ফেনীর অনেক কমিউনিটি ক্লিনিকে যাওয়ার রাস্তা নেই
ফেনীর কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো নানা সমস্যায় জর্জরিত। বেশিরভাগ সময় কর্মকর্তারা কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন না। কোনোটিতে রয়েছে ওষুধ সঙ্কট। কোনো কোনো ক্লিনিক বিলের মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে যেখানে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই।
সংশিষ্ট চিকিৎসকদেরও প্রায় সময় ক্লিনিকে পাওয়া যায় না। ফলে গ্রামের সাধারণ রোগীরা ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করছেন। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের সংশিষ্ট কর্মকর্তারা দাবি করেন, ক্লিনিকগুলো ঠিকমতো চলছে।
১৯৯৬ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের দোড়গোঁড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করে। সরকার পরিবর্তনের কারণে বন্ধ হয়ে যায় এসব ক্লিনিক। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর আবার এসব ক্লিনিক চালু করা হয়।
জানা গেছে, এসব ক্লিনিকে সাধারণত স্থানীয়রা কর্মরত। ক্লিনিকের জমি দাতাদের আত্মীয় স্বজন সার্ভিস প্রোভাইডার হবার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই তারা প্রভাবশালী। তারা ব্যক্তিগত কাজে বেশি ব্যস্ত থাকেন। এতে তারা নিয়মিত কর্মস্থলে থাকেন না। তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতেও সাহস পান না। অনেক ক্লিনিক বেশিরভাগ সময় তালাবন্ধ থাকে। এজন্য কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবকে দায়ী করছেন বঞ্চিতরা। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। অনেক স্থানে সেবা দিয়ে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, ফেনী সদরসহ জেলার ছয় উপজেলায় ১৫১টি কমিউনিটি ক্লিনিক করার পরিকল্পনা স্বাস্থ্য বিভাগের। এরমধ্যে ১৪৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু আছে। বাকি দুইটির কাজ নির্মাণাধিন রয়েছে। এসব ক্লিনিকে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ রোগীকে বিনামূল্যে ব্যবস্থাপত্র দেয়া হয়। সকাল ৮ থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলে ক্লিনিকের কার্যক্রম। এছাড়া কিছু ওষুধ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। বিশেষ ক্ষেত্রে নরমাল প্রসব করানো হয়। একজন সার্ভিস কেয়ার প্রোভাইডার প্রধানের দায়িত্বপালন করেন তাকে সহযোগিতা করেন স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার পরিকল্পনা সহকারী।
এছাড়াও একজন এমবিবিএস ডাক্তার সপ্তাহে ২ দিন করে বসার নিয়ম রয়েছে এ ক্লিনিকগুলো।
বৃহস্পতিবার ফেনী উপজেলার শর্শদি ইউনিয়নের ছোছনা কমিউনিটি ক্লিনিকে সকালে গিয়ে দেখা যায় সেটি খোলা হয়েছে সকাল সাড়ে ১০টায়। দেখা যায়, ক্লিনিকটি সড়ক থেকে প্রায় ২৫০ গজ দূরে একটি ফসলি জমিতে তৈরি করা হয়েছে। রোগী বা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের ক্লিনিকে যাতায়াতের জন্য কোনো সড়ক বা সংযোগ সড়ক নেই।
গ্রামের বাসিন্দা মো. ইলিয়াছসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, ক্লিনিকটি দেরি করে খোলা হলেও তেমন কোনো সেবা নেই। জসিম উদ্দিন নামে মাত্র একজন সার্ভিস প্রোভাইডার বসেন এখানে। তাছাড়া রাস্তা না থাকায় রোগীরা সেখানে যেতে পারেনা।
তাদের অভিযোগ, এখানে কোনো এমবিবিএস ডাক্তার আসেন না। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় আজকের ১৭ জন রোগীর রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। স্থানীয়রা দীর্ঘ তিন বছরেও সড়ক না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শর্শদী ইউনিয়নের ৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ড নিয়ে এ কমিউনিটি হাসপাতাল কিন্তু স্থানীয় ওয়ার্ডের মেম্বার ও তার ঘনিষ্ট দিয়ে পরিচালনা কমিটি করায় সঠিক ব্যবস্থাপনা হচ্ছেনা বলে দাবি করেন অন্য ওয়ার্ডের সেবা গ্রহিতারা।
ক্লিনিক পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও শর্শদি ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. হানিফ দাবি করেন, ক্লিনিকটি নিয়মিত খোলা হয় এবং রোগীদেরকে ওষুধপত্রও দেওয়া হয়। ক্লিনিকের সংযোগসড়ক না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন মাঠের ধান কাটা হলে ইউপি চেয়ারম্যান সংযোগসড়ক করে দেবেন বলে জানিয়েছেন।
শর্শদি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম জানান, চোছনা কমিউনিটি ক্লিনিকটি সংযোগসড়ক ছাড়াই নির্মাণ করা হয়েছে। ক্লিনিকের সামনের জমির মালিকেরা সড়কের জন্য জমি দিতে রাজি হলে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মাটি দিয়ে একটি সংযোগসড়ক করে দেওয়া হবে।
লস্করহাট কমিউনিটি ক্লিনিকে দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা তাসলিমা আক্তার বলেন, এখানে চিকিৎসা দেয়া হলেও পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ পাওয়া যায় না। এতে অধিক মূল্য দিয়ে বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হয়। এ অভিযোগ একাধিক রোগীর। সেখানকার সার্ভিস প্রোভাউডার অজিজুর রহমান বলেন, আমাদের স্টকে যতক্ষণ ওষুধ থাকে আমরা ততক্ষণ তা সরবরাহ করি। প্রতিদিন ৬০/৭০ জন রোগী দেখেন বলে দাবি করেন তিনি।
সদর থানার উত্তর গোবিন্দপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডর জিয়াউর রহমান রাসেল জানান, রোগীদের অতিরিক্ত চাপ থাকায় প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
তবে ফেনীতে কমিউনিটি ক্লিনিকে নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সদরের কাজিরবাগ,দাগনভুঁইয়ার জায়লস্কর কমিউনিটি ক্লিনিক, ফুলগাজীর আনন্দপুর কমিউনিটি ক্লিনিক, পরশুরামের সাহেব বাজার কমিউনিটি ক্লিনিক, সোনাগাজীর চরখোঁয়াজ কমিউনিটি ক্লিনিক প্রান্তিক জনগোষ্ঠিতে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডা. ইসমাঈল হোসেন সিরাজী জাগো নিউজকে বলেন, সরকার স্বাস্থ্যসেবাকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি জনবলও নিয়োগ করা হয়েছে। প্রত্যেকটি কমিউনিটি ক্লিনিকে এমবিবিএস ডাক্তার সপ্তাহে ২দিন বসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া আছে।
তিনি দাবি করেন ফেনীর সবকয়টি ক্লিনিক অবকাঠামোগত ভালো আছে। প্রতিনিয়ত এগুলো মেরামত করা হয়। এখানে ৩০ ধরনের ওষুধ প্রদান করা হয় বলে তিনি জানান।
এমএএস/এমএস