ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

খালেদার নতুন পরিকল্পনায় পরিবর্তন হচ্ছে শীর্ষ নেতৃত্বেও

প্রকাশিত: ০৩:৩৮ এএম, ০১ ডিসেম্বর ২০১৫

টানা ৯ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপি আবারও ঘুরে দাঁড়াতে চায়। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কাজও শুরু করেছেন দলটির চেয়াপারসন খালেদা জিয়া। সম্প্রতি লন্ডনে বড় ছেলে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারমান তারেক রহমানের সঙ্গে পরামর্শ করে নতুন কর্মপরিকল্পনাও চূড়ান্ত করেছেন তিনি। খালেদা জিয়ার কর্মপরিকল্পনা নিয়ে জাগো নিউজে প্রকাশিত হচ্ছে ধারাবাহিক প্রতিবেদন। আজ থাকছে দ্বিতীয় পর্ব।

তৃণমূলকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি দলের শীর্ষ পর্যায়েও পরিবর্তন আনার চিন্তা করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সেক্ষেত্রে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিকেও নতুন করে গড়তে চান তিনি।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে দলের দুর্বলতার জায়গাগুলো সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন খালেদা জিয়া। তাই ক্রমান্বয়ে এসব বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে চান তিনি। হারানো শক্তি ফিরে পেতে আরও কয়েকটি চমকও দেখাতে পারেন বিএনপি প্রধান।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বর্তমানে সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরাম তথা জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য রয়েছেন ১৬ জন। এদের মধ্যে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে পদাধিকার বলে কমিটিতে সদস্য রাখা হয়েছে।

দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তিতে বাধা না থাকলেও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্ত হননি তিনি। পাশাপাশি স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য এখনো কারাগারে রয়েছেন। তারা হলেন- ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও এম কে আনোয়ার।

এদিকে বর্তমানে প্রকাশ্যে আসছেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জে. (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও নজরুল ইসলাম খান।

এছাড়া নানা কারণে দৃশ্যপটে নেই দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গনি, এম শামসুল ইসলাম, বেগম সারওয়ারী রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস ও ড. আবদুল মঈন খান। আর সম্প্রতি মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর।

জানা গেছে, বর্তমানে স্থায়ী কমিটিতে থাকা কয়েকজন সদস্যের প্রতি নাখোশ খালেদা ও তারেক রহমান। এছাড়া বার্ধক্য ও বিশেষ কিছু কারণে অনেকেই দলের জন্য কাজ করতে পারছেন না। তাই স্থায়ী কমিটিতে শীর্ষ পর্যায়ে থাকার জন্য যারাই যোগ্য তাদেরকে দিয়ে নতুন করে কমিটি গঠন করবেন বেগম জিয়া।

তবে নতুন করে স্থায়ী কমিটিতে সদস্য অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার কোন বিষয়গুলোর ওপর জোর দিবেন জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সিনিয়র নেতা বলেন, বিষয়টি খালেদা জিয়া ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপর নির্ভর করবে।

এছাড়া চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ভাইস চেয়ারম্যানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতেও নতুন মুখ নিয়ে আসবেন খালেদা। আর যারা এসব পদে থেকেও সন্তোষজনক কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদরকে পেছনের সারিতে রাখারও পরিকল্পনা করছেন বিএনপি চেয়াপারনসন।

তবে গুরুত্বপূর্ণ এসব পদে যোগ্য ত্যাগী ও পরীক্ষিতদেরকেই বসাবেন খালেদা জিয়া। কূটকৌশল অবলম্বন করে কেউ পদ নেয়ার সুযোগ পাবে না বলেও জানিয়েছে গুলশান সূত্র।

এদিকে কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটি নিয়েও মহাপরিকল্পনা করছেন বেগম জিয়া। কার্যকরী কমিটিতে এমনও অনেক নেতা রয়েছেন যারা দীর্ঘদিন কোন কর্মসূচিতে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে অংশ নিচ্ছেন না। সেসব নেতাদেরকে নিয়েও চিন্তা-ভাবনা অব্যাহত রেখেছেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, বিএনপিকে এখন বেশ কয়েকটি বিষয়ে জরুরি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিশেষ করে সাংগঠনিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়া, কাউন্সিল, পৌর নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া, ৫ জানুয়ারি সরকারের বর্ষপূর্তিকে ঘিরে কর্মসূচি প্রণয়ন এবং ভবিষ্যৎ আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে সিদ্ধান্ত। এসব বিষয়ে এখনই সর্বস্তরের নেতা-কর্মীকে একটি সুস্পষ্ট ধারণা দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, দলের সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় গুণগত পরিবর্তন আনতে হলে নিষ্ক্রিয় নেতাদের বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত ‘তরুণ’ ও ‘ক্লিন’ ইমেজের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দেশবাসীকে দেখাতে হবে নতুন কিছু।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার জাগো নিউজকে বলেন, “ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) দেশে ফিরেছেন। এখন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে আরও গতি আসবে। আমাদের কাউন্সিলও করতে হবে। এ নিয়ে কাজও চলছে। আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাউন্সিল হতে পারে।”

দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আ স ম হান্নান শাহ (অব.) বলেন, “চিকিৎসা শেষে দলের চেয়ারপারসন দেশে ফিরেছেন। দল পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ার পাশাপাশি দ্রুত দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে চেয়ারপারসন আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। আমাদের তৃণমূল পুনর্গঠনের কাজ চলছে।”

একইসঙ্গে খালেদা জিয়া দেশে ফেরায় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে আরও গতি আসবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

স্থায়ী কমিটিসহ শীর্ষ পদে কাদেরকে রাখা উচিত- বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ও বিশিষ্ট রাষ্টবিজ্ঞানী ড. এমাজউদ্দিন অাহমদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলের বর্তমান পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া যাদেরকে যোগ্য মনে করবেন তারাই হয়তো স্থায়ী কমিটিসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন।

এমএম/এআরএস/আরএস/এমএস

ধারাবাহিক প্রতিবেদনের পরবর্তী পর্বে থাকবে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে খালেদা জিয়ার কড়া দৃষ্টি। এছাড়া ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে দলের বিশেষ পরিকল্পনা।

আরও পড়ুন