হবিগঞ্জে কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতি আস্থা বেড়েছে
হবিগঞ্জে কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতি আস্থা বেড়েছে গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষের। সামান্য অসুখ বিসুখে হলেই তারা এখান থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সুস্থও হয়ে উঠছেন।
সদর উপজেলার রিচি গ্রামের বাসিন্দা ৭ম শ্রেণির ছাত্র আব্দুর রহমান সাজন জানায়, কমিউনিটি ক্লিনিকে তারা ভাল সেবা পায়। এর মাধ্যমে তাদের অনেক লাভ হয়েছে। বড় কোনো সমস্যা না হলে তাদের ডাক্তারের কাছে যেতে হয় না।
চর্ম রোগের চিকিৎসা নিতে আসা একই গ্রামের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী অপি আক্তার জানায়, ওষুধ পেয়ে তারা বেশ খুশি। এটি না থাকলে সামান্য ওষুধের জন্য তাদের শহরে যেতে হতো। ডাক্তার দেখাতে হতো। এজন্য অনেক টাকা খরচ হতো।
চিকিৎসা নিতে আসা মো. ফারুক আহমেদ জানান, সামান্য রোগ হলে এখানেই ভাল চিকিৎসা হয়। বিনামূল্যে ওষুধও পাওয়া যায়। এখান থেকে পাওয়া চিকিৎসায় রোগ ভালও হচ্ছে। শহরের হাসপাতালে গেলে এ চিকিৎসা পাওয়া যেত না।
সুগেরা খাতুন (৬০) ও রুমলা খাতুন (৪০) বলেন, আমরা সব সময় অসুখ বিসুখ হলে এখান থেকে চিকিৎসা নেই। তারা (কমিউনিটি ক্লিনিকের দায়িত্বরতরা) না থাকলে আমাদের ছেলে-মেয়েদের টিকা দিতে পারতাম না। আমরা জানতামই না। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকা দেয়। ফলে আমাদের রোগবালাই অনেক কম হচ্ছে। জ্বর, সর্দি, ডায়রিয়া এসবের জন্য কোনো ডাক্তারের কাছে যেতে হয় না। তাদের কারণে প্রসূতি মায়েরা ঠিকমতো পরামর্শ পায়। যা কোনো ভাল ডাক্তারও দেয় না।
রিচি কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার মো. বাসিত উজ্জামান শিপন জাগো নিউজকে জানান, তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা চাকরিটি স্থায়ী নয়। সরকার বছরে বছরে তা বর্ধিত করে। ২০১১ সালের অক্টোবরে তাদের প্রথম নিয়োগ দেয়া হয়। মেয়াদ ছিল ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত। পরে আরও ২ বছর বাড়িয়ে তা করা হয়েছে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত।
একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে তাদের চাকরি করতে হচ্ছে। যাদের বয়স চলে গেছে তাদের এটি ছাড়া অন্য কোনো উপায়ও নেই। তাছাড়া ক্লিনিকে বিদ্যুৎ নেই, আসবাবপত্র ভাল না। ২০০১ সালে ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার সময় আসবাবপত্র দেয়া হয়েছিল। এরপর আর সংস্কার করা হয়নি। অনেক কষ্ট করে অফিস করতে হয়।
তিনি বলেন, এখানে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি আছে। প্রতি মাসে একবার ওষুধ আসে। কিন্তু যে পরিমাণ ওষুধ আসে তা রোগীর তুলনায় অপর্যাপ্ত। একটি কার্টুনের ওষুধে দেড় মাস চালানোর কথা। কিন্তু আমরা ২০ দিনের বেশি চালাতে পারি না। হাসপাতালগুলোর চেয়ে অনেক বেশি সেবা ও ওষুধ এখানে দেয়া হয়। ফলে রোগীদের আস্থা বেশি। আবার রোগীর চাপও বেশি থাকে।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. মো. নাছির উদ্দিন ভূঁঞা জাগো নিউজকে জানান, প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে ২৯ ধরনের ওষুধ দেয়া হয়। এর মধ্যে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, জ্বর, কাশি, আঘাতজনিত রোগের ওষুধও রয়েছে। বেশি জটিল হলে তারা রোগী হাসপাতালে পাঠায়। সপ্তাহে ৬ দিনই এখানে চিকিৎসা দেয়া হয়। শুধু শুক্রবার বন্ধ থাকে।
তিনি বলেন, প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডার ছাড়াও সপ্তাহে ৩ দিন একজন স্বাস্থ্য সহকারী এবং ৩ দিন একজন পরিবার কল্যাণ সহকারী দায়িত্ব পালন করেন। এগুলোতে মানুষ ভাল সেবা পাওয়ায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকের দেখভালের জন্য কমপক্ষে ১৩ এবং সর্বোচ্চ ২১ সদস্য বিশিষ্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটি থাকে। এর সভাপতি হন স্থানীয় ইউপি মেম্বার।
সরেজনি ঘুরে দেখা যায়, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা অনেক বেশি। মানুষ অনেক বড় ডাক্তারের চেয়েও সেখানে কর্মরতদের কথায় অনেক বেশি গুরুত্ব দেন। আর তাদের বিশ্বাসও করেন অনেক বেশি।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট ১৮৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) কর্মরত আছেন ২১৮ জন। এর মাঝে মাধবপুরে ৩৪টিতে সিএইচসিপি ৩৮ জন, চুনারুঘাটে ৩০টিতে ৩৩ জন, হবিগঞ্জ সদরে ২৬টিতে ২৬ জন, লাখাইয়ে ১৬টিতে ১৯ জন, নবীগঞ্জে ৩৪টিতে ৩৭ জন, বাহুবলে ১৯টিতে ২৩ জন, বানিয়াচংয়ে ২০টিতে ২৬ জন ও আজমিরীগঞ্জে ৯টি কমিউনিটি ক্লিনিকে ১৬ জন সিএইচসিপি কর্মরত আছেন। নতুন নির্মাণাধীন আছে মাধবপুরে ২টি, চুনারুঘাটে ২টি, নবীগঞ্জে ৩টি, বানিয়াচংয়ে ১টি ও আজমিরীগঞ্জে ১টি কমিউনিটি ক্লিনিক।
এসএস