পোশাকশিল্পের স্বার্থে সবাইকে নিয়ে বিজিএমইএ চালাবো
দেশের রফতানি আয়ে ৮৪ শতাংশ অবদান পোশাক খাতের। এ খাতের মালিকদের শীর্ষ সংগঠন ‘তৈরি পোশাক মালিক ও রফতানিকারক সমিতি’ (বিজিএমইএ)। আগামী ৪ এপ্রিল সংগঠনটির নির্বাচন। নিয়ম অনুযায়ী, নির্বাচনে পরিচালনা পর্ষদের ৩৫ জন সদস্য নির্বাচিত হবেন, এর মধ্যে ২৬ জন ঢাকা অঞ্চল থেকে এবং ৯ জন হবেন চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে। নির্বাচিত পরিচালকরা পরে বিজিএমইএ সভাপতি নির্বাচিত করবেন।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে দুটি প্যানেল। এর মধ্যে ‘ফোরাম’র প্যানেল লিডার হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিজিএমইএ’র সাবেক সহ-সভাপতি ও হান্নান গ্রুপের চেয়ারম্যান এ বি এম সামছুদ্দিন।
বিজিএমইএ নির্বাচন, পোশাকশিল্প, সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে সামছুদ্দিন কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক ইয়াসির আরাফাত রিপন।
জাগো নিউজ: কীভাবে দেখতে চান আগামীর বিজিএমইএকে?
এ বি এম সামছুদ্দিন: আমি নিজের ব্যবসাকে গড়ে তুলেছি অনেক আদর-যত্নে। আমার অবস্থান থেকে আমার কারখানা আন্তরিকভাবে পরিচালনা করি, এখানে কোনো ঘাটতি রাখি না। কিন্তু আমাদের অনেক সহকর্মী ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। আবার আগামীতে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, এটা কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে, এ নিয়ে আমরা এখনো ধোঁয়াশার মধ্যে। তবে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে যেভাবে আমরা ব্যবসার প্রতি যত্নবান ছিলাম, বিজয়ী হলেও ঠিক সেভাবেই আমি বিজিএমইএকে পরিচালনা করবো। নতুন বাজার, পণ্যের বৈচিত্র্য আনা, দক্ষ সংগঠক, দক্ষ শ্রমিক গড়ে তুলতে চাই। এ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন একার পক্ষে সব সম্ভব হয় না। ব্যক্তিস্বার্থের পরিবর্তে বৃহৎ স্বার্থে সবাইকে নিয়ে বিজিএমইএ পরিচালনা করবো।
জাগো নিউজ: কোভিড-১৯ মহামারিকালে অনেক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বন্ধের উপক্রম হয়েছে, আবার অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে আপনার ভাবনা কী?
এ বি এম সামছুদ্দিন: আমরা এ রুগণ শিল্পকে বাঁচাতে সহযোগিতা করবো। যেন তাদের (ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান) কিছুটা আর্থিক সহযোগিতা করলে আবার উৎপাদনে আসতে পারে। এ নিয়ে ইতোমধ্যে একটা প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে সরকারের কাছে, সে আলোকে কাজ করবো। তাছাড়া কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, সেগুলো চালুর উদ্যোগ নেয়ার চেষ্টা থাকবে গুরুত্ব সহকারে। কোনো কারখানা যদি চালু করা সম্ভব না হয়, তবে তাদের একটা অর্থের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিতে চাই।
জাগো নিউজ: মাঝে মধ্যেই শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। আন্দোলন-সংগ্রাম, ইমেজ-সঙ্কট সবই সভাপতিকেন্দ্রিক, এ বিষয়ে কী বলবেন?
এ বি এম সামছুদ্দিন: আমাদের দেশে পোশাক খাতে যেসব শ্রমিক নেতা নেতৃত্ব দেন, তাদের কেউ চিকিৎসক, আইনজীবী বা অন্য কোনো পেশার সঙ্গে জড়িত। তাদের কেউ কোনো দিন পোশাক খাতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। এ কারণে কোনো কিছু না বুঝেই কারণে-অকারণে অনেক সময় আন্দোলন তৈরি হচ্ছে। আমার প্যানেল জয়লাভ করলে আমরা গণমাধ্যমকে দাওয়াত করবো কারখানা পরিদর্শনের জন্য। সেখানে বাস্তব প্রেক্ষাপটটি তুলে ধরবো, তাদের (শ্রমিক) কোনো সুবিধা-অসুবিধা আছে কি-না দেখবেন, লিখবেন গণমাধ্যমকর্মীরা, এটার ব্যবস্থা করবো। বাস্তব প্রেক্ষাপট আর শ্রমিক না হয়েও আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া এক নয়। যে কোনো সঙ্কট মোকাবিলায় শিল্পের সঙ্গে থাকবো, এতে ইমেজ সঙ্কট হলো কি হলো না- সেটা দেখার বিষয় নয়। আগে আমার শিল্পকে বাঁচাতে হবে।
জাগো নিউজ: এ শিল্পে নারীর অবদান অনেক বেশি। নারী শ্রমিকদের নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
এ বি এম সামছুদ্দিন: আমাদের আরএমজি সেক্টরের বেশিরভাগ শ্রমিকই নারী, তাদের অবদান অস্বীকার করা যাবে না। তাদের বেশিরভাগই দক্ষ শ্রমিক নন। আমরা নারী শ্রমিকদের আরও দক্ষ করে তুলতে চাই। শিল্পে এখন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। নতুন নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে যেন তারা চলতে পারে, এজন্য আমরা প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা দিতে চাই। প্রযুক্তিতে তাদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে চাই। মালিক ও কারখানা যেমন গুরুত্ব পাবে, শ্রমিকও তো আমাদের বাইরে নন, তারাও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। নারী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করার আছে, সেটা করতে চাই।
জাগো নিউজ: পণ্যের দাম নিয়ে ক্রেতা-মালিক অসন্তোষ তৈরি হয়, এ সমস্যা কাটাতে আপনার পদক্ষেপ কী হবে?
এ বি এম সামছুদ্দিন: দেখেন আমরা মালিকরাই বায়ারদের বেশি উসকে দিচ্ছি, তারা এ সুযোগ নিচ্ছে। আমাদের (মালিক) চলমান বায়িং হাউজকেন্দ্রিক মনোভাব দূর করতে হবে। না হলে পণ্যের ভালো দাম আমরা কখনোই পাবো না। আমি বললাম পণ্যের দাম ১০ টাকা দিতে, অন্য মালিক বায়ারকে ৯ টাকায় সেই পণ্য অফার করে। যদিও উৎপাদন খরচ কমছে না, বরং বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল বাড়ছে। এ অবস্থায়ও যখন লোকসান দিয়ে পণ্য বায়ারের হাতে তুলে দেই, তখন বায়ার সে সুযোগটি নেয়।আমি ব্যবসার শুরুতে ইউরোপের রাস্তায় রাস্তায় দোকান, শোরুম ঘুরে দেখেছি। দোকান থেকে নম্বর সংগ্রহ করে মালিকের সঙ্গে নিজে যোগাযোগ করেছি। আজ আমার বায়ারের অভাব নেই, মালের লোকসান নেই। তিন বছরে ৩৭ বায়ার জোগাড় করেছি। আমরা বায়ারের কৌশল থেকে মালিকপক্ষকে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেয়ার ব্যবস্থা করবো।
জাগো নিউজ: সঙ্কটকালের প্রস্তুতি কেমন থাকবে?
এ বি এম সামছুদ্দিন: কোভিড-১৯ এখন কোন দিকে যাবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। এটা বলতে পারি, যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় মোকাবিলা করতে প্রস্তুতি থাকবে। আমি চ্যালেঞ্জ নিয়েই কাজটি করে যেতে চাই। কারণ আমাদের প্যানেলে এবার এমন সব প্রার্থী দিয়েছি, যারা সত্যিকারের ব্যবসায়ী, সৎ ও দক্ষ। আমরা এ দক্ষ টিম নিয়ে আগামীতে যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকবো।
জাগো নিউজ: জয়ের ব্যাপারে কতোটা আশাবাদী?
এ বি এম সামছুদ্দিন: শুধু আমি নই, পুরো প্যানেল জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। কারণ আমরা এমন কোনো প্রতিশ্রুতি দেব না যেটা বাস্তবায়ন অসম্ভব হবে। আমরা বৃহৎ স্বার্থে চাহিদার আলোকে সব পূরণ করতে চাই। আমরা পরিচ্ছন্ন টিম নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বিজিএমইএ সদস্যরা আমাদের পূর্ণ প্যানেলকে জয়ী করবেন, কারণ আমরা তাদের সবাইকে গুরুত্ব দিয়েই এগিয়ে যেতে চাই।
ইএআর/এইচএ/এএসএম