ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

নিরানন্দে বিএনপি নেতাকর্মীদের ঈদ

খালিদ হোসেন | প্রকাশিত: ০২:৩৯ পিএম, ১৩ মে ২০২১

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে চেয়ে ব্যর্থ হওয়া, দলের অনেক সিনিয়র নেতার করোনায় আক্রান্ত হওয়াসহ অনেকের মৃত্যু বিএনপি নেতাকর্মীদের অনেকটা দুঃখিত করেছে। ফলে তাদের এবারের ঈদ কাটছে নিরানন্দে।

কয়েকদিন আগে করোনামুক্ত হওয়া খালেদা জিয়া এখনো বিপদমুক্ত নন বলে দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এরই মধ্যে তাকে বিদেশ পাঠানোর বিষয়ে সরকারের সঙ্গে দল ও পরিবারের দেন-দরবার ব্যর্থ হয়েছে। সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সাজাপ্রাপ্ত আসামির বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নেই। ফলে বিএনপি নেতাকর্মীরা আরও বেশি হতাশ হয়ে পড়েছেন।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, ডা. একেএম আজিজুল হক, ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, শরীফুল আলম, ভোলা জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর, সাবেক ছাত্রনেতা রকিবুল ইসলাম বকুল, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন মিডিয়া কমিটির সদস্য আতিকুর রহমান রুমন, অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল, বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের ফটোসাংবাদিক বাবুল তালুকদার প্রমুখ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সুস্থও হয়েছেন। আবার কারও কারও শারীরিক অবস্থার অবনতিও হয়েছে।

দলেন সিনিয়র নেতাদের অনেকে সপরিবারে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও তার স্ত্রী বিলকিস আক্তার হোসেন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এখন অনেকটা সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন। ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ও স্ত্রী রিফাত হোসেন এবং হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ও তার স্ত্রী কামরুন নাহার সৃষ্টি, দুই মেয়ে জান্নাতুন ইসি সূচনা ও অপরাজিতা খানও আক্রান্ত হয়েছেন। সেলিমুজ্জামান সেলিম ও তার স্ত্রী সাবরিনা শুভ্রা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অনেকটা সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলেও এখনো অনেক দুর্বল। তার স্ত্রী আরজুমান আরা বেগমও অসুস্থ।

দলের প্রবীণ স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ অন্য রোগে মারা গেলেও করোনার কারণে এরই মধ্যে মারা গেছেন- দলের ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এমএ হক, সাবেক মন্ত্রী টিএম গিয়াস উদ্দিন, ঢাকা উত্তর মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, কুমিল্লা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল খান, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. মামুন রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেন সরকার প্রমুখ।

দলীয় প্রধান খালেদা জিয়াসহ তার বাসার নয়জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তারা সবাই এখন করোনা নেগেটিভ। কিন্তু নানা শারীরিক জটিলতায় খালেদা জিয়া এখনো রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসাধীন। তার চিকিৎসার ক্ষেত্রে ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। সেই বোর্ডের অধীনের তার চিকিৎসা চলছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও কথা বলেছিলেন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে। অনেকেই আশা প্রকাশ করেছিলেন মানবিক কারণে হলেও সরকার বেগম জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ দেবেন। সেভাবেই বিএনপি ও তার পরিবার প্রস্তুতিও নিয়েছিল। সিঙ্গাপুর হয়ে লন্ডন যাওয়ার বিষয়ে ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু বিধি বাম, সরকার পরিবারের সেই আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন।

অন্যদিকে দীর্ঘ সময় কারাগারে থাকায় দলীয় চেয়ারপারসনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের কোনো সুযোগ ছিল না নেতাকর্মীরদের। এরপর সরকারের নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পেলেও সেই সুযোগ হয়নি দলের সাধারণ নেতাকর্মীদের। তবে দলের স্থায়ী কমিটির নেতারা ঈদের দিন রাতে অথবা পরদিন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সুযোগ পেতেন; এবার সে সুযোগও না মিলতে পারে।

নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাত না হলেও আত্মীয়-স্বজন ও ছেলে তারেক রহমান, পুত্রবধূ ও নাতনিদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে অনেকটা সময়ই কাটাতেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তবে এবার বেগম জিয়ার ক্ষেত্রে সেটি কতটা সম্ভব হবে তাতে সন্দেহ রয়েছে। কারাবন্দি হওয়ায় আগের বছরগুলোতে দুই ঈদের দিন তার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সুযোগ পেতেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

অন্যদিকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও কবে নাগাদ লন্ডন থেকে দেশে ফিরবেন জানা নেই কারও। এসব কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে ঈদ নিয়ে তেমন আনন্দ নেই।

দলীয় নেতাকর্মীদের ঈদ উদযাপন প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি যতটুকু খোঁজ নিয়েছি, যারা এলাকায় আছেন তারা সেখানেই জামাত আদায় করবেন। যারা ঢাকায় আছেন তারা ঢাকায় ঈদের নামাজ আদায় করবেন এবং দেশনেত্রীর জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া করবেন।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবার ঢাকায় আছেন, ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ঢাকায় ঈদের জামাত আদায় করবেন। আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ঈদ করবেন চট্টগ্রামে।

তিনি বলেন, সিনিয়রদের মধ্যে, আব্দুল্লাহ আল নোমান, মেজর হাফিজ উদ্দিন (বীর বিক্রম), ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর (বীর উত্তম), অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ডাক্তার এজেডএম জাহিদ হোসেন, খন্দকার মোক্তাদির, আমানউল্লাহ আমান, অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, মহিলা সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ঢাকায় ঈদের জামাত আদায় করবেন। গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, হারুন আল রশিদ, মোশাররফ, আমিনুল ইসলাম নিজ এলাকায় ঈদের জামাত আদায় করবেন।

এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, যুগ্ম-মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদক, সদস্য ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ঈদের জামাতে শরিক হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দেশবাসীর জন্য দোয়া করবেন।

শায়রুল বলেন, ‘ঈদের দিন নামাজের পর সকালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্যারের মাজার মহাসচিবসহ বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যগণ জিয়ারত করবেন। এরপর অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা জিয়ারত করবেন।’

এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে সারাদেশে সহস্রাধিক টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিমের সদস্যরা আমাদের দলে যারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বা গুম-খুনের শিকার হয়েছেন তাদের বাড়িতে গিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। এই শুভেচ্ছা কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এম ইলিয়াস আলীর বাসায় গিয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের খোঁজ-খবর নেবেন। ঈদের দিনে কেন্দ্রীয়ভাবে তেমন কর্মসূচি নেই। এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় কেবল স্থায়ী কমিটির সদস্যরা দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করবেন।’

কেএইচ/এমআরআর/এমকেএইচ