ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

এ বছর মিলছে না ড্রাইভিং লাইসেন্স!

জসীম উদ্দীন | প্রকাশিত: ০৬:৪২ পিএম, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

রাজধানীর তেজগাঁও নাখালপাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মালেক। এক বছর আগে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য টাকা জমা দিয়েছেন। অনলাইনে লাইসেন্সের অবস্থানও দেখতে পেতেন অ্যাপ ডিএল চেকারের (DL checker) মাধ্যমে। কিন্তু এখন রেফারেন্স নম্বর দিলে লেখা আসে সার্ভার বন্ধ।

এ ভুক্তভোগী বলেন, ‘এখন লাইসেন্সের অবস্থা জানতে পারছি না। কবে সার্ভার চালু হবে, কবে প্রিন্ট করা স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স হাতে পাব, তাও জানি না। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) শুধু তারিখ পরিবর্তন করে যাচ্ছে।’

একই হতাশার কথা শোনান শ্যামলীর রেজাউল ইসলাম। বলেন, ‘গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর স্মার্ট কার্ড পাওয়ার কথা। কিন্তু এক বছরেও হাতে পাইনি।’ শুধু আব্দুল মালেক কিংবা রেজাউল ইসলাম নন, এমন লাখ লাখ সেবাগ্রহীতা পড়েছেন বিপাকে।

বিআরটিএ বলছে, স্মার্ট কার্ড ছাপানো বন্ধ থাকা এবং করোনা পরিস্থিতির কারণে সেবা প্রায় পাঁচ মাস বন্ধ থাকায় আটকে আছে আট লক্ষাধিক ড্রাইভিং লাইসেন্স।

বিআরটিএ’র দাবি, সেবাপ্রত্যাশীরা যাতে বিপাকে না পড়েন, সেজন্য গ্রাহকদের বিআরটিএ থেকে দেয়া হচ্ছে একনলেজমেন্ট স্লিপ, যা অস্থায়ী অনুমতিপত্র হিসেবে প্রদর্শন করা যাবে। এর সাধারণ একটা মেয়াদ দেয়া থাকে। সেটা শেষ হলে আবার বাড়ানো যায়। যদিও মেয়াদ বৃদ্ধি না করলেও সমস্যা হবে না। আগামী ডিসেম্বরের ১৫ তারিখের আগে প্রিন্ট করা স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না বলে নিশ্চিত করেছেন বিআরটিএ’র একাধিক কর্মকর্তা।

এ প্রসঙ্গে বিআরটিএ’র মুখপাত্র পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আট লক্ষাধিক ড্রাইভিং লাইসেন্স ঝুলে আছে। করোনায় প্রাতিষ্ঠানিক সেবা বন্ধ ছিল। এর মধ্যে আগের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাদ হওয়ায় স্মার্ট কার্ড সরবরাহও বন্ধ ছিল।’

তিনি বলেন, “আগে বিআরটিএ’র সঙ্গে চুক্তি ছিল টাইগার আইটি’র। জাতিসংঘ থেকে প্রতিষ্ঠানটি কালো তালিকাভুক্ত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি চুক্তি থেকে বাদ পড়ে। চলতি বছরের ২৯ জুলাই পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেড (Madras Security Printers Pvt Ltd) নামক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী খুব সহসা আমরা আবারও প্রিন্ট করা স্মার্ট কার্ডের ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করতে পারব।”

driving-licence-03.jpg

তিনি আরও বলেন, আমরা যে লাইসেন্স দিচ্ছি না, তা কিন্তু নয়। সেবাও ওপেন হয়েছে। গত ২৬ মার্চ থেকে সেবা বন্ধ থাকার পর আবার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষাসহ অন্যান্য সেবা চালু হয়েছে। প্রায় পাঁচ মাস বন্ধ থাকায় এখন অনেক চাপ পড়ছে। লাইসেন্স পেতে লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। কার্ড পেতে দেরি হওয়ায় অস্থায়ী অনুমোদনপত্র দেয়া হচ্ছে।

এ ব্যাপারে বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মো. ইব্রাহীম খলিল জাগো নিউজকে বলেন, চুক্তি অনুসারে ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড আমদানি, পার্সোনালাইজেশন সেন্টার, প্রিন্টিং স্টেশন, নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটি, অন-লাইন ইউপিএস, ডাটা সেন্টার, সার্ভার, স্টোরেজ মেইনটেইন, লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য গ্রাহককে এসএমএস প্রেরণসহ সব ধরনের সেবা দেবে মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স।

‘১২০ কোটি টাকার পাঁচ বছরের চুক্তি। চুক্তি অনুযায়ী এই সময়ের মধ্যে ৪০ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে হবে প্রতিষ্ঠানটিকে। যদি খুব দরকার হয় তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিআরটিএ’র চাহিদা পূরণ করতে হবে। প্রতি আট ঘণ্টায় ছয় হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স দেবে। প্রতিষ্ঠানটির লজিক ফোরাম নামে বাংলাদেশি এজেন্ট প্রতিষ্ঠান এই কাজ বাস্তবায়ন করবে।’

কবে থেকে প্রিন্ট করা স্মার্ট লাইসেন্স কার্ড সরবরাহ করতে পারবে প্রতিষ্ঠানটি— জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটিকে সবকিছু গুছিয়ে ফুল সার্ভিস দিতে সাড়ে চার মাসের সময় দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে গ্রাহকদের। অর্থাৎ আগামী ডিসেম্বর থেকে প্রিন্ট করা স্মার্ট লাইসেন্স কার্ড সরবরাহ করা যাবে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ওয়াহেদুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে বলেন, বিআরটিএ থেকে মোটরসাইকেল চালকদের দেয়া একনলেজমেন্ট স্লিপ অস্থায়ী অনুমতিপত্র হিসেবে প্রদর্শন করা যাবে। এটির মাধ্যমে বৈধ চালক হিসেবেই রাস্তায় গাড়ি চালানো যাবে। আইনি কোনো জটিলতা হবে না। তবে এটার সুষ্ঠু সমাধান জরুরি। সেটা সম্ভব হলে চালকদের হাতে থাকবে বৈধ স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স, পুলিশের ট্রাফিকিং সিস্টেমেও গতি আসবে।

জেইউ/এমএআর/এমএস