ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

জয়পুরহাটে ভৌতিক বিদ্যুৎ বিলে অতিষ্ঠ গ্রাহকরা

প্রকাশিত: ০৭:২০ পিএম, ০২ ডিসেম্বর ২০১৫

জয়পুরহাটে ভৌতিক বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে নাভিশ্বাস অবস্থা দেখা দিয়েছে সাধারণ গ্রাহকের মাঝে। দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে এমন অরাজকতা বিরাজ করলেও প্রতিকারের জন্য স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগ কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ করেছেন এসব গ্রাহক।

জয়পুরহাট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাটে পিডিবির আওতায় ভারী শিল্প, ক্ষুদ্র শিল্প, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, কৃষি কাজে ব্যবহৃত পাম্প, পৌরসভা ও সাধারণ গ্রাহকসহ মোট প্রায় ২০ হাজার বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। এসব গ্রাহকদের জন্য ১০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ১০ মেগাওয়াট এর কিছু কম বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। তবে এখানে বিদ্যুৎ অপচয়ের পরিমাণ (সিস্টেম লস) ১৫ শতাংশ।

চাহিদা কিছুটা বেশি থাকলেও বর্তমানে বিদ্যুতের অবস্থা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশ ভালো বলে জানান গ্রাহকরা। জয়পুরহাট পৌর শহরের শান্তিনগর এলাকার সাধারণ গ্রাহক গোপাল চন্দ্র রাজভর, মিল্লাত হোসেন ও আদর্শপাড়া এলাকার রুহুল আমিন জানান, আগের চেয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা অনেক ভালো হলেও বিদ্যুৎ বিল নিয়ে সমস্যার অন্ত নেই।

সরেজমিনে জানা গেছে, জয়পুরহাটের অধিকাংশ গ্রাহকদের মিটার না দেখেই বা তাদের সঙ্গে কথা না বলেই প্রতি মাসে পিডিবি অফিস থেকে কম্পিউটারে ইচ্ছামতো টাইপ করা বিলপত্র গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে, যা শুধু অসঙ্গতিপূর্ণই নয়, রীতিমতো হিমশিম খাওয়ার মতো অবস্থা।

জয়পুরহাট শহরের পৃথিবী কমপ্লেক্স মার্কেটের ব্যবসায়ী মাজেদুর রহমান অভিযোগ করেন, তার পুরাতন (অ্যানালগ) মিটারের সর্বশেষ রিডিং ছিল ১১ হাজার ৭৩৩ ইউনিট। এ সময় তাকে ১১ হাজার ৯৫০ ইউনিটের বিলপত্র দেয়া হয়েছে। যেখানে ২১৭ ইউনিট বাড়িয়ে বিল পরিশোধ করতে হয়েছে। গত ১৩ মে নতুন মিটার লাগানোর পর এখনো ওই উদ্বৃত্ত ইউনিটগুলো সমন্বয় করা হয়নি।

হাসপাতাল রোডের জাহাঙ্গীর আলম, বিশ্বাসপাড়া এলাকার মেহের পরওয়ার রুবিসহ অনেক গ্রাহক অভিযোগ করেন, যাদের পুরাতন মিটার আছে সেই সব গ্রাহকদের ইচ্ছামতো বিল (এক ধরনের জরিমানা) ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে প্রভাবশালী গ্রাহকদের ছাড় দেয়া হলেও নিরীহ গ্রাহকরা অতিরিক্ত বিল দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

পূর্ব দেবীপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি একজন চায়ের দোকান করি, বাড়িতে ৬০ ওয়াটের তিনটি বাল্ব, গ্রীস্মকালে ২টি বৈদ্যুতিক পাখা ও একটি টেলিভিশন চলে। এতে করে ২/৩ মাস আগেও প্রতি মাসে তার ২১০ থেকে ২৭০ টাকা বিল আসতে। তারপর থেকে কোনো মাসে ৫’শ আবার কোনো মাসে ৬’শ টাকারও বেশি বিল দিতে বাধ্য হচ্ছি। কোনো মিটার রিডার বাড়ি বাড়ি এসে মিটার দেখে বিল করেন না বলেও তিনিসহ এলাকাবাসী অভিযোগ করেন।

জয়পুরহাট পিডিবির উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান পিডিবির সূত্রের তথ্য নিশ্চিত করে জানান, বিপুল সংখ্যক গ্রাহকদের জন্য মাত্র একজন স্থায়ী ও আটজন অস্থায়ী ভিত্তিতে (মাস্টার রোল) মোট ৯ জন মিটার রিডার এবং অস্থায়ী ভিত্তিতে বিল বিতরণকারী রয়েছে মাত্র সাতজন। এ অবস্থায় গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে পিডিবিকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।


গ্রাহক সাধারণের অভিযোগের ব্যাপারে তিনি জানান, মাত্র অল্প সংখ্যক জনবল নিয়ে প্রতি মাসে ২০ হাজার গ্রাহকদের কাছে যাওয়া শুধু কষ্ট সাধ্যই নয়, এটা অসাধ্যও বটে। একই কারণে গ্রাহকগণের সঠিক সেবা নিশ্চিত করতে সমস্যা হচ্ছে।

এছাড়া পুরাতন অ্যানালগ মিটার বা ত্রুটিপূর্ণ মিটার ও ৭ বছর অথবা ১০ হাজার ইউনিটের ওপর থাকলে তাদেরকে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী গড় বিল প্রদান করার জন্য মাইকিংসহ বিভিন্নভাবে প্রচার করে গ্রাহকদের অভিহিত করা হয়েছে। এরপরও যে সকল গ্রাহকরা অ্যানালগ মিটার ব্যবহার করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি ডিজিটাল মিটার প্রতিস্থাপনের কাজ চলছে।

গ্রাহকসেবাসহ এতোগুলো কাজ নিরবিচ্ছিন্ন বে বাস্তবায়ন করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। জনবল সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারলে গ্রাহকদের দুর্ভোগ লাঘব হবে বলে তিনি আশ্বাস্ত করেন।

রাশেদুজ্জামান/বিএ