ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

সরকার হিসেব কষেই দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন করছে

প্রকাশিত: ০৩:৫৫ এএম, ২৭ নভেম্বর ২০১৫

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ। নির্বাহী সভাপতি-পিপিআরসি (পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার)। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা। রাজনীতি ও অর্থনীতির চলমান বিষয় নিয়ে সম্প্রতি জাগো নিউজ এর মুখোমুখী হন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সায়েম সাবু। আজ থাকছে দ্বিতীয় পর্ব।

জাগো নিউজ : দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এ নিয়ে আপনার মত জানতে চাই?
হোসেন জিল্লুর রহমান : বিশ্বে দলীয় এবং নির্দলীয় উভয় পদ্ধতিতেই স্থানীয় নির্বাচন হয়। পাশের দেশ ভারতেও দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয়। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় এই পদ্ধতির পরিবর্তন মুখ্য কোনো চাহিদা ছিল না। সুষ্ঠু নির্বাচন এবং কার্যকরী নির্বাচন কমিশন ছিল মুখ্য চাহিদা। দুটো পদ্ধতিই গ্রহণযোগ্য হতে পারে যদি আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন না থাকে।

জাগো নিউজ : সামনের স্থানীয় নির্বাচনে এর ফল কী হতে পারে?
হোসেন জিল্লুর রহমান : জনমনের চাহিদা গুরুত্ব দিয়ে সরকার এই সিদ্ধান্ত নেয়নি। সরকার বিশেষ হিসেব কষেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে আমি মনে করি।

Hossen-Zillur-rahman

জাগো নিউজ : কী হিসেব থাকতে পারে?
হোসেন জিল্লুর রহমান : ক্ষমতা আরও নিরঙ্কুশ করার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। রাজনীতি ওপর থেকে নিয়ন্ত্রিত হওয়ার প্রবণতা আরও প্রকট হবে। স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে সাধারণের ক্ষেত্র বন্ধ যায়ে যাবে।

জাগো নিউজ : জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে কথা বলতে চাই। বর্তমানে এটি গোটা বিশ্বের মাথাব্যাথা। আমাদের রাজনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বিষয়টি?
হোসেন জিল্লুর রহমান : গণতান্ত্রিক রাস্তা বন্ধ হলে অগণতান্ত্রিক রাস্তা ব্যবহার হতেই পারে। উগ্রবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠছে। জঙ্গিবাদ নিয়ে সরকার বাঘ আর রাখাল বালকের গল্প শোনাতে শোনাতে সত্যিকার বাঘই চলে এসেছে। তবে সবার আগে দেখতে হবে, জঙ্গিবাদের বিস্তার হচ্ছে কোথায়? যেখানে অস্থির রাজনীতি, সেখানেই উগ্রবাদের বিস্তার। বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি জঙ্গিবাদ বিস্তারের সহায়ক বলে মনে করি।

ধর্ম, জাতীয়তাবাদ প্রশ্নে বিভাজন বাড়ছে। দুই পক্ষের মধ্যেই অসহিষ্ণুতা লক্ষণীয়। একজন আরেকজনকে সহ্য়তা করতে পারছে না। বাঙালি নাকি মুসলিম এমন পরিচয় তুলে হিংসা প্রকাশ করা হচ্ছে। যেমন, ভারতে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর বলা হচ্ছে, তুমি ভারতীয় নাকি হিন্দু। সাম্প্রদায়িক এমন চেতনা থেকেই উগ্রপন্থা শক্তিশালী হয়। একইভাবে সমাজ, রাজনীতিতে জননিষ্ক্রিয়তা বাড়াতেও জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটছে।

ধর্ম, জাতীয়তাবাদ প্রশ্নে আপনি ১৯৪৭ সাল এবং ১৯৭১ সালের মধ্যে যত বিভাজন সৃষ্টি করবেন ততই জাতির জন্য ক্ষতি বলে মনে করি। যারা ১৯৪৭ সালে আন্দোলন করেছেন তারা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সময়ের ব্যবধানে দুটোই জরুরি ছিল। এটি অনুধাবনের বিষয়।

জাগো নিউজ : জঙ্গিবাদকে অনেকেই জাতীয় সমস্যা বলতে চাইছে। আপনি কি মনে করছেন?
হোসেন জিল্লুর রহমান : আমি তা মনে করি না। জঙ্গি নয়, জাতীয় সমস্যা রাজনীতি। জঙ্গিবাদ নিয়ে আলোচনা করার আগে এখন রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করতে হবে। সুষ্ঠু রাজনীতি না হলে আপনি কখনই উগ্রপন্থাকে মোকাবিলা করতে পারবেন না।

জাগো নিউজ : জঙ্গিবাদ সরকারের অভিযানকে কীভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন?
হোসেন জিল্লুর রহমান : সরকারের পদক্ষেপে অবধারিতভাবে কয়েকটি কাজ হবে। সরকারের এমন অভিযানে জঙ্গিবাদ আরও বিস্তৃত হবে। দ্বিতীয়ত অর্থনৈতিক স্থবিরতা আরও বাড়বে।

Hossen-Zillur-rahman

জাগো নিউজ : সমাধান কী হতে পারে?
হোসেন জিল্লুর রহমান : সমস্যার গভীরতা উপলব্ধি না করে সমাধানের পথ খোঁজা বোকামি হবে। সরকার তো কোনো সমস্যাই দেখছে না। মন্ত্রী, উপদেষ্টারা বলছেন, সব ঠিকঠাক আছে। ভাবখানা এমন যে, কয়েকদিন পর বাংলাদেশ দাতা দেশ হতে যাচ্ছে। কোন দেশকে সহায়তা করবে এমন ভাবনায় বিভোর।

জাগো নিউজ : শুধু হতাশাই। তার মানে বাংলাদেশের সম্ভাবনা কি থমকে যাচ্ছে?
হোসেন জিল্লুর রহমান : অবশ্যই বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থান, জনশক্তি সব কিছু নিয়ে আপনি সম্ভাবনার কথা বলতেই পারেন। কিন্তু একটি জাতিসত্তা দাঁড় করাতে বৃহৎ অর্থে যে সাহিত্য-সংস্কৃতির দরকার, তার প্রচণ্ড অভাব। স্বাধীন বাংলাদেশের আকাঙ্খা ধারণ করে এখানে কোনো সাহিত্য রচিত হয়নি। যা হয়েছে, তা ক্ষুদ্র রাজনীতি এবং ব্যক্তি স্বার্থে। ১৯৭১ সালে এখানে একটি বড় ধাক্কা লাগে। স্বাধীনতার পর এই ধাক্কা সামগ্রিকভাবে সামাল দেয়ার চেষ্টা হয়নি। যা হয়েছে ব্যক্তিগতভাবে। ব্যক্তি বুঝেছে, তাকে এগিয়ে যেতে হবে। রাষ্ট্র তাকে সহায়তা না করলেও এগিয়ে যেতে হবে। আর এটিই হচ্ছে, বাংলাদেশের সম্ভাবনা। খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রের ধার ধারেনি। অদম্য শক্তি নিয়ে সকল বাস্তবতা মোকাবিলা করার ঐহিত্য এদেশের মানুষের পুরনো।

কিন্তু মানুষ সমষ্টিগতভাবে এগিয়ে যেতে চায়। ’৯০-এর আন্দোলন তার প্রমাণ। আমরা আবারও থমকে গেছি। সহজ কোনো সমাধান আছে বলে মনে করি না। প্রার্থনা করেও সমাধান হবে না। ধারণাগত সমস্যার পরিবর্তন হওয়া জরুরি। সুস্থ চিন্তার মধ্য থেকে ঐকমত্যে আসতে পারাই সমাধান। চাপিয়ে দিয়ে কোনো সমাধান আসবে না। সত্যের ওপর দাঁড়াতে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস দরকার।

জাগো নিউজ : এমন প্রয়াসে সাধারণের অংশগ্রহণও তো দরকার?
হোসেন জিল্লুর রহমান : অবশ্যই। একদিন শুক্রবারে কামরাঙ্গীরচরে গিয়ে ছবি তুলে বসুন্ধরা সিটির সামনে এলাম। এখানেও ছবি তুললাম। একটি দারিদ্র্যপ্রবণ, আরেকটি অভিজাত এলাকা। কিন্তু দুটির মধ্যেই অসম্ভব মিল দেখলাম। দুটোই নোংরা এবং অপরিকল্পিত। আপনি ব্যক্তি উদ্যোগে বহুতল ভবন তৈরি করতেই পারেন। কিন্তু পরিকল্পিত বাসস্থান গড়তে হলে আপনাকে সামষ্টিক উদ্যোগ নিতেই হবে। এখানেই রাজনীতির ব্যর্থতা। সুশাসন, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে পারলেই সামষ্টিক উদ্যোগ কার্যকরী হয়।

এএসএস/এআরএস/এসকেডি/পিআর

আরও পড়ুন