ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

ভর্তি কোচিং ও গাইডের রমরমা বাণিজ্য

প্রকাশিত: ১১:৩২ এএম, ২৯ নভেম্বর ২০১৫

ভর্তি মৌসুমকে টার্গেট করে ‘শিক্ষা বাণিজ্যে’ নেমেছেন শিক্ষক নামের এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর ভালো স্কুলে ভর্তির গ্যারান্টিসহ নানা চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে অলিগলিতে খুলে বসেছেন ভর্তি কোচিং সেন্টার। স্কুলের সামনে পসরা সাজিয়ে বসেছেন ভর্তি গাইডের।

অভিভাবকরাও সন্তানকে পছন্দের স্কুলে ভর্তির আশায় হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন কোচিং সেন্টারে। সন্তানের হাতে তুলে দিচ্ছেন একাধিক কোম্পানির ভর্তি গাইড। এমনই দৃশ দেখা গেছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সূত্র জানায়, রাজধানীতে ৩টি ফিডার শাখাসহ ৩৮টি সরকারি হাইস্কুল রয়েছে। বেসরকারি হাইস্কুল রয়েছে ৪৫৬টি। এরমধ্যে ৪০টি স্কুলে ভর্তি নিয়ে অভিভাবকরা রীতিমতো যুদ্ধে নেমেছেন।

দুই ক্যাটাগরির প্রায় ৫শ স্কুলে প্রতি বছর ৬ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর ভর্তি কার্যক্রম চলে। এরমধ্যে সরকারি হাইস্কুলেই ৭৫ হাজার শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবেদন করেন।

Bussinessএবার ৩০ নভেম্বর মধ্যরাত ১২টা ১মিনিট থেকে সরকারি ৩৮টি স্কুলের জন্য অনলাইনে ভর্তির আবেদন শুরু হবে। চলবে ১৩ ডিসেম্বর মধ্যরাত ১১টা ৫৯মিনিট পর্যন্ত।

দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তিতে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ১৭, ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর। এবার সরকারি স্কুলে ১০ হাজার ২৩৭ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভর্তি করা হবে। বেসরকারি স্কুলেও ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিভাবকদের পছন্দের স্কুলে এবার আসনের চেয়ে শিক্ষার্থী বেশি হওয়ায় ভর্তিতে তীব্র প্রতিযোগিতা হবে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকাতে অভিভাবকরা রীতিমতো যুদ্ধে নেমেছেন। সন্তানের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিএসসি) এবং অন্যান্য শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। খোঁজ খবর নিচ্ছেন স্কুলে। ভর্তি করাচ্ছেন কোচিং সেন্টারে।

অভিভাবকদের অসহায়ত্বকে পূুজি করে এক শ্রেণির শিক্ষক কোচিং সেন্টার ও ভর্তি গাইড বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন। রাজধানীর অলিগলিতে ঝুলিয়ে দিয়েছেন নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের ভর্তি বিজ্ঞপ্তির ব্যানার-ফেস্টুন। দেয়ালে সাঁটানো হয়েছে পোস্টার। পত্রিকার ভেতরে করে ঘরে ঘরে পাঠানো হচ্ছে লিফলেট। এসব লিফলেটে থাকছে কোচিং সেন্টারের স্কুলের শিক্ষক পরিচিতি, বিগত দিনে কোচিং করে কতজন নাম করা স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন সেসব শিক্ষার্থীদের ছবিসহ চটকদার বিজ্ঞাপন।

গত কয়েক দিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, একুশে, পরশ, প্রিপারেশন, ডিজিটাল ওরাল টেস্ট, ভাইভা কাম শর্টকার্ট, রিটেন গাইড, ভাইভা ও সাধারণ জ্ঞান, স্কলারসহ বাহারি নামের অসংখ্য ভর্তি গাইডের পসরা সাজিয়ে বসেছেন গাইড ব্যবসায়ীরা।

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখার সামনে কথা হয় একুশে ভর্তি গাইড বিক্রেতা মো. জব্বার মিয়ার সঙ্গে।

তিনি বলেন, একুশে ভর্তি গাইড পড়ে শিশুরা পছন্দের বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। এ কারণে প্রতি বছরই ভর্তি গাইডের প্রতি অভিভাবকদের আস্থা বাড়ছে। দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণির ভর্তি গাইড একশত থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন কয়েক শত গাইড বিক্রি হয় বলেও জানান তিনি।

একই কথা জানালেন গাইড বিক্রেতা সাইফুল হাসান ও সাধন কুমার বিশ্বাস। প্রতিষ্ঠানটির মূল ক্যাম্পাস মতিঝিল গিয়েও দেখা গেছে একই চিত্র। এছাড়া ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মিরপুর মনিপুর হাইস্কুল, ন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ নামকরা স্কুলের সামনেও বসেছে গাইড বইয়ের দোকান।

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে গাইড ক্রয় করার সময় খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা মো. রেজাউল করিম বলেন, ছেলে তাইফুল করিমকে এলাকার একটি কিন্ডার গার্ডেনে ভর্তি করেছিলাম। সেখানে পড়া লেখা ভালো না হওয়ায় এবার এই স্কুলে (মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ) দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করাতে চাই। প্রস্তুতি নেয়ার জন্য আগস্ট মাস থেকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়ে মতিঝিল কলোনির ব্রাইট কোচিং সেন্টারে ভর্তি করেছি। প্রতিমাসে এক হাজার টাকা করে দেই। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির জন্য একুশে ও পরশ ভর্তি গাইড দুটি কিনেছি।  

বনশ্রী এলাকার প্লাস পয়েন্ট কোচিং সেন্টারের বিজ্ঞাপনী ব্যানারে লেখা রয়েছে, ‘১ম শ্রেণিতে লটারি তাতে কী? ২য়  থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আপনার সন্তাকে তৈরি করুন। ভর্তি কোচিং এর প্রস্তুতির জন্য সবচেয়ে কার্যকরি প্রতিষ্ঠান হুমায়ুন স্যারের প্লাস পয়েন্ট ভর্তি কোচিং।’

এভাবে হলি ন্যাশনাল, নিউ সাকসেস, শাহীন কোচিং, ব্রাইটসহ অসংখ্য ভর্তি কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে রাজধানীর অলিগতিতে। দ্বিতীয় থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তির জন্য এসব কোচিং সেন্টারে ৭-৮ মাস আগে থেকেই অসংখ্য শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে।

প্লাস পয়েন্ট কোচিং সেন্টারের পরিচালক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, আমাদের কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা প্রতি বছরই আইডিয়াল, ভিকারুননিসা নূনসহ নাম করা স্কুলে ভর্তির সুযোগ পায়। এবারো তিন হাজার ৫শত টাকা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। মাসিক বেতন হিসেবে শ্রেণিভেদে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা নেয়া হয়।

এনএম/একে/এএইচ/এমএএস/পিআর