তা করতে ব্যর্থ হয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। সেই তিনটি রাবার ড্যাম এখন পিরোজপুর, ঝালকাঠি ও নেত্রকোনায় নির্মাণ করা হচ্ছে।

কেবল তাই নয়, শুরু থেকেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন নিয়ে নানা জটিলতায় ভুগছে বিএডিসি। ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের জুনে। কিন্তু তার মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠানটি। এরপর প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। তারপরও প্রকল্পটি শেষ হচ্ছে না। এবার প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে এর উদ্যোক্তা কৃষি মন্ত্রণালয়।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রকল্পটি শুরু থেকেই জটিলতায় ভুগছে। এ প্রকল্পের আওতায় মোট ১০টি রাবার ড্যাম নির্মাণের কথা ছিল। তার মধ্যে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে নির্ধারিত তিনটি সাইটে রাবার ড্যাম নির্মাণ করতে পারেনি বিএডিসি। পরে ২০১৯ সালের ২ জুলাই প্রথম সংশোধনীর অনুমোদন নিয়ে সেই তিনটি রাবার ড্যাম পিরোজপুর, ঝালকাঠি ও নেত্রকোনা জেলায় নির্মাণের উদ্যোগ নেয় তারা। এছাড়া প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ১৭২ কোটি টাকা। প্রথম সংশোধনীতে তা বাড়িয়ে করা হয় ১৭৩ কোটি ২ লাখ টাকা। কিন্তু দ্বিতীয় সংশোধনীতে তা আবার ৫ দশমিক ২৯ শতাংশ বা ৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা কমিয়ে ১৬৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা মনে করেন, প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই ভালোভাবে না করলে এবং অসৎ উদ্দেশ্য থাকলে সাধারণত এ ধরনের সমস্যা হয়।

jagonews24

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনীর কারণ হিসেবে পরিকল্পনা কমিশনকে বিএডিসি বলেছে, প্রথম সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পে নতুন অন্তর্ভুক্ত ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও নেত্রকোনা জেলায় তিনটি রাবার ড্যাম নির্মাণের লক্ষ্যে ২০১৯ সালের মার্চে দরপত্র আহ্বান করা হয়। তার মধ্যে পিরোজপুর ও নেত্রকোনা জেলায় রাবার ড্যাম নির্মাণের কার্যাদেশ যথাসময়ে দেয়া হলেও দরপত্র প্রক্রিয়ায় আইনগত জটিলতার কারণে ঝালকাঠিতে ড্যাম নির্মাণের কার্যাদেশ দিতে দেরি হয়। পরে আইনগত জটিলতা সমাধান করে ২০২০ সালের নভেম্বরে কার্যাদেশ দেয়া হয় এবং এর বাস্তব অগ্রগতি ১০ শতাংশ।

জানা গেছে, ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচ মাস রাবার ড্যাম নির্মাণ কাজের উপযুক্ত সময় এবং একটি রাবার ড্যাম নির্মাণে দুটি মৌসুম প্রয়োজন হওয়ায় কার্যাদেশ মোতাবেক ঝালকাঠি জেলায় রাবার ড্যাম নির্মাণ সম্পন্ন করতে অতিরিক্ত এক বছর সময় প্রয়োজন।

তাছাড়া ২০২০ সালের মার্চ থেকে করোনা মহামারির কারণে মাঠ পর্যায়ে কারিগরি জনবলের অপ্রতুলতা থাকায় ও প্রকৌশলীরা নিয়মিত সাইট পরিবীক্ষণ করতে না পারায় পিরোজপুর ও বান্দরবান জেলায় রাবার ড্যাম নির্মাণকাজ সাময়িক বন্ধ রাখা হয়। ফলে এ কাজ সম্পন্ন করতে অতিরিক্ত কিছু সময়ের প্রয়োজন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ এক বছর বাড়ানো প্রয়োজন।

এছাড়া রাজস্ব বা মূলধন খাতের বিভিন্ন কার্যক্রমের পরিমাণ ও ব্যয় হ্রাস-বৃদ্ধির মাধ্যমে সার্বিক প্রকল্প ব্যয় ৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা কমানোর জন্যও প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছে বিএডিসি।

বিএডিসির কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের নদী-নালার মাধ্যমে বর্ষা মৌসুমে পর্যাপ্ত পানি প্রবাহিত হলেও শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রবাহের পরিমাণ কম থাকায় পানির অপ্রতুলতার কারণে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে খাল-নদী-পাহাড়ি ছড়া পুনঃখনন করে উপযুক্ত সেচ অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে পানি সংরক্ষণ করে শুষ্ক মৌসুমে সেচ কাজে ব্যবহার করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণের একটি অন্যতম পদ্ধতি হচ্ছে রাবার ড্যাম নির্মাণ। বিশেষ করে দেশের প্রত্যন্ত ও পাহাড়ি এলাকায় নদী-খাল-পাহাড়ি ছড়ায় রাবার ড্যাম নির্মাণের মাধ্যমে পানি সংরক্ষণ করে সেচ প্রদান করা সম্ভব। এসব বিবেচনায় নিয়ে একনেক প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছিল ২০১৫ সালের ২২ ডিসেম্বর।

jagonews24

বিএডিসি মনে করে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি নদী বা পাহাড়ি ছড়ায় রাবার ড্যাম নির্মাণ করে ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে ১২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদান করে বছরে অতিরিক্ত প্রায় ৫৫ হাজার ১২৫ মেট্রিক টন খাদ্য-শস্য উৎপাদন করা সম্ভব। পাশাপাশি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে রাবার ড্যাম পরিচালনা বা রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম শক্তিশালী করলে ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

বর্তমানে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া ও আনোয়ারা, কক্সবাজারের চকরিয়া, বান্দরবানের সদর ও নাইক্ষ্যংছড়ি, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার, হবিগঞ্জ সদর, নেত্রকোনার কলমাকান্দা, পিরোজপুরের নাজিরপুর ও ঝালকাঠির নলছিটিতে রাবার ড্যাম স্থাপন করা হচ্ছে।

প্রকল্প সূত্র আরও জানিয়েছে, প্রকল্পটির আটটি প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবে পাঁচটি অপরিবর্তিত রয়েছে এবং তিনটিতে পরিবর্তন এসেছে। তার মধ্যে রাবার ড্যাম অবকাঠামো নির্মাণ আটটি, হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম নির্মাণ দুটি, ৩৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ, ড্যাম ব্যাগ আটটি, ৭৫০ টন সিট পাইল কেনার কার্যক্রম দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। নদী বা খাল পুনঃখনন প্রথম সংশোধনীতে ছিল ৩০ কিলোমিটার, দ্বিতীয় সংশোধনীতে তা বাড়িয়ে ৫০ কিলোমিটার করার প্রস্তাব করা হয়েছে। জলাধার বা রেগুলেটর ১২টি নির্মাণ অনুমোদন প্রথম সংশোধনীতে থাকলেও দ্বিতীয় সংশোধনীতে তা বাড়িয়ে ১৪টি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সর্বশেষ ভূমি অধিগ্রহণ চার একর থেকে কমিয়ে ১ দশমিক ৬০ একর করার প্রস্তাব করা হয়েছে দ্বিতীয় সংশোধনীতে।

jagonews24

এ প্রসঙ্গে বিএডিসির সদস্য পরিচালক (ক্ষুদ্রসেচ) মো. জিয়াউল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনের বিষয়টি কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাস হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনেও কাজ হয়ে গেছে। এখন পরিকল্পনামন্ত্রীর সই হলেই দ্বিতীয় সংশোধন অনুমোদন হয়ে যাবে।’

বারবার সংশোধনীর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাবার ড্যাম নির্মাণের একটা টেন্ডারে একজন কাজ না পেয়ে উচ্চ আদালতে মামলা করেছিলেন। মামলা করায় ওই রাবার ড্যাম নির্মাণকাজ আটকা পড়েছিল। আদালত সিদ্ধান্ত না দেয়া পর্যন্ত কাজ হচ্ছিল না। এখন আদালত রায় দিয়েছেন। যে ব্যক্তি আগে কাজ পেয়েছিলেন, তিনিই কাজটি পেয়েছেন। যিনি বিপক্ষ নিয়ে মামলা করেছিলেন, তিনি কাজ পাননি।’

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের তিনটি রাবার ড্যাম নির্মাণ না করতে পারার বিষয়ে জিয়াউল হক বলেন, ‘আমাদের তিনটি সাইট এলজিআরডি করে ফেলেছিল। আমাদের যেগুলো করার কথা চট্টগ্রাম এলাকায়, সেগুলো এলজিআরডি করে ফেলেছিল।’

এসব কারণে প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর প্রয়োজন পড়েছে বলেও উল্লেখ করেন বিএডিসির এ সদস্য পরিচালক।

পিডি/এমআরআর/এইচএ/এমএস