ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে ইন্টেরিয়র ব্যবসা

সাইফুল হক মিঠু | প্রকাশিত: ০৯:১৭ এএম, ২৮ নভেম্বর ২০২০

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে গত মার্চে সাধারণ ছুটি শুরু হলে স্থবির হয়ে পড়ে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। এতে ভাটা পড়ে সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্যে। অবশ্য ৬৬ দিনের টানা ছুটি শেষে ধীরে ধীরে সব কার্যক্রম শুরু হলে প্রাণ ফিরতে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্যেও।

দীর্ঘদিনের মন্দাভাব কাটিয়ে এখন গতি ফিরে এসেছে ফ্ল্যাট-বাড়ি কেনাবেচার ব্যবসায়। এতে স্বাভাবিকভাবেই গতি ফিরেছে ইন্টেরিয়র সেবা অর্থাৎ বাড়ির ভেতরের সাজসজ্জার ব্যবসায়। দীর্ঘদিন পর আবার গ্রাহকরা খুঁজছেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো আবার নতুন করে কাজ পেতে শুরু করেছে। কেউ কেউ দীর্ঘদিনের জমে থাকা কাজ গ্রাহকদের বুঝিয়ে দিচ্ছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাসের ধাক্কা কাটিয়ে নতুন করে ফ্ল্যাট বিক্রি শুরু হওয়ায় এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও করপোরেট অফিসগুলো চালু হওয়ায় ডাক পেতে শুরু করেছেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা।

Top-Interior.jpg

আবাসন খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত মার্চে করোনার প্রভাবে ফ্ল্যাট, প্লট বিক্রি একেবারেই কমে গিয়েছিল। মাস তিনেক পরে আবার ধীরে ধীরে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে আবাসন ব্যবসা। গত জুন-জুলাই থেকে ক্রেতারা ফ্ল্যাটের খোঁজ নিতে শুরু করেছেন।

ব্যবসার বর্তমান অবস্থা ভালো জানিয়ে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনাকালীন অনিশ্চয়তা, ব্যাংকগুলোর লেনদেন বন্ধের কারণে মার্চের পর প্রায় চার মাস আবাসন খাতে স্থবিরতা ছিল। জুন থেকে আবাসন খাত চাঙ্গা হতে শুরু করে। জুলাইয়ে অবস্থার আরও উন্নতি হয়েছে, আমাদের বেচাকেনাও বেড়েছে।’

নতুন করে কাজ পেতে শুরু করেছে ইন্টেরিয়র ফার্মগুলো

ইন্টেরিয়র ডিজাইন প্রতিষ্ঠান এমঅ্যান্ডএসের কর্ণধার ও অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টেরিয়র ডিজাইনারস বাংলাদেশের (এআইডিবি) বোর্ড মেম্বার মুমানা ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনার প্রথম দুই-আড়াই মাস কাজ একদমই বন্ধ ছিল। এখন আমরা আবার কাজ পাচ্ছি। কারণ মার্কেটে কাজ আছে। করোনা আসার তিন মাস পরে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছি।’

Top-Interior.jpg

ডিজাইন কোড ইন্টেরিয়রের মালিক আবদুল্লাহ আল মিরাজ বলেন, ‘এখন আবার কাজ শুরু হয়েছে। করোনার আগে কাজের ব্যাপারে আমার সঙ্গে কিছু গ্রাহকের কথা হয়েছিল। সেগুলো ধীরৈ ধীরে চালু হয়েছে। করোনা সিচুয়েশনের পর আমি দুটি প্রজেক্ট পেয়েছি। একটার কাজ শেষ করেছি। আরেকটার কাজ করেছি। একটা সময় কার্যক্রম একেবারে বন্ধ ছিল, সেটার চেয়ে এখন অবস্থা একটু ভালো। কিছু কিছু কাজ শুরু হচ্ছে।’

গত বছরের তুলনায় কাজ অর্ধেক কমেছে

বছরের প্রথমার্ধের ক’মাসের তুলনায় এখন পরিস্থিতির উন্নতি হলেও করোনা যে ধাক্কা দিয়েছে, তাতে গত বছরের তুলনায় এ বছর অর্ধেক কাজ কমেছে ইন্টেরিয়র ডিজাইন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর। ইন্টেরিয়র প্রতিষ্ঠানগুলো বছরে ১০ থেকে ১৫টি কাজ পেলেও এ বছর তা নেমে এসেছে অর্ধেকে। এই ডিজাইনের কাজ সময়সাপেক্ষ হওয়ায় কোনো কোনোটি শেষ করতে ৫ থেকে ৮ মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায়।

করপোরেট অফিসের কাজ কমে যাওয়া, প্রতিষ্ঠানের খরচ কমানোর প্রবণতাসহ নানা কারণেই এবার কাজ কমেছে বলে মনে করেন ডিজাইনাররা।

Top-Interior.jpg

এ বিষয়ে আবদুল্লাহ আল মিরাজ বলেন, ‘কোনো কোনো প্রজেক্ট তিন মাসে শেষ হয়ে যায়, আবার কোনোটিতে প্রায় ছয় মাস লাগে। দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা লাগে বিধায় এমনিতেই ইন্টেরিয়র ফার্মগুলো কম কাজ করে। একই সময়ে তারা অন্য প্রজেক্ট হাতে নেয় না। গত বছর আমি আট থেকে ১০টি কাজ করলেও এ বছর কাজ করেছি মাত্র পাঁচটি। ’

গণ্ডি বেড়েছে ইন্টেরিয়র ডিজাইনের

ক্যাসল ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের মালিক শাদ ইরশাদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘একসময় শুধু অফিসের চেয়ারম্যানের কিংবা মিটিং রুম সাজানো-গোছানোকেই ইন্টেরিয়র বলা হতো। সময়ের ব্যবধানের সেই ধারণার পরিবর্তন হয়েছে। এখন মানুষ বাসা, অফিস স্পেস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এমনকি লঞ্চেরও ইন্টেরিয়র ডিজাইন করায়।’

তিনি বলেন, ‘দেয়ালের কী রঙ হবে, সিলিং কেমন হবে, রুম বা স্পেসের জন্য শোপিস বা আসবাবপত্রের স্থানান্তরও এখন ইন্টেরিয়র ডিজাইনের কাজ। আগে ইন্টেরিয়র শুধু শখ হলেও এখন তা প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

বই ও বাণিজ্য মেলাকে ঘিরে আশা-শঙ্কা

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি অনুষ্ঠান, মেলা ও সেমিনার বন্ধ থাকায় ছোট-বড় ইন্টেরিয়র ডিজাইন ফার্মেও আয় কমেছে। আসন্ন বইমেলা ও বাণিজ্য মেলার স্টল, প্যাভিলিয়ন কিংবা মিনি প্যাভিলিয়নের কাজ নিয়ে আশার পাশাপাশি আছে শঙ্কা।

Top-Interior.jpg

ডিজাইনাররা বলছেন, ‘মেলাগুলোর স্টল, প্যাভিলিয়ন নির্মাণ এবং ডিজাইনের কাজসহ বছরের প্রথম কয়েক মাস আমাদের হাতে অনেক কাজ থাকে। এবার করোনার সেকেন্ড ওয়েভের কথা শুনেছি। মেলাগুলো না হলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো।’

বিক্রি বেড়েছে ইন্টেরিয়র ম্যাটেরিয়ালসের

ইন্টেরিয়র ডিজাইনের কাঁচামাল আমদানিনির্ভর হওয়ায় করোনার কারণে জোগানে ঘাটতি দেখা দেয়।

এ বিষয়ে মহাখালীর ডেকোরেটিভ গ্লাসের ম্যানেজার গিয়াস উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের বিক্রি আগের তুলনায় বেড়েছে। অফিসের কাজ বন্ধ, দোকানও খালি, তাই গ্লাসের কাজ হচ্ছে কম।’

ইন্টেরিয়র আর্টের ম্যানেজার শাহেদুল আলম বলেন, ‘ইন্টেরিয়র ডিজাইনে ব্যবহার হয় ওয়ালপেপার, উডেন ফ্লোর, পিভিসি ফ্লোর, আর্টিফিশিয়াল কার্পেটসহ সিলিং। এগুলো সবগুলোই আসে বিদেশ থেকে। যেহেতু বিমানবন্দরে কড়াকড়ি তাই দোকানে এ ম্যাটেরিয়ালসও কম। আমাদের ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ ছিল প্রায় তিন-চার মাস। এখন কিছু বিক্রি হচ্ছে। এখনকার লাভের টাকা দিয়ে শুধু দোকান ভাড়ার টাকা তুলতে পারছি।’

এসএম/এসএস/এইচএ/এমএস