মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের নামে চলছে রমরমা ব্যবসা
মাদকের ভয়াল থাবা প্রতিনিয়ত গ্রাস করছে যুব সমাজকে। মাদকের ছোবলে ভাঙছে সংসার, ধসে পড়ছে সমাজ। এমন দুর্বিসহ বাস্তবতায় মাদকাসক্তদের আলোর পথ দেখানোর দায়িত্ব মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের। কিন্তু ‘বেড়া যদি ক্ষেত খায়!’ ঘটনার মতোই রাজধানীর বেশ কয়েকটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র সেবার বদলে করছে রমরমা ব্যবসা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে যে পরিমাণ মাদকাসক্ত মানুষ রয়েছে সে তুলনায় নিরাময় কেন্দ্র নেই। রাজধানীর পাঁচ শতাধিক মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের বেশির ভাগ অসাধু ব্যবসায়ীদের দখলে। তারা সেবার বিপরীতে করছেন ব্যবসা। সরকারের নিয়ম-নীতি না মেনে মাদকাসক্তদের চিকিৎসা সেবার নামে অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এ ধরনের ভুয়া মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র বন্ধ করার লক্ষ্যে কাজ করছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে র্যাব-২ এর উপ-পরিচালক মো. দিদারুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, রাজধানীতে প্রয়োজনের তুলনায় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র কম। এর সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রমরমা ব্যবসা করছেন। কিন্তু চিকিৎসা সুবিধা বলতে তাদের নেই কিছুই।
তিনি আরো বলেন, রোগীর ওপর শারীরিক নির্যাতন, মাদকের ব্যবসা পরিচালনা ও রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো অর্থ আদায় করার অভিযোগ অহরহই মিলছে। স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন ঢাকা উদ্যান ও চন্দিমা মডেল টাউন এলাকায় ‘নিউ তরী মাদকাসক্ত সেবা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র’এবং ‘শান্তি নীড় মাদকাসক্তি ও পুনর্বাসন কেন্দ্র’এ গুলোতে অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে।
সম্প্রতি র্যাব-২ কর্তৃক আটককৃতরা হলেন, মো. হেলাল উদ্দিন (৩৯), শহিদ হাছান (৩২) মো. মহসিন (৪৮), ফয়েজ আহম্মেদ (৪৬), ইমরান হোসেন (৪০) ও মো. সাইফুল্লাহ (৩০)। র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, আটককৃতরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ায় মোহাম্মদপুরের তিন মাদকাসক্ত সেবা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের চারজনকে ছয় মাস করে কারাদণ্ড এবং দুইজনকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ১০ দিনের মধ্যে ওই তিন মাদকাসক্ত ও পুনর্বাসন কেন্দ্রর মালিকদেরকে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে নিকটবর্তী মানসম্পন্ন হাসপাতালে হস্তান্তরের নির্দেশ প্রদানও করেন তিনি।
ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘নিউ তরী মাদকাসক্ত সেবা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র’এবং ‘শান্তি নীড় মাদকাসক্তি ও পুনর্বাসন কেন্দ্র’গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসা সুবিধা বলতে কিছুই নেই, রোগীর ওপর শারীরিক নির্যাতন করা হচ্ছে। ছোট ছোট কয়েকটি ঘর- নেই আলো বাতাসের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। তার মধ্যেই রান্না ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও। অপর্যাপ্ত চিকিৎসক। নেই পর্যাপ্ত নার্স এমনকি চিকিৎসা সরঞ্জামও। স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের লাইসেন্সও তাদের নেই! তারপরও ১০১ জন শিশু, পাগল ও বয়োবৃদ্ধসহ মাদকাসক্ত রোগী ভর্তি করে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প বসিয়েছে তারা।
এছাড়াও ফিউচার মাদকাসক্ত চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে নার্সিং কাউন্সেলিং হতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বয়/নার্স, কোনো ডাক্তার ও মনোচিকিৎসক নেই।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক প্রফেসর ডা. সামিউল ইসলাম (সাদী) জানান, অভিভাবকদের অভিযোগের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও র্যাব যৌথভাবে এ ধরনের অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। আরো অভিযান চলবে বলেও জানান তিনি।
জেইউ/এসএইচএস/এএইচ/এমএস