ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

গর্ভবতী মায়েরা এখানে কম আসেন

প্রকাশিত: ০৮:২৯ এএম, ০৩ নভেম্বর ২০১৫

কমিউনিটি ক্লিনিক আছে, রোগী আছে, প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। আছে আধুনিক কিছু যন্ত্রপাতিও। যাতে লেগেছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। কিন্তু এসব রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেই।

কর্মসংস্থান সৃষ্টির এক অপার সম্ভাবনাময় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হলে সৃষ্টি হবে দেশের বেকার যুবদের কর্মসংস্থানের সুযোগ।

সাধারণ মানুষের দোড় গোড়ায় চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে সারা দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। দিনাজপুরে রয়েছে ৩২০টি কমিউনিটি ক্লিনিক। প্রতিটি ক্লিনিকে রয়েছে একজন সিএইচসিপি, একজন স্বাস্থ্য সহকারী ও একজন পরিবার কল্যাণ সহকারী। যাদের চাকরি এখনো স্থায়ী হয়নি। তাদের বেতন ভাতা দেয়া হয় রিভাইটাইজেশন অব কমিউনিটি হেলথ কেয়ার ইনিশিয়েটিভস ইন বাংলাদেশ প্রকল্পের মাধ্যমে থোক বরাদ্দ থেকে।

দিনাজপুর শহর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার ৫নং শশরা ইউনিয়নের রাজাপুকুর মৌজার কাঁউগাও মোড়ের পাশে রাজাপুকুর কমিউনিটি ক্লিনিক। সেখানে ৯টা ১১ মিনিটে উপস্থিত হয়ে দেখা মিললো সিএইচসিপি আইরিন আরার। তিনি তখন অফিস খুলছিলেন। পরণে সবুজ রংয়ের অ্যাপ্রন, কাঁধে ঝুলছে ল্যাপটপ।

Dinajpur-Clinic

ক্লিনিকের ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ল শিশুদের ওজন মাপার মেশিন, উচ্চতা মাপার স্কেল, ব্লাড প্রশার মাপার মেশিন, অন্যঘরে দেখতে পেলাম গর্ভবতী মায়েদের চেকআপ করার জন্য সুন্দর শয্যা ইত্যাদি ইত্যাদি।

এই ক্লিনিকে প্রতি মাসে কমপক্ষে এক হাজার রোগী আসেন। তবে গর্ভবতী মায়েরা এখানে কম আসেন। মাসে এর সংখ্যা পাঁচ থেকে সাতজন। যদিও এখানে প্রাথমিক চিকিৎসা ও পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে।

সিএইচসিপি আইরিন আরার কাছে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানালেন, ক্লিনিকে একটি ল্যাপটপ রয়েছে। যা দিয়ে তিনি প্রতিদিনের রিপোর্ট পাঠান। জানালেন ৩১ প্রকার ওষুধ সরবরাহ রয়েছে এখানে। তবে যেভাবে রোগী বাড়ছে তাতে করে অনেক সময় কিছু ওষুধ সঙ্কট দেখা দেয়।

সেখানে বসে থাকা অবস্থায় দেখা গেল স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারী এসে হাজিরা খাতায় সই করে চলে গেলেন মাঠে। পরে সিএইচসিপি আইরিন আরার কাছ থেকে জানা গেল এখানে কোনো আয়া, পিয়ন নেই।

ক্লিনিকে বিদ্যুৎ না থাকার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিষয়টি সভাপতি সাহেব বলতে পারবেন। রোগী না থাকলে একা কার্যালয়ে থাকার বিষয়ে আইরিন বলেন, আমাদেরতো চাকরি স্থায়ী হয়নি। আবার যদি নিরাপত্তার কথা বলি তাহলেতো বুঝেনই। তবে এ গ্রামেই বাড়ি হওয়ায় ভয় পান না তিনি।

সকাল ১১টার দিকে দেড় বছরের অসুস্থ শিশুকে নিয়ে আসেন মিনারা বেগম। তিনি জানালেন, তার শিশু অসুস্থ হলেই তিনি এই কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়ে আসেন। তিনি যতবার এসেছেন ওষুধ পেয়েছেন। তিনি সরকারের এই কর্মকাণ্ডে খুশি। মিনারা বেগমের দাবি এখানে একজন ডাক্তার দেয়া হোক।

গায়ে ব্যাথা নিয়ে এসেছেন কবিতা (৫০)। তিনি জাগো নিউজকে জানান, হাসিনা গদিদ বসিয়া এখনতো হামরা দাওয়াই (ওষুধ) পাছি। খালেদা জিয়া তো হসপিটালগুলা (হাসপাতাল) বন্ধ করি দিছল। তোরাওতো জানেন।

পরে বিদ্যুতের বিষয়ে রাজা পুকুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সভাপতি ইউপি সসদ্য শামসুল হকের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জাগো নিউজকে জানান, আবেদন করা হয়েছে। সরকার সিদ্ধান্ত নিলেই সারা দেশে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ হবে।

সদর উপজেলার বাইরে অন্য উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর অবস্থা জানতে অফিসের দেয়া তালিকায় সিএইচসিপিসিদের মোবাইল ফোনে ফোন করে কোনো নারী সিএইচসিপিসিদের ফোন খোলা পাওয়া যায়নি।

অবশেষে কথা হয় পার্বতীপুর উপজেলার ব্রমোত্তর কমিউনিটি ক্লিনিকের পুরুষ সিএইচসিপি মোতাহার হোসেনের সঙ্গে। তার ক্লিনিক সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে জানান, নিয়ম থাকলেও কোনো ডাক্তার একদিনও এ ক্লিনিক ভিজিটে যাননি। নারী সিএইচসিপিদের ফোন নম্বরগুলো বন্ধ কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক সময় মোবাইলে তাদেরকে অপ্রত্যাশিত ও আপত্তিকর বা বিরক্তিকর বিষয়ের শিকার হতে হয় তাই মোবাইলগুলো বন্ধ রাখতে হয় তাদের।

Dinajpur-Clinic

এলাকার মানুষ, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও সুধিজনদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, এই সরকার যেহেতু বাড়ি বাড়ি চাকরি দিতে চান, সেহেতু যদি সারা বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে একজন ডাক্তার, একজন, নার্স, একজন পিয়ন, একজন আয়া ও একজন করে নৈশ প্রহরীর পদ সৃষ্টি করা হয় তাহলে প্রতিটি ক্লিনিকে আরো পাঁচজন করে বেকারের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। সে হিসাব অনুয়ায়ী শুধুমাত্র দিনাজপুরেই ৩২০টি কমিউনিটি ক্লিনিকে এক হাজার ছয়জনের কর্মসংস্থান হবে।

দিনাজপুর জেলার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ইমদাদুল হক জাগো নিউজকে জানান, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো হওয়ার কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে রোগীদের চাপ কমেছে। মানুষ বাড়ি থেকে পায়ে হেঁটে এসে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে পারছেন। তিনি বলেন, পিয়ন, আয়ার কোনো পদ নেই। তবে নতুন করে পদ সৃষ্টি করা হলে মানুষের কর্মসংস্থান ও সেবা বাড়বে।

কিভাবে পিয়ন ও আয়ার কাজগুলো করা হচ্ছে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা ভিজিডি কার্ড ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় কিছু অর্থ যোগাড় করে এলাকার গরীব মানুষকে দিয়ে মাঝে মাঝে এই কাজগুলো করানো হয়ে থাকে।

এমজেড/পিআর

আরও পড়ুন