দিশেহারা জাপা : সংগঠনিক কার্যক্রম স্থবির
রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক ভাবে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে চেষ্টা করেও সাংগঠনিক স্থবিরতা কাটাতে পারেননি দলটি। এতে নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা।
অভ্যন্তরীণ কোন্দল, সহযোগী সংগঠনের বেহাল অবস্থা, জেলায় মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি, নির্বাচন বর্জনকারীরা এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের বিভক্তির কারণেই দলের এ অবস্থা হয়েছে বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলীয় ৭৬ সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ১৭টি সম্মেলন হয়েছে। বাকিগুলো বছরের পর বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ রয়েছে। সেই সঙ্গে জেলা থেকে উপজেলা পর্যায়ে দলীয় কোন্দল তো আছেই। অনেক জেলায় দলীয় কার্যক্রম পরিচালনারও লোক নেই।
অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে প্রায় দুই বছর। একাধিকবার কেন্দ্রীয় সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নিয়েও দল গোছাতে না পারায় তা বাতিল করা হয়েছে। দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো একেবারেই নাম সর্বস্ব।
এদিকে, বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন প্রেসিডিয়াম সদস্যরাও। জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু মহাসচিব হওয়ার পর এখন পর্যন্ত একটি প্রেসিডিয়াম বৈঠক ডাকা হয়নি। কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিও নিস্তেজ। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের মধ্যে যুব সংহতি, মহিলা পার্টি, স্বেচ্ছাসেবক পার্টি, জাতীয় মৎসজীবী পার্টি, জাতীয় কৃষক পার্টি, জাতীয় ছাত্র সমাজ, জাতীয় শ্রমিক পার্টি, প্রাক্তন সৈনিক পার্টি, জাতীয় তাঁতী পার্টিসহ আরও কয়েকটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো এখন নামমাত্র টিকে আছে। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে এসব সংগঠনের কোনো তৎপরতা নেই। নেই কমিটিও।
জাপার একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, সামনের দিনগুলোতে জাপার সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে। একদিকে কেন্দ্রীয় বিরোধ। কয়েক ধারায় বিভক্ত দলের নেতারা। অন্যদিকে সাংগঠনিকভাবেও দিন দিন দুর্বল হচ্ছে দলটি।
দলীয় সূত্র বলছে, অনেক নেতা অন্য দলে যোগ দেয়ার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া নেতাদের মূল্যায়ন না করার অভিযোগ ও রয়েছে দলীয় প্রধানে বিরুদ্ধে।
অভিযোগ রয়েছে, একটি সিন্ডিকেটের আবর্তে রাজনীতি করছেন এরশাদ। তাদের কারণে দলীয় প্রধানের কাছে কেউ ভিড়তে পারছেন না। সাক্ষাৎ করাও কঠিন। সর্বোপরি কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো কর্মসূচি নেই দলটির। ক্ষমতা ও রাজনীতির মাঠে আপোস আপোস খেলায় বিরোধীদলের ভূমিকা থেকে দূরে সরে গেছে দলটি।
অভিযোগ আছে, অর্থের বিনিময়ে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে কথিত প্রভাবশালীদের দলে ভিড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে।
৪০ সংসদ সদস্যদের মধ্যে হাতেগুণা তিন থেকে চারজন ছাড়া কেউ এরশাদের কাছে আসেন না। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, এরশাদকে পরিচালনা করেন দলের তিনজন প্রভাবশালী নেতা। এই তিনজনের মধ্যে আছেন, জাতীয় পার্টির কোষাধ্যক্ষ ও এরশাদের ভাগ্নে মেজর (অব) খালেদ আখতার, মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ও যুগ্ম-মহাসচিব ( বর্তমানে ভারপাপ্ত মাহসচিব) রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ, নানা কারণে মূলত তাদের কাছেই জিম্মি সাবেক এই রাষ্ট্রপতির দল। এ নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের ক্ষোভের শেষ নেই।
সাম্প্রতি দলের সার্বিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে জাপার মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ বাবলু জাগো নিউজকে বলেন, আমরা সম্মিলিতভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এরই ধারাবাহিকতায় ১১ অক্টোবর রংপুর বিভাগ প্রতিনিধি সম্মেলন, ১৯ অক্টোবর চট্টগ্রাম জেলা দক্ষিণ, ২৬ অক্টোবর টাঙ্গাইল জেলা সম্মেলন করেছি। ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত হওয়ার কথাও জানান তিনি।
তবে চেয়ারম্যান এরশাদ একথা মানতে নারাজ। তিনি একাধিক জনসভায় বলেছেন, ‘জাতীয় পার্টির জনসমর্থন আগের চেয়ে বেড়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মাত্র ৪৯টি আসনে নির্বাচন করেছি। এসবের মধ্যে মাত্র ৩৪ আসনে জোটগতভাবে নির্বাচন হয়েছে। এতে ২৭টি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছে। আর কোনো দল এমন সাফল্য পায় নি।
জানা গেছে, ২০০৮ সালে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কাউন্সিল। এতে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ দলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে এখনো বহাল রয়েছেন সেই পদে। কিন্তু এরমধ্যে পার হয়ে গেছে প্রায় ছয় বছর।
সেই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে এখনো চলছে দলটির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। কাউন্সিল না থাকায় নেই নতুন কোনো নেতৃত্ব। নেতাকর্মীরা নিষ্ক্রিয়, মাঠ পর্যায়ে কেন্দ্রীয় কোনো কর্মসূচিও নেই। তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড একেবারেই স্থবির হয়ে আছে।
খবর নিয়ে জানা গেছে, যথাসময়ে কাউন্সিল না করার কারণে নির্বাহী কমিটির অধিকাংশ নেতাকর্মী নিষ্ক্রিয়। এমন অনেক কেন্দ্রীয় নেতা আছেন যারা দলটির কোনো কর্মসূচিতেই থাকেন না। আবার কেউ কেউ এরশাদের কাছে চেহারা দেখানো আর পোস্টার ও প্রচার কর্মকাণ্ডেই সীমাবদ্ধ।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, যেসব জেলা কমিটির মেয়াদ রয়েছে কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় সেসব কমিটিগুলোর সার্বিক তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
এএম/এসকেডি/এএইচ/এমএস