ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

ঠাকুরগাঁওয়ের কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবাদানকারীরা থাকেন না

প্রকাশিত: ০৬:৩৩ এএম, ০২ নভেম্বর ২০১৫

ঠাকুরগাঁওয়ে কমর্রত স্বাস্থ্য সেবাদানকারী ব্যক্তিদের স্বেচ্ছাচারিতায় জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে জনগণকে স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে। এছাড়া ওষুধ সঙ্কটে পড়ে চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।

অনেক এলাকা থেকে স্থানীয় জনগণ অভিযোগ করেছেন ইদানীং খুবই অল্প সময়ের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো খুলে তাড়াতাড়ি বন্ধ করে দিয়ে যেনতেনভাবে চলছে সেগুলো। আবার যেটুকু সময় খুলছে তাও সেবাদানকারী বিশেষ করে নারীরা ক্লিনিকে থাকেন না। যার ফলে স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছে না জনগণ।

স্বাস্থ্য সেবা সাধারণ মানুষের নাগালে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে ছয় হাজার লোকের জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করে সরকার। ক্লিনিকগুলো সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকার কথা থাকলেও অধিকাংশ ক্লিনিক বন্ধ হয়ে যায় দুপুরের আগেই।

এদিকে জ্বর, মাথা ব্যাথা, ডায়রিয়াসহ বিনামূল্যে ৩১টি রোগের ওষুধ সরবরাহ করার কথা থাকলেও দেয়া হচ্ছে দুই-একটি রোগের ওষুধ। এছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ক্লিনিক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসার জন্য রোগীদের যেতে হচ্ছে অন্য কোনো ক্লিনিক বা হাসপাতালে। ফলে ভোগান্তির পাশাপাশি অতিরিক্ত টাকা গুণতে হচ্ছে তাদের।

চিকিৎসা নিতে আসা বিলকিস বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘জ্বর, মাথা ব্যাথা নিয়ে ক্লিনিকে ওষুধের জন্য এসেছি কিন্তু তারা বলছেন এখানে ওষুধ নাই। তাই আমাকে এখন বাহির থেকে ওষুধ নিতে হবে।

সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ফেরসাডাঙ্গি এলাকার বিজয় মহন্ত নামের স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের কমিউনিটি ক্লিনিকটি প্রায় সময় বন্ধ থাকে। এলাকার অসংখ্য নারী বলেছেন সেখানে পার্শ্ববর্তী কমিউনিটি ক্লিনিকটিই আমাদের একমাত্র ভরসা সেটিও প্রায় সময় বন্ধ থাকে। ফলে বাচ্চাদের সর্দি-কাশিসহ নানান রোগ ও নারীদের নানা সমস্যা সংক্রান্ত রোগের জন্য তারা চিন্তিত। এমনকি অনেকে ঝুঁকি নিয়ে ঠাকুরগাঁও শহরে কোনো ফার্মেসি বা ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন।

Thakurgao

এলাকাবাসীর দাবি এই ক্লিনিকটি বর্তমানে সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এরপর বন্ধ হয়ে যায়। তাও খোলা থাকার সময় সেবাদানকারীরা থাকেন না।

এদিকে এলাকাবাসীর বার বার এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৩১ অক্টোবর দুপুর সাড়ে ১২টায় মোহাম্মদপুর ফেরসাডাঙ্গি কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে ক্লিনিকটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে পার্শ্ববর্তী এক নারীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, মূলত ক্লিনিকটি এভাবেই চলে। তবে এজন্য অনেক রোগী এসে প্রতিদিন ফিরে যান।

এ ব্যাপারে আলাপকালে ফেরসাডাঙ্গি কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রভাইডার সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, নিয়মিত ক্লিনিকে আসা হয়। রোগী না থাকায় দুপুরের পর ক্লিনিক বন্ধ রাখা হয়।

এদিকে ঠাকুরগাঁও জেলার ১৩৭টি ক্লিনিকের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বেশির ভাগ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো একেবারেই অচল।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, ক্লিনিকের দায়িত্বে কমর্রত স্বাস্থ্য সেবদানকারী ব্যক্তিদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে গ্রামাঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা একেবারে নাজুক।

এলাকাবাসীর দাবি বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে বড় সফলতা হচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক। সেটাকে ইচ্ছা করে কিছু কুচক্রি মহল নষ্ট করতে ষড়যন্ত্র করছে।

Thakurgao

এদিকে মোহাম্মদপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহজান-ই-হাবীব জাগো নিউজকে বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আর সে সময় শুনছি অনেক ক্লিনিক বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের নজরদারি বাড়ানো দরকার।

তবে ক্লিনিকগুলো বন্ধ থাকার কথা অস্বীকার করে সিভিল সার্জন নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক এখন গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাতে বিশ্বের মডেল। তাছাড়া জেলার বেশির ভাগ কমিউনিটি ক্লিনিক খুবই ভালো সেবা দিচ্ছে। হয়তো ছোটখাটো কিছু সমস্যা থাকতে পারে। সেগুলোর ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয়া হবে।

ওষুধ সঙ্কট সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি একটি প্রকল্পের আওতায় চলে। দুইমাস থেকে আমরা প্রকল্প হতে কোনো ওষুধ পাই না। তাই ওষুধের সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

উল্লেখ্য, ঠাকুরগাঁও সদর, পীরগঞ্জ, রানীশংকৈল, বালিয়াডাঙ্গী ও হরিপুর উপজেলায় ১৩৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে।

এমজেড/এমএস

আরও পড়ুন