ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

শাপ মোচনের বিজয়

প্রকাশিত: ০৩:১০ এএম, ০২ ডিসেম্বর ২০১৫

সাড়ে চার দশকে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। সাধারণের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্খার প্রতিফলন নিয়ে প্রশ্ন আছে, আছে বিতর্ক। পাকিস্তানের দীর্ঘ ২৩ বছরের শাসন ও শোষণের হাত থেকে পূর্ব বাংলার জনগোষ্ঠির মুক্তির তাগিদে যে যুদ্ধ, তা আজও শেষ হয়নি। বিশেষ করে অর্থনৈতিক মুক্তির যুদ্ধে নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন অদম্য মানুষেরা। শত প্রতীকূলতার মধ্যেও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
 
সফলতা আর ব্যর্থতার পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ বিজয়ের ৪৪ বছরে পা রাখছে আগামী ১৬ ডিসেম্বর। এই সময়ে উল্লেখযোগ্য যতগুলো অর্জন, তার মধ্যে জাতি হিসেবে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে গর্ব করার মতো অন্যতম ঘটনা।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে জাগো নিউজকে বলেন, “এই সময়টির অপেক্ষায় জাতিকে দীর্ঘ ৪৪ বছর প্রহর গুণতে হয়েছে। যুদ্ধপরাধীদের বিচারের মধ্য দিয়ে আমরা জাতিকে অভিশাপমুক্ত করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি।”

মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধীদের এ দেশে বিচার হতে পারে, তা ছিল এক সময় কল্পনাতীত। যারা বাংলাদেশ জন্মের বিরোধীতা করে নানা অপরাধ সংঘটিত করেছিলো, তারাই বাংলাদেশ সৃষ্টির পর রাজনৈতিক পৃষ্টপোষকতা পেয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয়। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের কেউ কেউ নানা সময় সরকারের মন্ত্রীসভায় যোগ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকারও করতে থাকে। তবে এসব মানবতাবিরোধী অপরাধীর দাম্ভিকতায় টান পড়তে থাকে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মধ্য দিয়ে জাতি আজ কলঙ্কমুক্তির পথে। অপরাধীদের ফাঁসি কার্যকরে শাপ মোচন হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের অভিশপ্ত অধ্যায়ের।
 
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের সাড়ে ৫ বছরের মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ১৯ মানবতাবিরোধীর বিচার সম্পন্ন হয়েছে। সকল ষড়যন্ত্র ও বাধা উপেক্ষা করে দ্বিতীয় ধাপে তৃণমূল রাজাকারদের বিচারও এগিয়ে চলছে। দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত ১৭ মামলায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষিত হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল-১ আটটি ও ট্রাইব্যুনাল-২ নয়টি মামলার রায় দিয়েছেন।

২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল-২ জামায়াতের সাবেক নেতা বাচ্চু রাজাকারের মৃত্যুদণ্ড দেয়ার মধ্য দিয়ে প্রথম রায় ঘোষণা করেন। ওই বছরের ১২ ডিসেম্বর রাত ১০টা ১ মিনিটে জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি কাদের মোল্লার ফাঁসির মধ্য দিয়ে রায় কার্যকরের সূচনা হয়, যার ধারাবাহিকতায় বিএনপির প্রভাবশালী নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদের ফাঁসিও প্রত্যক্ষ করে জাতি।
 
শীর্ষ এই দুই মানবতাবিরোধীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী শক্তির দম্ভ ভেঙ্গে যেন চুড়মার হয়ে যায়। আর এ কারণেই এবারের বিজয়ের মাস বিশেষ অর্থবহ বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জাগো নিউজকে বলেন, “এবারের বিজয় দিবস মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির কাছে ‘শাপ মোচনের দিবস’। মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধীদের বিচারের মধ্য দিয়ে গোটা জাতি আজ স্বস্তিতে, যেটি জাতিসত্ত্বা দাঁড় করাতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।”

তবে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, “এখনও অনেক পথ বাকি। যুদ্ধাপরাধীর বিচারের পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে পারলেই জাতি অভিশাপমুক্ত হবে। নানা বাধা-বিপত্তি আসবেই। আর তা মোকাবেলা করাই হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। যে চেতনা দিয়ে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা মোকাবেলা করা সম্ভব। আর তখনই বিজয়ের সত্যিকার স্বাদ উপলব্দী করা যাবে।”

এএসএস/আরএস/এআরএস/পিআর