চালকের কর্মঘণ্টা নির্ধারণসহ ৫ সুপারিশ দুদকের
সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগেও শৃঙ্খলা আসছে না সড়কে। ফলে বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চলাচলে প্রতিদিনই সড়ক-মহাসড়কে ঝরছে প্রাণ। পঙ্গুত্বও বরণ করতে হচ্ছে অনেককে।
সড়কে দুর্ঘটনা কমাতে ও শৃঙ্খলা ফেরাতে পাঁচ দফা সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির কাছে দেয়া দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন-২০১৯-এ সুপারিশগুলো তুলে ধরা হয়।
মহাসড়কে নসিমন-করিমন (ইঞ্জিনচালিত ভ্যান) নিষিদ্ধের প্রস্তাব
দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ১০ লাখের বেশি নসিমন, করিমন, ভটভটি, ইজিবাইকসহ বিভিন্ন ছোট যানবাহন সম্পূর্ণ অবৈধভাবে চলাচল করছে। এসবের অধিকাংশেরই নিবন্ধন নেই এবং কারিগরিভাবে ঠিক আছে কি-না তা যাচাই করা হয়নি। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে দুদক জানতে পেরেছে, এ জাতীয় অবৈধ যানবাহন চলাচলের জন্য অবৈধ আর্থিক লেনদেন হয়।
এ ব্যাপারে দুদকের সুপারিশ হলো, সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে কেবল স্থানীয় সড়কে এ ধরনের যানবাহন অস্থায়ী ভিত্তিতে চলাচল করতে পারে। তবে জাতীয় বা আঞ্চলিক মহাসড়কে এসব যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা যেতে পারে। স্থানীয় সরকার যেমন—ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা স্ব স্ব অধিক্ষেত্রের আয়তন এবং সড়কের দৈর্ঘ্যের ওপর ভিত্তি করে সাময়িকভাবে এসব (নসিমন, করিমন, ভটভটি, ইজিবাইক) যানবাহনের লাইসেন্স প্রদান করতে পারে। স্ব স্ব অধিক্ষেত্রের বাইরে এসব যানবাহনের চলাচল করার সুযোগ থাকবে না। এসব যানবাহন আমদানি নিষিদ্ধ করা যেতে পারে, যাতে পর্যায়ক্রমে ধীরে ধীরে ব্যবহার কমে আসে।
সড়কে ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচলে ঘটে দুর্ঘটনা
ফিটনেসবিহীন যান ধ্বংস এবং লাইসেন্স প্রদানে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে সুপারিশ
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিটনেসবিহীন যেসব ভারী যানবাহনের ফিটনেস সনদ হালনাগাদ নেই, সেগুলো কোনো অবস্থায়ই সড়ক-মহাসড়কে চলতে পারে না। প্রয়োজনে ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে এসব যানবাহন স্ক্র্যাপ করা যেতে পারে। সড়ক দুর্ঘটনায় চালকের বেপরোয়া মনোভাব, যানবাহনের ফিটনেস ত্রুটি, সড়কের নির্মাণ ত্রুটির পেছনে আছে প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধাচারের অভাব, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গোষ্ঠেীর চাঁদাবাজি-অনিয়ম-দুর্নীতি, বিশেষ করে লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের প্রাতিষ্ঠানিক অনিয়ম-দুর্নীতি।
চালকদের লাইসেন্স প্রদানের স্বচ্ছতা নিশ্চিতসহ সরকারি চালকদের মতো বেসরকারি পর্যায়ে চালকদের নিয়োগপত্র প্রদান বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।
নানা উদ্যোগেও শৃঙ্খলা ফিরছে না সড়কে
চালকদের কর্মঘণ্টা নির্ধারণের প্রস্তাব
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির বার্ষিক প্রতিবেদন আরও বলা হয়, গণপরিবহন চালকদের কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করা এবং তাদের জন্য কল্যাণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি চালক বা শ্রমিকদের ব্যবহার করে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে অনুপার্জিত আয় করার পথ রুদ্ধ করা প্রয়োজন। এছাড়া দুর্ঘটনা রোধে সড়কে যেসব স্থানে সাইন (প্রতীক) ও সংকেত নেই, সেসব স্থানে দ্রুত সাইন ও সংকেতের ব্যবস্থা নেয়া, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকসমূহ চিহ্নিত করে তা সোজা করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ভারী যানবাহনসহ সব ধরনের বাহনের লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন সম্পূর্ণ ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করা এবং লাইসেন্স ইস্যু-নবায়ন ও রুট পারমিট নবায়নে জবাবদিহি নিশ্চিতেরও সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।
আদেশ অমান্য করে চলছে নসিমন-করিমনসহ ছোট ছোট অবৈধ যানবাহন
এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, সড়ক পরিবহন খাতে সুপারিশের ঝুড়ি অনেক আগেই পূর্ণ হয়েছে। জনগণ সুপারিশমালা দেখতে চায় না। তারা সুপারিশের বাস্তবায়ন চায়, সড়কে শৃঙ্খলা চায়। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে যিনি আছেন, তিনি ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক (ওবায়দুল কাদের)। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি তিনি মন্ত্রণালয় দেখভাল করছেন। তার কাছেই যদি সুপারিশের স্তূপ হয়ে থাকে, তাহলে আসলে আমরা কোথায় যাবো? সুপারিশগুলো বিআরটিএ, ট্রাফিক বিভাগ বা অন্যদের বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও তারা সরকার বন্দনায় ব্যস্ত। একদিকে তারা বন্দনা করছে অন্যদিকে পকেট ভরছে। এই পরিস্থিতি থেকে যদি বের হওয়া না যায় তাহলে কোনো সুপারিশ আলোর মুখ দেখবে না।
এসএম/এমএসএইচ/এসএইচএস/এইচএ/জেআইএম