ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

৫০ বছরে বিদ্যুৎখাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন

ইসমাইল হোসাইন রাসেল | প্রকাশিত: ০৭:২১ পিএম, ২৬ মার্চ ২০২১

সভ্যতার উন্নয়নের অন্যতম নিয়ামক বিদ্যুৎ। সেই বিদ্যুতে এখন অনেকটাই স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে বাংলাদেশের রয়েছে সব গৌরবোজ্জ্বল অর্জন। বিশ্বের অনেক দেশকেই পেছনে ফেলে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জন করে ইতোমধ্যে সারাবিশ্বের নজরে এসেছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশও লাভ করেছে বাংলাদেশ। এসব সাফল্যের পেছনে অবদান রয়েছে বিদ্যুৎ খাতের।

স্বাধীনতার আগের বিদ্যুৎ খাত
১৯০১ সালের ৭ ডিসেম্বর তারিখে আহসান মঞ্জিলে জেনারেটরের সহায়তায় বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে এই অঞ্চলে বিদ্যুতের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৩০ সালে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রথম বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা চালু হয় এবং পরবর্তীতে বাণিজ্যিকভাবে বিতরণ করার লক্ষ্যে ‘ধানমন্ডি পাওয়ার হাউজ’ স্থাপন করা হয়। ভারত উপমহাদেশ স্বাধীনতাকালে ১৯৪৭ সালে এই অঞ্চলে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণের ব্যবস্থা চালু ছিল। তারপর ১৭টি প্রাদেশিক জেলার কেবল শহরাঞ্চলে সীমিত পরিসরে বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। অধিকাংশ জেলায় কেবল রাতে সীমিত সময়ের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। ঢাকায় ১ হাজার ৫০০ কিলোওয়াট ক্ষমতার দুটি জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো।

jagonews24

১৯৪৮ সালে বিদ্যুৎ সরবরাহ, ব্যবস্থাপনা, পরিকল্পনা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারি পর্যায়ে বিদ্যুৎ অধিদফতর স্থাপন করা হয়। ১৯৫৯ সালে পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (ওয়াপদা) স্থাপন করার মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাতের নবদিগন্তের সূচনা হয় এবং এ খাত একটি কাঠামো লাভ করে। ১৯৬০ সালে বিদ্যুৎ অধিদফতরটি ওয়াপদার সঙ্গে একীভূত হওয়ার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ মাত্রা লাভ করে। সেসময়ে সিদ্ধিরগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও খুলনায় অপেক্ষাকৃত বড় আকারের বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। সিদ্ধিরগঞ্জে স্থাপন করা হয় ১০ মেগাওয়াট ক্ষমতার স্টিম টারবাইন বিদ্যুৎ কেন্দ্র। একই সময়ে, কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে কাপ্তাইয়ে ৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র ইউনিট স্থাপন করা হয়, যা সেই সময়ে বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত ছিল। ১৯৬২ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম ১৩২ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন চালু করা হয় যা এই দেশের বিদ্যুৎ বিকাশের মাইলফলক।

স্বাধীনতার পর বিদ্যুতের সোনালি যাত্রা
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭২ সালে রচিত সংবিধানের ১৬ নম্বর অনুচ্ছেদে নগর ও গ্রামাঞ্চলের জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করার উদ্দেশ্যে কৃষি বিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতিকরণের ব্যবস্থা, অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তর সাধনের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের অঙ্গীকার করা হয়। যার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার রূপকল্প নতুন রূপ পায়। ১৯৭৫ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিক-নির্দেশনামূলক ভাষণে বলেন, ‘বিদ্যুৎ ছাড়া কোনো কাজ হয় না, কিন্তু দেশের জনসংখ্যা শতকরা ১৫ ভাগ লোক যে শহরের অধিবাসী সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহের অবস্থা থাকিলেও শতকরা ৮৫ জনের বাসস্থান গ্রামে বিদ্যুৎ নাই। গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করিতে হইবে। ইহার ফলে গ্রাম বাংলার সর্বক্ষেত্রে উন্নতি হইবে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ চালু করিতে পারিলে কয়েক বছরের মধ্যে আর বিদেশ হইতে খাদ্য আমদানি করিতে হইবে না।’

jagonews24

স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডার ৫৯ (PO-৫৯) এর মাধ্যমে ১৯৭২ সালের ৩১ মে ওয়াপদাকে দুই ভাগে বিভক্ত করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) গঠন করেন। এর ফলে সমগ্র দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণের দায়িত্ব অর্পিত হয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ওপর। ১৯৭২-৭৫ এই সময়ে আশুগঞ্জ, ঘোড়াশাল ও সিদ্ধিরগঞ্জে তিনটি পাওয়ার হাব প্রতিষ্ঠা করা হয়। কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিদ্যুতের অপরিসীম গুরুত্বের বিষয় বিবেচনা করে ১৯৭৭ সালের অক্টোবরে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) সৃষ্টি করা হয়।

বিদ্যুৎ খাতে সাফল্য
১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করার পর বিদ্যুৎ খাত সংস্কার কর্মসূচির আওতায় বিদ্যুৎ খাতের কাঠামোগত সংস্কার করে উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ খাতে নানা সংস্থা ও কোম্পানি গঠন করা হয়। বিদ্যুৎ খাতের মতো জ্বালানি খাতেও কাঠামোগত সংস্কার করে নানাবিধ সংস্থা ও কোম্পানি গঠন করা হয়। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ১ হাজার ৬০০ থেকে ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়। ১৯৯৬ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য ‘প্রাইভেট সেক্টর পাওয়ার জেনারেশন পলিসি অব বাংলাদেশ’ প্রণয়ন করা হয়। যার ফলে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেসরকারি অংশগ্রহণ প্রায় ৫০ ভাগ। তাছাড়া বিদ্যুতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নানা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। পরে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন দিন বদলের সনদ ২০২১ ‘রূপকল্প’। তিনি নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দেন ২০২১ সালের মধ্যে সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানো হবে।

jagonews24

বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, ২০২১ এর অনেক আগেই বিদ্যুৎ এখন প্রায় সবার ঘরে পৌঁছেছে। সরকার বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় রেখে জ্বালানি বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, এলএনজি, তরল জ্বালানি, ডুয়েল-ফুয়েল, পরমাণু বিদ্যুৎ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণসহ বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে সবার জন্য নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট ও ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণকল্পে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যার সুফল মানুষ ইতোমধ্যে পেতে শুরু করেছে। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ১৮ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। ফলে বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ক্যাপটিভসহ ২৪ হাজার ৯৮২ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে এবং বিদ্যুতের সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ৪৭ থেকে ৯৯ ভাগে উন্নীত হয়েছে।

তাছাড়া ১৪ হাজার ১১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প নির্মাণাধীন, ২ হাজার ৯৬১ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২০টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি স্বাক্ষর প্রক্রিয়াধীন (LOI এবং NOA প্রদান করা হয়েছে) যেগুলো খুব শিগগিরই কার্যক্রম শুরু করবে। তাছাড়া ৬৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে আরও ১৫ হাজার ১৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পুরাতন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সংরক্ষণ, মেরামত বৃদ্ধির মাধ্যমে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

jagonews24

বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে নানাবিধ পরিকল্পনা
দেশে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও টেকসই জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে ২০ শতাংশ জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের একক জ্বালানি হিসেবে গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ক্রমান্বয়ে জ্বালানি বহুমুখীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রাকৃতিক গ্যাসের বিকল্প হিসেবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার নানাবিধ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। এ লক্ষ্যে জমির প্রাপ্যতা, পরিবহন সুবিধা এবং লোড সেন্টার বিবেচনায় নিয়ে পায়রা, মহেশখালী ও মাতারবাড়ি এলাকাকে পাওয়ার হাব হিসেবে চিহ্নিত করে একাধিক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: রামপাল ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল প্রজেক্ট, মাতারবাড়ি ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কোল প্রজেক্ট এবং পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রকল্প।

তাছাড়া যৌথ বিনিয়োগে মহেশখালী হাবে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় রূপপুরে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের উদ্যোগে পায়রা ২ হাজার ৬৬০ মেগাওয়াট থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউনিট-১ (৬২২ মেগাওয়াট) এবং ইউনিট-২ (৬২২ মেগাওয়াট)-এর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়েছে।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের দীর্ঘমেয়াদী মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা কার্যক্রমের আওতায় ২০৪১ সালের মধ্যে পাশের দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর আওতায় দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে জিএমআর-এর নির্মিতব্য জল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

jagonews24

ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে বাংলাদেশ, ভুটান এবং ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত পর্যায়ে স্বাক্ষরের অপেক্ষায় আছে। জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটি (জেএসসি) সভার সিদ্ধান্তের আলোকে দেশসমূহের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করবে।

এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যে সৌরবিদ্যুৎ ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর অধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে দালানের ছাদে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন জনপ্রিয় করার জন্য ‘নেট মিটারিং গাইডলাইন’ প্রণয়ন করা হয়েছে এবং প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদে সৌরবিদ্যুতের প্যানেল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

গত একযুগে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করার ফলে বর্তমানে মোট সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ১২ হাজার ৬৯২ সার্কিট কিলোমিটার এবং বিতরণ লাইনের পরিমাণ ৬ লাখ ৩ হাজার কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। বিদ্যুতের সামগ্রিক সিস্টেম লস ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ থেকে প্রায় ৫ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ১১ দশমিক ২৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

২০৩০ সালের মধ্যে মোট সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার সার্কিট কিলোমিটার এবং বিতরণ লাইনের পরিমাণ ৬ লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটারে উন্নীত করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। তাছাড়া আগামী এক বছরের মধ্যে দেশের সব উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ চলমান রয়েছে।

jagonews24

স্বাধীনতার ৫০ বছরে বিদ্যুৎ খাতের অর্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, ১৯৭২ সালে আমাদের যাত্রা শুরু হয়, তখন আমাদের বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা ছিলে ৫৪৭ মেগাওয়াট। জাতির জনক সদ্য স্বাধীন ধ্বংস প্রায় বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে প্রথম সংবিধানে গ্রামীণ জীবনমানে বিদ্যুতের যে প্রয়োজনীয়তা সেটা ১৬ নম্বর অনুচ্ছেদে সংযোজন করেন। স্বল্পতম সময়ে বঙ্গবন্ধু তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলেন, তার আগে শুধু কাপ্তাই জল বিদ্যুৎকেন্দ্রটিই ছিল। ১৯৭৫ সালে জাতির জনককে হত্যার পর বাংলাদেশ আবার পেছনে হাঁটা শুরু করে। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যখন দায়িত্ব নেন তখন বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ২ হাজার ১০৫ মেগাওয়াট। তিনি ক্ষমতায় এসে পিতার আদলে বিদ্যুৎ খাতকে নতুনভাবে সাজানোর চেষ্টা করেন।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অদক্ষতা ও লোকসান এড়াতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে ভেঙে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি করেন, ডেসকো করেন এবং বেসরকারি খাতে বিদ্যুতের বিনিয়োগের ব্যবস্থা করতে নীতিমালা প্রণয়ন করেন। ২০০১ সালে ক্ষমতা বদলের পর আবার বিদ্যুৎ খাত পিছে হাঁটা শুরু করে। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেয়ার আগে উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। ২০০৯ সালে তিনি ক্ষমতা গ্রহণের আগে দিনে আট-নয় ঘণ্টা লোডশেডিং হতো, মানুষের বিদ্যুৎ-পানির জন্য হাহাকার ছিল। তখন তিনি স্বল্প সময়ে বিদ্যুৎ বাড়ানোর জন্য বিশেষ আইন বিদ্যুৎ ও জ্বালালি দ্রুত সরবরাহ আইন করে মাত্র চার মাসে বিদ্যুৎকেন্দ্র করেন।

মোহাম্মদ হোসাইন আরও বলেন, বিদ্যুৎ খাতের উৎপাদন সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। ২১ হাজার মেগাওয়াট গ্রিডেই উৎপাদন হচ্ছে, অথচ চাহিদা মনে করছি সাড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াট হতে পারে। উৎপাদনে কোনো ঘাটিতে নেই, বরং চাহিদার আরও অনেক বেশি রয়েছে। কিন্তু উৎপাদন বেশি থাকলেও মানুষের অভিযোগ থাকে বিদ্যুৎ চলে যায়, বিদ্যুতের সারপ্লাস থাকার পরও শিল্প মালিকরা আমার গ্রিডে আসতে চায় না। গ্রাহকরা বিদ্যুতের বিভিন্ন বিল নিয়ে অসন্তোষে থাকেন, এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা কিভাবে আমাদের গ্রিডটাকে নিরবচ্ছিন্ন করা যায় সেজন্য নতুন নতুন সঞ্চালন লাইন, বিতরণ লাইন, সাব স্টেশন এবং আন্ডারগ্রাউন্ড ডিস্ট্রিবিউশনে যাচ্ছি। গ্রাহকদের ভূতুরে বিল থেকে বাঁচানোর জন্য আমরা স্মার্ট মিটার লাগাচ্ছি।

আইএইচআর/এমআরআর/এএসএম