‘ভাষাসৈনিকদের নামে সড়ক চিনি না, এটি আমাদের দুর্ভাগ্য’
‘ভাষাসৈনিকদের নামে সড়ক অথচ আমরা জানি না। কখনও চোখেও পড়েনি এসব নামফলক, আসলে খেয়াল করিনি। তবে ভাষাসৈনিকদের নামে সড়ক হবে সবাই সেই নামে চিনবে, জানবে এমনটিই প্রত্যাশিত ছিল। আমাদের দুর্ভাগ্য, তাদের নামের সড়ক সম্পর্কে জানি না।’ ধানমন্ডি এলাকায় ভাষাসৈনিকদের নামে করা সড়ক সম্পর্কে কিছু না জানার কারণে তরুণ শিক্ষার্থী, চাকরিজীবীরা এভাবেই অনুভূতি প্রকাশ করেন।
রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের প্রবেশমুখে ভাষাসৈনিকের নামে ফলক থাকলেও সেই নামে সড়ক কেউ চেনেন না। কোনো কোনো সড়কের নামফলক অযত্ন অবহেলায় নষ্ট হয়ে আছে। আবার কোনোটি বিভিন্ন পোস্টারে ঢাকা পড়ে আছে। সড়কে চলাচলকারী পথচারী, হকার এমনকি বাসিন্দারাও ভাষাসৈনিকদের নামে সড়ক চেনেন না। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে রিকশা চালালেও কখনো এসব নামে কাউকে ডাকতেও শোনেনি রিকশাচালকরা। রিকশাচালকরা ধানমন্ডি ৭, ৮, ৯ এই নামেই চেনেন বা জানেন। এতে চালকরাও ভাষাসৈনিকদের নামের সড়কের সম্পর্কে কিছু জানেন না।
ভাষা আন্দোলনের সৈনিকদের নামে সড়ক সবার কাছে পরিচিত হবে মন্তব্য করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের শিক্ষার্থী রোজেন হোসেন বলেন, ‘আমরা যারা তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থী, তারা সবাই কমবেশি ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে জানি। হয়তো ভাষাসৈনিকদের নাম ধরে চিনি না। কিন্তু যদি তাদের চেনার সুযোগ থাকে সেটা তো অবশ্যই ভালো। একটি সড়কের নাম একজন ভাষাসৈনিকের নামে আছে অথচ আমরা জানি না এটা আমাদের জন্য দুভার্গ্যের। আপনি যে ‘ভাষাসৈনিক তোয়াহা সড়কের’ কথা বলছেন আমি তো কখনও শুনিনি। নামফলকও চোখে পড়েনি।’
ওই শিক্ষার্থীকে নামফলক দেখানোর পর বলেন, ‘আমরা এই নামফলকের সামনে দিয়েই যাতায়াত করি। কিন্তু কখনও খেয়াল করিনি যে আসলে কিসের নামফলক এটি। আসলে ঢাকায় যে যেভাবে লোকেশন সম্পর্কে ধারণা রাখে। এই ধরেন, কেউ একটি দোকান বা হাসপাতালের নাম মনে রেখে বাসে থেকে নেমে নিজ গন্তব্যে চলে যাচ্ছেন। আমরাও এ সড়কটি ধানমন্ডি ৯ এর এ নম্বর সড়ক হিসেবেই চিনি, জানি। কেউ আবার ইবনে সিনা হাসপাতাল সড়ক নামেও চেনেন।’
ধানমন্ডি ১৫ নম্বর সড়কের বাবস্ট্যান্ডে তরুণ বেসরকারি চাকরিজীবী রিমেলের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘ভাষাসৈনিকদের নামে সড়ক আছে এটা তো জানতামই না। আপনার কাছে শোনার পর নিজেরই খারাপ লাগছে। তারপরও জানতে পারলাম এটাই অনেক। আমি বলবো, ভাষাসৈনিকদের নামেই যেন সড়কগুলো পরিচিতি পায়, সেজন্য প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। যাতে পথচারী, রিকশাচালক বাসিন্দাসহ সবাই সড়কটি চিনতে পারেন।’
ভাষাসৈনিক তোয়াহা সড়কের সামনে (ধানমন্ডি ৯ এর এ নম্বর সড়ক) এক নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয়। জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভাই আমি তো কখনও এ নামই শুনিনি। ধানমন্ডি এলাকায়ই আমি টিউশনি করি। রিকশাচালক থেকে শুরু করে কেউই হয়তো জানেন না। তবে আমরা যদি ভাষা আন্দোলন ও ভাষাসৈনিকদের সম্পর্কে জানতে, বুঝতে চাই তাহলে অবশ্যই এ সড়কগুলোর নামের সঙ্গে পরিচিত হতে হবে। একই সঙ্গে সিটি করপোরেশনকে নামের প্রচার-প্রচারণার উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া বাসাবাড়ি ও দোকানের ঠিকানাগুলো এই ভাষাসৈনিকদের নামে লিখতে হবে। তাহলেই আশা করি, ভাষাসৈনিকদের নামে করা সড়কগুলোর পরিচিতি সবার মাঝে ছড়িয়ে যাবে।’
এওয়াইএইচ/ইএ/এসএইচএস/জেআইএম