বিসিকের প্লটে আগ্রহ বেড়েছে শিল্পোদ্যোক্তাদের
কয়েক দশক আগেও দেশের বিভিন্ন বিসিক শিল্পনগরীগুলোতে ফাঁকা পড়ে থাকত অধিকাংশ প্লট। কিন্তু এখন সে অবস্থা নেই। সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থাকায় এখন বিসিকের প্লটে আগ্রহ বাড়ছে ছোট-বড় শিল্পোদ্যোক্তাদের। বেশিরভাগ শিল্পনগরীতেই সবগুলো প্লটে গড়ে উঠছে শিল্প কারখানা।
বিসিকের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে সংস্থাটির ৭৬টি শিল্পনগরী রয়েছে। এগুলোতে প্লটের সংখ্যা ১০ হাজার ৯২২টি। এর মধ্যে ৪১২টি প্লট খালি রয়েছে অবরাদ্দকৃত হিসেবে বিভিন্ন জটিলতায়। বরাদ্দযোগ্য প্লট খালি রয়েছে মাত্র ২৯৬টি। সারা দেশের ৫৮৮৫টি শিল্প ইউনিট গড়ে উঠেছে বাকি প্লটগুলোতে। অধিকাংশ শিল্প ইউনিট একাধিক প্লট ব্যবহার করছে।
জানতে চাইলে বিসিকের শিল্পনগরী ও সমন্বয় শাখার উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী নাসরিন রহিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিসিকে প্লট নিলে একজন উদ্যোক্তা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন সহজেই। ড্রেনেজ ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের জন্য তাকে আলাদা করে বিনিয়োগ বা ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না। এছাড়া বিসিকে নিরাপত্তা বেশি, ঝুঁকি কম। এছাড়া বিসিকে প্লট নিলে শহরের কাছাকাছি কম খরচে কারখানা গড়ে তোলা যায়। ব্যক্তিগতভাবে গড়ে তোলা কারখানার থেকে খুব কম বিনিয়োগেই এসব করা যায়।’
তিনি বলেন, ‘বিসিকের প্লট কিস্তিতেও নেয়া যায়। আর উদ্যোক্তারা কারখানার জন্য সহজে ব্যাংক লোন পান। সবমিলিয়ে এখন ছোট-বড় সব ধরনের উদ্যোক্তারাই বিসিকে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।’
বিসিক বলছে, দেশের বড় বড় অনুকরণযোগ্য শিল্প বিসিকে রয়েছে। যার মধ্যে স্কয়ার, প্রাণ-আরএফএল, বিআরবি ক্যাবলস, হ্যামকো, ন্যাশনাল ইন্ড্রাস্ট্রিজ, ফরচুন সুজ, আলীম ইন্ডাস্ট্রিজ, গ্লোব ইন্ডাস্ট্রিজ উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া নিট ও তৈরি পোশাক শিল্পের প্রচুর কারখানা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার বিসিকে রয়েছে। পোল্ট্রি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের কারখানাগুলোও এখন বিসিকে হয়েছে। জামদানি এবং হোসিয়ারি শিল্প ছাড়াও চামড়া, এপিআই, হালকা প্রকৌশল ও বৈদ্যুতিক পণ্য, প্লাস্টিক, মুদ্রণ, কেমিক্যালস শিল্প রয়েছে বিসিকের শিল্পনগরীগুলোতে।
জানা গেছে, ২০১৯-২০২০ র্অথবছরে বিসিক শিল্পনগরীতে অবস্থিত ৭৯৯টি রফতানিমুখী শিল্প ইউনিটের মাধ্যমে রফতানিকৃত পণ্যের মোট মূল্য ৩২ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা। যা দেশের মোট রফতানির প্রায় ১১ শতাংশ। রফতানিকৃত পণ্যের মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ, তৈরি পোষাক, পাটজাত পণ্য, প্লাস্টিক, হস্তশিল্প, হোম টেক্সটাইল, কৃষিভিত্তিক পণ্যের অধিকাংশ কারখানা বিসিকে অবস্থিত। পাশাপাশি দেশে আমদানি বিকল্প যন্ত্রাংশের ৩০ শতাংশ বিসিক শিল্পনগরীগুলোতে তৈরি করা হচ্ছে বলে দাবি সংস্থাটির।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) গত ৫০ বছরে ৫৮টি শিল্পনগরী গড়ে তুলেছে। সংস্থাটির কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছিল মূলত ঋণদান কার্যক্রমের মাধ্যমে। ১৯৬০ -এর দশকের মাঝামাঝি এসে বিসিক শিল্পনগরী স্থাপন কার্যক্রম শুরু হয়। যার অংশ হিসেবে তৎকালীন ১৮টি জেলার প্রতিটিতে একটি করে মোট ১৮টি শিল্পনগরী স্থাপন হয়েছে।
স্বাধীনতার পর দেশে জেলার সংখ্যা বেড়ে ২০টিতে উন্নীত হলে বিসিকের শিল্পনগরীর সংখ্যাও বেড়ে দাঁড়ায় ২০টিতে। আঞ্চলিক বৈষম্য নিরসন করতে শিল্পায়নের ধারা অব্যাহত রেখে বর্তমানের বিসিক শিল্পনগরীর সংখ্যা ৭৬টি।
বিসিক চেয়ারম্যান মো. মোশতাক হাসান বলেন, ‘২০৪১ সালের টার্গেট নিয়ে বিসিক কাজ করছে। সেজন্য দেশের আট গুণ শিল্পায়ন বাড়াতে হবে। আর ক্রমাগত জমি পাওয়া উদ্যোক্তা ও বিদেশিদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে বছরে চারটি করে শিল্পপার্ক প্রস্তুত করার পরিকল্পনা রয়েছে বিসিকের। এর মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য অর্ধেক শিল্পপার্ক থাকবে প্রতিটি বিসিকে।’
শিল্পনগরীরর স্থান সংকুলান বিষয়ে মোশতাক হাসান বলেন, ‘আমরা চাই জায়গার অভাবে যেন কোনো শিল্পায়ন পিছিয়ে না যায়। পাশাপাশি বর্তমান শিল্পনগরীগুলো ২০ গুণ পর্যন্ত সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে বিসিকের। আগে যে বিসিক কচ্ছপ গতিতে ছিল তা এখন পাখির মতো উড়ছে।’
জানা গেছে, বর্তমানে ঢাকার আশপাশে বিসিকের প্লটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আর সবচেয়ে কম পার্বত্য জেলার বিসিকগুলোতে। ফলে নরসিংদী, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জে আরও কয়েকটি শিল্পনগরীর কাজ শুরু করেছে বিসিক।
বর্তমানে ধামরায়ের বর্তমান শিল্পনগরীর পাশে আরেকটি শিল্পপার্ক নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রণালয়ে। এছাড়া মুন্সিগঞ্জে চলমান কেমিক্যাল পার্কের পাশে দোহার রোডে ৪০০ একরের আরেকটি শিল্পপার্ক, নরসিংদীর বেলাবোতে ৪০০ একরের একটি এবং ২০০ একরের আরেকটি শিল্পনগরী হচ্ছে।
অন্যদিকে বগুড়ায় ৩০০ একর, যশোরে ৩০০ একর, সিরাজগঞ্জে ৪০০ একরের নতুন শিল্পনগরী তৈরি চূড়ান্ত হয়েছে। পাশাপাশি রংপুর, চট্টগ্রাম এবং পদ্মার পাড় শিবচরে শিল্পনগরীর জন্য জমি নিচ্ছে বিসিক। এছাড়া ভৈরবের শিল্পনগরীর কাজের জটিলতা কেটে নতুন করে কাজ শুরু হয়েছে।
শিল্পনগরীর পাশাপাশি বর্তমানে বিসিকের ৬৪টি জেলায় ৬৪টি শিল্প সহায়ক কেন্দ্র, চারটি আঞ্চলিক কার্যালয়, একটি লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয়, একটি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (স্কিটি), ১৫টি দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্র, একটি নকশা কেন্দ্র এবং ছয়টি মৌচাষ প্রশিক্ষণ ও বিভাজন কেন্দ্র রয়েছে। এগুলো শিল্পের প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।
এনএইচ/এমএইচআর/এসএইচএস/এমকেএইচ