ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

মাঠে নেই বিরোধীরা, তবুও চাপে সরকার

প্রকাশিত: ০৪:১৫ এএম, ২৯ অক্টোবর ২০১৫

বিরোধীজোট রাজপথে না থাকলেও নিরাপত্তা এবং জঙ্গিবাদ প্রশ্নে সরকার কঠিন সময় পার করছে। মাঠের রাজনীতিতে সরকারবিরোধী সংগঠনগুলো নিষ্ক্রিয় থাকলেও সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা সরকারকে প্রচণ্ড চাপের মুখে ফেলছে। রাজনৈতিক এমন চাপের কথা স্বীকার না করলেও সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বিদেশি নাগরিক হত্যাসহ নানা কর্মকাণ্ডের জন্য বিরোধীপক্ষকে ঘায়েল করে, যে ভাষায় কথা বলছেন, তাতে করে নিজেদের উদ্বেগের বিষয়টিই দৃশ্যত প্রকাশ পাচ্ছে।
 
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী এক নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘ঘটনা যারাই ঘটাক, হত্যাকাণ্ড ঘটছে এটি তো অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। এ নিয়ে সরকারের মধ্যেও উদ্বেগ কাজ করছে না, তা বলা যাবে না। বিরোধীজোট মাঠে নিষ্ক্রিয় থাকলেও তারা নানা ষড়যন্ত্র করে সরকারের পতন চাইছে। সরকার কৌশলগত অবস্থান নিয়ে সেই ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে না পারলে চাপ আরো বাড়তে পারে।’

তবে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ চাপের কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জনমনে উদ্বেগ কিছুটা থাকা স্বাভাবিক।’

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। চারদলীয় জোটের ব্যাপক দুর্নীতি-অপশাসনের বিরুদ্ধে ওই জনসমর্থন থাকলেও বছর যেতে না যেতেই মহাজোট সরকারের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ উঠতে থাকে। ক্রমান্বয়ে জনসমর্থনও হারাতে থাকে মহাজোট সরকার, যার প্রমাণ মেলে রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও গাজীপুরের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে।

এদিকে জয়-পরাজয়ের হিসাব কষেই মহাজোট সরকার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করে। সরকারের কৌশলগত অবস্থানে ওই নির্বাচনের আয়োজন থেকে ছিটকে পড়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধীজোট। ছিটকে পড়ে রাজনীতির মাঠ থেকেও। টানা হরতাল-অবরোধ আর ব্যাপক জ্বালাও-পোড়াওয়ের আন্দোলন করলেও সরকারের ক্ষমতায় যাওয়া ঠেকাতে ব্যর্থ হয় বিরোধীপক্ষ। বরং আন্দোলন নিয়ে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়ে বিএনপি-জামায়াত জোট। একইভাবে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারির পর টানা তিন মাস আন্দোলন করেও শূন্য হাতে ঘরে ফিরতে হয় বিরোধীজোটকে।

অন্যদিকে সরকারের কঠোর অবস্থানে আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে বিএনপি-জামায়াত। হতাহত, মামলা, গ্রেফতারসহ নানামুখী চাপে প্রায় কোণঠাসা বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। বিরোধীজোটের এমন দুর্বলতায় স্বস্তি ফিরে আসে মহাজোট শিবিরে। কিন্তু দুই বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের পর সরকার নিরাপত্তার প্রশ্নে কঠিন চাপের মুখে পড়তে থাকে।

ওই দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কূটনীতিক মহলের প্রতিক্রিয়ায় সরকার যে ধরনের চাপের মুখে পড়ে, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনও দেখা যায়নি। ঘটনার পরপরই কোনো কোনো দেশ তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ সফরের ব্যাপারে বিশেষ সতর্কাবস্থা জারি করে। বিদেশিদের অনেকেই বাংলাদেশ সফর বাতিল করতে থাকে। হত্যাকাণ্ডের জন্য জঙ্গি সম্পৃক্ততা আছে এমনটি প্রচার থাকলেও, অনেকে বাংলাদেশের অস্থির রাজনীতিকেই দায়ী করে আসছেন।

সরকার পক্ষও এর জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করে বক্তব্য দিতে থাকে। হত্যাকাণ্ডের জন্য খোদ প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের অনেক মন্ত্রীই বিরোধী পক্ষের দিকে আঙ্গুল তোলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরকেও কেউ কেউ ষড়যন্ত্রের অংশ বলে অভিযোগ করে আসছেন।
      
গত ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজার এবং ৩ অক্টোবর রংপুরে জাপানের নাগরিক কুনিও হোসিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ২৬ অক্টোবর শিয়া সম্পদায়ের তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলায় এক কিশোর নিহত হয়, আহত হয় অর্ধশত। এর আগে ২২ অক্টোবর রাজধানীর গাবতলী চেকপোস্টে তল্লাশির সময় দুই যুবকের ছুরিঘাতে ইব্রাহিম মোল্লা নামের এক এএসআই নিহত হন।

এসব হত্যাকাণ্ডের পর সারা দেশেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। বিশেষ করে রাজধানীর কূটনীতিক পাড়ায় কঠোর নিরাপত্তা জারি করে চাপ মুক্ত থাকতে চাইছে সরকার। দেশব্যাপি ব্যাপক তল্লাশির পাশাপাশি বিরোধীজোটের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারও দেখানো হচ্ছে।

তবে সরকার চাপে, তা মানতে নারাজ আওয়ামী লীগ নেতা ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, কেন এমন হত্যাকাণ্ড ঘটছে, তা এখন সবার কাছেই পরিষ্কার হচ্ছে। হরতাল-অবরোধের নামে বিএনপি-জামায়াত দিনের পর দিন মানুষ হত্যা করলেও সরকার চাপ মুক্ত থেকেই তা মোকাবেলা করছে। এরকম দুই একটি হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সরকারকে চাপে রাখার কোনো সুযোগ নেই। সরকার এ নিয়ে উদ্বিগ্নও না। শক্ত হাতেই সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করা হবে, যেভাবে ইতিপূর্বে মোকাবেলা করা হয়েছে।

এএসএস/জেডএইচ/এমএস