এবারের বিজয়েও প্রকাশ হলো না মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা
নতুন করে আবেদনকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বরের আগে প্রকাশ করার কথা ছিল। বছর পেরিয়ে আবারো বিজয়ের মাস ডিসেম্বর এসেছে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশে কোনো সাড়া নেই।
মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতায় ফের অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে আবেদন করা মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়ন। উচ্চ আদালতে দায়ের করা রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে তালিকা প্রকাশে স্থগিতাদেশ জারি করলেও মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতার কারণেই বিষয়টির সুরাহা হচ্ছে না বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মতকর্তা নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা নির্ধারণ জটিলতায় উচ্চ আদালত তালিকা প্রকাশে স্থগিতাদেশ দিলেও মন্ত্রণালয়ের গাফলাতির কারণেই এর সমাধান হচ্ছে না।’
২০০৯ সালে মহাজোট সরকার গঠন করেই বাদ পড়া মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়ন করে, তা গেজেট আকারে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ নিয়ে বাদ পড়া মুক্তিযোদ্ধদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ে। সরকার নতুন মুক্তিযোদ্ধার তালিকা তৈরিতে কার্যকর উদ্যোগও গ্রহণ করে।
এরই ধারাবাহিকতা ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা চূড়ান্ত করা এবং ২৬ মার্চের মধ্যে তাদের সনদ প্রদান করার ঘোষণা দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা তৈরি করতে তৃণমূল পর্যায় থেকে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে সাত সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়।
ওই কমিটি বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলে ৪৪ হাজারসহ মন্ত্রণালয়ে ৬০ হাজার জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার পাশাপাশি নতুন করে ১ লাখ ৩৩ হাজার আবেদনকারীদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা। ঘোষিত সময়সীমা পার হয়ে গেলে সর্বশেষ গত এপ্রিলে তালিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু এর আগেই কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞা নির্ধারণের আবেদন জানিয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেন। আদালত তালিকা প্রণয়নের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেন। সেই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞা নির্ধারণের তাগিদ দেন আদালত।
কিন্তু স্থগিতাদেশের বছর পার হতে চললেও আজও বিষয়টির সুরহা হয়নি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল এবং মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের মধ্যকার সমন্বয়হীনতার কারণেই বিষয়টির তড়িৎ সমাধান হচ্ছে না বলে সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে তালিকা প্রকাশ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন আবেদনকারী মুক্তিযোদ্ধারা। আবেদনকারী মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমাদের হতাশ করছে। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম, গেজেটে নাম উঠবে এবং সত্যিকার মর্যাদা নিয়ে মরতে পারবো। কিন্তু এখন সে আশায় অনেকটাই গুড়েবালি। মনে হয়, বেঁচে থাকতে তালিকায় নাম দেখতে পাবো না।
বিষয়টি নিয়ে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) মহাপরিচালক মাহফুজার রহমান সরকারের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। তিনি বলেন, আদালতের কারণেই বিষয়টি আটকে আছে। তবে আমাদের আইনজীবীরা যথাযথভাবে আদালতের জবাব দিয়ে যাচ্ছেন। মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞাও নির্ধারণ করা আছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা দ্রুত বিষয়টি নিয়ে সাব কমিটি গঠন করতে যাচ্ছি। আদালতের বিষয়টি মীমাংসা হলে আবেদনকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যাচাই-বাছাই করে দ্রুত প্রকাশ হবে বলে মনে করি।
এএসএস/এসএইচএস/এএইচ/আরআইপি