ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

সুযোগ পেলেই ট্রাফিক আইন ভঙ্গের চেষ্টা

প্রকাশিত: ০৪:২০ পিএম, ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫

যানজট বাংলাদেশে জাতীয় সমস্যায় রূপ নিয়েছে। রাজধানীতে যানবাহনের সংখ্যা প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাওয়ায় এ সমস্যা তীব্র হচ্ছে। তবে যানজটের কারণ কি শুধুই অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ? নাকি অন্য কিছু? রাজধানীতে সৃষ্ট এই যানজটের বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ট্রাফিক জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আবু ইউছুফ। তার জোনে রয়েছে মগবাজার রেলগেট, কারওয়ান বাজার এফডিসি রেল ক্রসিং, নাবিস্কো, মহাখালী-গুলশান লিংক রোড, আফতাব নগর এবং হাতির ঝিলের মতো রাজধানীর স্পর্শকাতর কয়েকটি সড়ক। যানজটের মূল কারণ এবং এর সমাধান নিয়ে করা এই সাক্ষাৎকারটি নিচে তুলে ধরা হলো।

জাগো নিউজ : আপনার মতে ঢাকার যানযটের মূল কারণগুলো কী কী?
মো. আবু ইউছুফ : প্রথমত, ঢাকার সড়কে অতিরিক্ত সাইড ক্রসিং রয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন স্থানে যানবাহনের জটলা ও যানজটের সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয়ত, অধিকাংশ চালক লেন মেনে গাড়ি চালান না। অনেক সময় অপ্রয়োজনীয়ভাবে লেনও পরিবর্তন করেন। তৃতীয়ত, অবৈধ পার্কিং। সড়কে অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে সড়কের প্রশস্ততা কমে যায়। এগুলোই যানজটের মূল কারণ। তবে মৌসুমি কিছু সমস্যার কারণেও যানজট সৃষ্টি হয়। যেমন- বৃষ্টি, ফ্লাইওভার নির্মাণ অথবা রাস্তা ভেঙে যাওয়া।

জাগো নিউজ : তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের এলাকাসমূহে যানজটের পরিস্থিতি কেমন?
মো. আবু ইউছুফ : রাজধানীর অন্যান্য এলাকায় যে কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়, এখানকার সমস্যাও একই। অনেকেই লেন মেনে গাড়ি চলান না। এটি আমাদের একটি জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। মূলত একারণেই এই এলাকাগুলোতে যানজট দেখা যায়। এছাড়াও মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ ও রেল ক্রসিংয়ের কারণে এই সড়কগুলোর যানজট নিয়ন্ত্রণে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। তবে শিল্প এলাকা হওয়ায় এখানকার সড়কে অবৈধ পার্কিংয়ের সমস্যা কম।


জাগো নিউজ : মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজের জন্য আপনার এলাকার বিভিন্ন সড়ক প্রায়ই বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে যানজট প্রকোপ রূপ ধারণ করে। অনেক সময় বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা না করেই সড়ক বন্ধ করা হয়। পুলিশের সঙ্গে ফ্লাইওভার নির্মাণ কর্তৃপক্ষের এধরণের সমন্বয়হীনতায় যানজট বাড়ছে কিনা?
মো. আবু ইউছুফ : সমন্বয়হীনতা পুরোপুরি নয়। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয়েছে যে, ভোর থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত এবং বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পিক আওয়ারে যেন সড়ক বন্ধ করে কাজ না করা হয়। তবে তারা আমাদের সময়সূচি মেনে কাজ করতে পারে না। আমাদের সময়সূচি মেনে কাজ করলে যানজট অনেকটা কমে আসবে।

জাগো নিউজ : ফ্লাইওভার নির্মাণের সড়ক বন্ধ করার আগে যানবাহন চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা করা হয় কিনা?
মো. আবু ইউছুফ : কোনো সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি কিংবা নির্মাণ কাজ করলে ফ্লাইওভার কর্তৃপক্ষই বিকল্প ব্যবস্থায় গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করে দেবে। এটাই নিয়ম। তবে বিকল্প সড়কের জন্য যতটুকু জায়গা প্রয়োজন অনেক সড়কে সেই জায়গা নেই। তাই চাইলেও অনেক সময় বিকল্প রাস্তা তৈরির সুযোগ থাকে না।

জাগো নিউজ : রাজধানীর যানজট নিয়ন্ত্রণে সাধারণ নাগরিকের ভূমিকা কি বলে আপনি মনে করেন?
মো. আবু ইউছুফ : যানজট নিরসনে নাগরিকের ভূমিকা অনেক। তবে বাংলাদেশে এই ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকায় বিচিত্রতা দেখা যায়। ‘সব গাড়ির মামলা হবে, আমারটা ছাড়া।’ অনেক নাগরিকেরই এইধরনের প্রবণতা থাকে। সুযোগ পেলেই তারা ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করার চেষ্টা করে। রং সাইড (উল্টো পথ) দিয়ে আসে। রাস্তায় ছোটখাটো দুর্ঘটনা সংঘর্ষ হলে রাস্তার মাঝখানে তর্ক করে যানজট সৃষ্টি করা এখন প্রতিদিনের চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইন ভঙ্গের জন্য মামলা বা ব্যবস্থা নেয়ার সময়ই তারা নানা রকম তদবিরের চেষ্টা করে। নাগরিক যদি সচেতন হয় তাহলে পুলিশের কাজ আরও সহজ হয়ে যাবে।


জাগো নিউজ : হাতিরঝিলের বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাইক্রোবাস চলাচল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একটি জটিলতা কাজ করছে। এগুলো কখনো চলছে আবার কখনো রেকারিং করা হচ্ছে। এবিষয়ে পুলিশের অবস্থান কি?
মো. আবু ইউছুফ : হাতিরঝিলে এখন ভাড়ায় কোনো মাইক্রোবাস চলাচল করে না। যেহেতু অনুমোদন নেই তাই আমরা মাইক্রোবাস বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছি। তবে এতে জনগণের অনেক ভোগান্তি হচ্ছে। প্রায়ই তারা মাইক্রোবাস বন্ধের অভিযানে তাদের ভোগান্তির কথা বলে। এদিকে মাইক্রোবাসের বিকল্প হিসেবে হাতিরঝিল কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে পরিবহনের ব্যবস্থা করেছে। দ্রুত এগুলো চালু করার কথা রয়েছে।

জাগো নিউজ : ভবিষ্যতে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনকে কেমন দেখতে চান?
মো. আবু ইউছুফ : আমি ৯ মাস আগে এই জোনের দায়িত্ব নিয়েছি। আমি যেকোনো সমস্যার স্থায়ী সমাধানে বিশ্বাসী। যানজট নিয়ন্ত্রণে আমি এই এলাকার বিভিন্ন সড়কে ডাইভারশন দিয়েছি। বৈদ্যুতিক মটর কিনে সড়কের পানি সেচের ব্যবস্থা থেকে শুরু করে পুরাতন ভাঙা, উঁচুনিচু সড়ক সমানের কাজ করেছি। আমি তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনকে যানজটমুক্ত দেখতে চাই। সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক ইউলুপ তৈরির স্বপ্ন দেখিয়েছেন। আমি চাই রাজধানীর সড়কে বেশি বেশি ইউলুপ নির্মাণ করা হোক। ইউলুপ দিয়েই যানজটমুক্ত হবে রাজধানী।

এআর/একে/বিএ