ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

সাকা-মুজাহিদের ভাগ্য নির্ধারণ নভেম্বরেই

প্রকাশিত: ০৬:২৮ এএম, ৩১ অক্টোবর ২০১৫

একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শীর্ষ দুই নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে পারে নভেম্বর মাসেই। গত ৩০ সেপ্টেম্বর এ রায় প্রকাশের পরদিন এ দু’জনকে মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনান কারা কর্তৃপক্ষ। তখন থেকেই এ দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর দেখার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছে দেশবাসী। আইনীসহ সকল প্রক্রিয়া শেষ হলে দ্রুত মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য প্রস্তুতিতেও রয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।

প্রসিকিউশন টিমের অন্যতম সদস্য প্রসিকিউটর রানা দাস গুপ্ত জাগো নিউজকে বলেন, আমরা আগের মামলাগুলোতে দেখেছি রিভিউ শুনানির নির্ধারিত দিনেই বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়ে যায়। যেহেতু এ দুটি মামলার রিভিউ আবেদন শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে ২ নভেম্বর, সেক্ষেত্রে আইনগত কোন কারণ না থাকলে মামলা একদিনও পেছানোর সুযোগ নেই। তাই আমি মনে করি নভেম্বরের মধ্যেই মামলাদুটির নিষ্পত্তি হতে পারে।

একাত্তরে চট্টগ্রামে হত্যা, গণহত্যায় সাকার এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করতে আরও দুটি ধাপ রয়েছে। ধাপ দুটি হলো- সর্বোচ্চ আদালতে রিভিউ নিষ্পত্তি এবং রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়া।

রিভিউ আবেদন খারিজ হলে সেই রায়ের অনুলিপি কারাগারে পাঠানো হবে। এরপর সাকা-মুজাহিদ রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চেয়ে আবেদন করার সুযোগ পাবেন। রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করলে এবং সেই আবেদন নিষ্পত্তির পর ফাঁসি কার্যকরে বাধা কাটবে।

দুই জনের রিভিউ আবেদন শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে আগামী ২ নভেম্বর। শুনানি দেরি না হলে নভেম্বরেই ফাঁসি কার্যকর হতে পারে। দেরি হলে সেটা হতে পারে ডিসেম্বর মাসে। সে ক্ষেত্রে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের আগেই ফাঁসি কার্যকর হতে পারে বলে মনে করছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আসামিপক্ষ থেকে শুনানি পিছিয়ে দিতে সময়ের আবেদন করা হবে।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর আগে যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ার পর ওই রাতেই ফাঁসি দেয়া হয়। কামারুজ্জামানের ক্ষেত্রে তার রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি হওয়ার পাঁচ দিনের মাথায় ফাঁসি দেয়া হয়।

সাকা ও মুজাহিদের আপিলের চূড়ান্ত রায়ের পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদনের ওপর শুনানির জন্য আগামী ২ নভেম্বর দিন ধার্য আছে। শুনানি হবে কি-না এ বিষয়ে আদালত ওই দিন সিদ্ধান্ত নেবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আশা করছি রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তির আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলে যত দ্রুত সম্ভব দণ্ড কার্যকর করা হবে। তিনি বলেন, দিনক্ষণ ঠিক করে আগাম কিছু বলা যাবে নিা। তবে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের আগে রায় কার্যকর হতে পারে এমন প্রত্যাশা করা যায়।

আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের আপিলের রায়ও পরিবর্তন হবে না। রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি হলে রায়ের অনুলিপি কারাগারে পাঠানো হবে। এর পর শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়া। ইতিপূর্বে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া জামায়াতের দুই নেতা অপরাধ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাননি। সাকা-মুজাহিদও সম্ভবত রাষ্ট্রপতির কাছে  ক্ষমা চাইবেন না।  আসামিরা রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা না চাইলে অথবা ক্ষমা চাইলেও তা নিষ্পত্তির মধ্য দিয়ে নভেম্বরেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে সকল আইনি বাধা কেটে যাবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, দুই মামলার বিচারের সময় মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর পক্ষে সব তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়েছে। আর এগুলো যাচাই-বাছাই করেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ চূড়ান্ত রায় দিয়েছেন। এখন সাকা চৌধুরী রিভিউয়ের পাশাপাশি নতুন করে সাক্ষী গ্রহণের আবেদন করেছেন। সে ব্যাপারে  সিদ্ধান্ত নেবেন আদালত।

দুই রিভিউ শুনানিতে কত দিন লাগবে- এর জবাবে মাহবুবে আলম বলেন এটা নির্ভর করে আদালতের ওপর। আগামী ১৬ ডিসেম্বরের আগে এ আবেদন নিষ্পত্তি হবে কি না এর জবাবে তিনি বলেন, এটা আশা করতেই পারি। কারণ আগামী পহেলা নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ আদালতে নিয়মিত বিচারকাজ চলবে। আর রিভিউয়ের শুনানির জন্য এত দিন লাগবে না।

তিনি আরো বলেন, শুনানি শুরু হওয়ার পর দুই-তিন কার্যদিবসের মধ্যেই এ আবেদনের ওপর শুনানি শেষ করা সম্ভব। দিনের পর দিন এর শুনানির সুযোগ নেই। রিভিউ খারিজ হলে এত বড় অপরাধীদের রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করবেন বলে মনে হয় না বলেও জানান অ্যাটর্নি জেনারেল। তবে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন না করলে একটি সময়ের মধ্যে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে সরকারের সামনে আর কোনো বাধা থাকবে না।

এদিকে সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, তারা দুজন এখনো বিশ্বাস করেন আপিল বিভাগে তাদের রিভিউ আবেদন গ্রহণ হবে এবং তারা ন্যায়বিচার পাবেন। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া হয় যে রিভিউ আবেদন খারিজ হলো, এর পরও কিন্তু তাদের একটি সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। আর সেটা হলো রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমার আবেদন। এ আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দণ্ড কার্যকর করা যাবে না।

রিভিউ আবেদনে খালাস পাওয়ার নজির আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের দেশে তেমন একটা নেই। তবে হতে কতক্ষণ? কারণ মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরী রিভিউ আবেদনে যে তথ্য দিয়েছেন, আদালত তা বিশ্বাস করলে তারা খালাস পেয়ে যাবেন।

এফএইচ/এআরএস/এমএস