ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

দায়সারাভাবে চলছে মানিকগঞ্জ জেলা তথ্য বাতায়ন

প্রকাশিত: ০২:৪৬ এএম, ২৪ নভেম্বর ২০১৫

অনিয়মিত হালনাগাদ, ভুলে ভরা ও অসম্পূর্ণ তথ্য এবং বাসি খবর দিয়েই চলছে মানিকগঞ্জ জেলা তথ্য বাতায়ন। এ কারণে তথ্য বাতায়ন জেলাবাসীর তথ্য ভাণ্ডার হয়ে উঠতে পারেনি। জনগণকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে তথ্যসেবা দেয়ার জন্য সরকার এ বাতায়ন চালু করলেও দায়সারাভাবে চলায় ক্ষুব্ধ সচেতন মহল।

মানিকগঞ্জ জেলা তথ্য বাতায়ন (www.manikganj.gov.bd) কতটা নিয়মিত হালনাগাদ হয় তার প্রমাণ মেলে হোম পেজেই। সোমবার এ সাইটটি ভিজিট করে দেখা যায়, নোটিশ বোর্ডে চারটি বাসি খবর ঝুলছে কয়েক মাস ধরে। খবরগুলো হলো, অক্টোবর মাসের জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। এটি পোস্ট করা হয় ২০ অক্টোবর। অন্যটি হলো ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে ৪ অক্টোবর থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা হবে। ১৭ আগস্ট পোস্ট করা মানিকগঞ্জ ফাউন্ডেশনের জেলা প্রশাসক সম্মাননা প্রদান এবং উন্নয়ন মেলার খবর দুটিও বাসি হয়েছে তিন মাস  আগে।

manikganj

স্কুলের মতো করে খবর বিভাগে একটি খবর যাচ্ছে `মানিকগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ অনুষ্ঠিত।’ অথচ অনুষ্ঠানটি শেষ হয়েছে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর।

এদিকে, বাতায়নে স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভাগে দেখা যায় পরিবার-পরিকল্পনা বিভাগে শুধু জেলা অফিসের ঠিকানা, ফোন নম্বর এবং ই-মেইল দেয়া রয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তার নাম নেই। সিভিল সার্জন হিসেবে এখনও নাম রয়েছে ডা. মো. শাহ আলমের। অথচ তিনি ঢাকায় বদলি হয়ে যাওয়ার পর এ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন আরও দুইজন।

এ বিষয়ে বর্তমান সিভিল সার্জন ডা. মো. ইমরান আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় নাকি সিভিল সার্জন কার্যালয় হালনাগাদ করেন তা আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি দ্রুত খোঁজ নিয়ে তথ্য হালনাগাদ করা হবে।

manikganj

জেলা তথ্য বাতায়ন অনুসন্ধান করে দেখা যায় জনপ্রতিনিধি বিভাগে সাত উপজেলার চেয়ারম্যানের মধ্যে মাত্র তিনজনের নাম ও মোবাইল নম্বর দেয়া রয়েছে। পুরুষ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দুইজন করে মোট ৪ জনের নাম রয়েছে। ৬৮টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে মাত্র ২১ জন চেয়ারম্যানের তালিকা রয়েছে। মেম্বরের নাম রয়েছে ৯ জনের।

কৃষি ও খাদ্য বিষয়ক বিভাগে দেখা যায় কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের একটি স্টিল ছবি দিয়ে কৃষি অফিসে কি কি সেবা দেয় হয় এসব লেখা রয়েছে। এছাড়া সাত উপজেলা কৃষি অফিসের নাম থাকলেও যোগাযোগের কোনো ঠিকানা অথবা ফোন নম্বর নেই। কৃষি উন্নয়ন ও কার্পোরেশন বীজ বিভাগটি  খালি পড়ে আছে। কোনো তথ্য নেই সেখানে। প্রাণি সম্পদের ঘরে জেলা কার্যালয় ১৪ শতাংশ জায়গার ওপর দু’তলা বিশিষ্ট ভবনের খবর থাকলেও আর কিছুই নেই। বাতায়নের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিভাগে জেলা ক্রীড়া অফিসের কোনো তথ্য নেই। নেই যোগাযোগের ঠিকানাও।

আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বিষয়ক বিভাগে আনসার ভিডিপি অফিসের ঠিকানা এবং তাদের কার্যাবলী থাকলেও যোগাযোগের কোনো ঠিকানা, ফোন নম্বর এবং কোনো কর্মকর্তার নাম নেই। দায়সারাভাবে তথ্য দেয়া হয়েছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরেরও। শুধু একটি সাইনবোর্ড দিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর মানিকগঞ্জ সার্কেল-১৮০০ লেখা রয়েছে এই বিভাগে। একই অবস্থা জেলা কারাগারেরও। একটি ছবি ছাড়া কারাগারের কোনো তথ্য এবং যোগাযোগের ঠিকানা নেই।


manikganj


জেলা থেকে প্রকাশিত মাত্র তিনটি দৈনিক ও দুটি সাপ্তাহিকের নাম রয়েছে তথ্য বাতায়নে। এর বাইরেও বেশ কয়েকটি পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশ হলেও সেগুলোর নাম নেই। আবার কয়েকটি পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করা হলেও তার কোনো তথ্য নেই।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি সাপ্তাহিক মানিকগঞ্জ পত্রিকার সম্পাদক-প্রকাশক গোলাম ছারোয়ার ছানু জাগো নিউজকে বলেন, পত্রপত্রিকার তালিকায় তার নিজের পত্রিকার নামটিও নেই। জেলায় কর্মরত বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকদের একটি তালিকা দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানালেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, তথ্য বাতায়ন থেকে নতুন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। দায়সারা গোছের পুরাতন তথ্যই রয়ে গেছে সাইটটিতে। তাই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উচিত এটাকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা। বাতায়নের নানা সমস্যার বিষয়ে দায়িত্বশীলদের বললেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেন না। নিয়মিত হালনাগাদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা অনেকটাই উদাসীন।

এদিকে শহরের বেউথা সড়কের পাশে নিজস্ব ভবনে জেলা নির্বাচন অফিস বছর খানেক আগে থেকে তাদের কার্যক্রম চালালেও তথ্য বাতায়নে এখনও ঠিকানা লেখা রয়েছে কালেক্টরেট ভবনের তৃতীয় তলায়। ই-সেবা বিভাগে তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তার ঘরে বিভিন্ন সরকারি অফিসের নামের তালিকা থাকলেও (তালিকায় অনেক প্রতিষ্ঠানের নাম একাধিক বার রয়েছে) মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠানের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তার নাম রয়েছে। এরা হলেন- জেলা সঞ্চয়/ব্যুরো মানিকগঞ্জ ঘরে রফিকুল ইসলাম এবং পরিবার-পরিকল্পনা কার্যালয় মানিকগঞ্জে ডা. মো. আমিন উদ্দিন।

অসম্পূর্ণ ও দায়সারা তথ্যের কারণেই জেলা তথ্য বাতায়ন মানুষের তথ্য ভাণ্ডার হয়ে উঠতে পারেনি বলে মত দিলেন মানিকগঞ্জ খান বাহাদুর আওলাদ হোসেন কলেজের প্রভাষক সাইফুদ্দিন আহম্মেদ নান্নু। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ডিজিটাল এ যুগে তথ্য বাতায়ন তথ্য সমৃদ্ধ থাকলে তরুণ প্রজন্মসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষ উপকৃত হতো। জেলার যে কোনো তথ্য পেতে সবাই সাইটটি ভিজিট করতো। কিন্তু দুঃখের বিষয় এ সাইটে তথ্য না থাকায় কেউ ভিজিট করতে চান না।

তথ্য বাতায়নের নানা ভুল-ভ্রান্তি স্বীকার করে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক রাশিদা ফেরদৌস জানান, বাতায়ন নিয়মিত হালনাগাদ করতে সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দেয়া হয়েছে। বাতায়নকে কিভাবে আরও সমৃদ্ধ করা যায় এ জন্য সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে একাধিকবার মতবিনিময় সভা করেছি। সমস্যা হচ্ছে বিভিন্ন বিভাগের আলাদা পাসওয়ার্ড থাকা সত্ত্বেও তারা নিয়মিত হালনাগাদ করছেন না। তিনি দাবি করেন, জেলা তথ্য বাতায়নে আগের চেয়ে অনেক বেশি তথ্য হালনাগাদ হয়েছে। আরও সমৃদ্ধ করতেও কাজ চলছে।

এসএস/এমএস