ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

‘পরিবর্তিত’ রাজনীতি ধারণের চেষ্টায় বিএনপি!

খালিদ হোসেন | প্রকাশিত: ০৮:২৪ এএম, ২৮ জুলাই ২০২০

বৈশ্বিক পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনায় ‘পরিবর্তিত রাজনীতি’ ধারণের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বিএনপি। নতুন পরিস্থিতিতে সংগঠনকে আরও বেশি শক্তিশালী ও কার্যকর করতে দলের শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তনের গুঞ্জনও রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একই বৃত্তে লক্ষ্যহীন ঘুরপাক খাচ্ছে বিএনপি। ঘুরে দাঁড়ানোর পথ তৈরি করতে পারছে না দলটি। দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সরকারের অনুকম্পায় মুক্তি পেলেও শর্তের জালে বন্দি। দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না তিনি। অন্যদিকে, প্রায় ছয় হাজার মাইল দূরে থাকা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দলটি ঘুরে দাঁড়াবে— এমন আশাও ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। রয়েছে দলের দুই শীর্ষ নেতার মধ্যকার শীতল যুদ্ধ! এমন অবস্থায় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলটিকে আরও বেশি কৌশলী এবং দলের মধ্যকার গুণগত পরিবর্তন জরুরি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

দলটির এক অংশের দাবি, নেতৃত্ব সঙ্কটের কারণে বিএনপি রাজনৈতিক কৌশল ঠিক করতে পারছে না। গত দুই বছর ধরে তারেক রহমান সংগঠন গোছানোর দায়িত্ব নিলেও কার্যত তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে তার দেশে ফেরার আশা নেই বললেই চলে। তাই তারেকের নেতৃত্বে বিশ্বাস রাখতে পারছেন না তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এছাড়া মুখে না বললেও তার একক অনেক সিদ্ধান্তে নাখোশ বিএনপির সিনিয়র নেতারা

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক সদস্য জাগো নিউজকে বলেন, করোনাযুদ্ধে বিএনপির নেতাকর্মীরা যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন আগামীতে সব ক্ষেত্রে তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে। এছাড়া আগামীতে দলের শীর্ষ নেতৃত্বেও পরিবর্তন আসবে। দল ঘুরে দাঁড়াবে। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণে আমাদের নেতাকর্মীরাও মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

bnp

তিনি আরও বলেন, যেখানে দল আন্দোলন করে ম্যাডামের মুক্তির বিষয়ে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি সেখানে শর্ত ভেঙ্গে তার আবার জেলে যাওয়ার কোনো মানে হয় না।

দলের এক সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিএনপির সবপর্যায়ের নেতারা এখন তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত। দলটির রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের ৯০ ভাগই এখন ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে সম্পন্ন হচ্ছে।

গত চার মাসে অন্তত অর্ধশত ভার্চুয়াল প্রোগ্রাম করেছে বিএনপি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রতি সপ্তাহে একটি করে প্রাসঙ্গিক সংলাপ, দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিষয়ভিত্তিক ১২টি ভার্চুয়াল সেমিনার, একটি স্মরণ সভা, করোনা মোকাবিলায় করণীয় শীর্ষক একাধিক সেমিনার, প্রবাসী আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহের ওপর সেমিনার, সদ্যপ্রয়াত শাহজাহান সিরাজ ও অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদকে নিয়ে স্মরণ সভা, নানা বিষয়ের ওপর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ডজন খানেক ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্স ইত্যাদি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে দলের ভার্চুয়াল কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপির প্রবীণ নেতারা শুরুর দিকে কিছুটা অস্বস্তিতে ছিলেন। তবে সময়ের ব্যবধানে তারাও বিষয়টিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। দলের স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য বর্ষীয়ান রাজনীতিক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টর মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর— যারা কোনোদিন ফেসবুক ব্যবহার করেননি, তারাও এখন স্বাচ্ছন্দ্যে জুম মিটিংয়ে যুক্ত হচ্ছেন, সাবলীলভাবে আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন।

bnp

ভার্চুয়াল প্রযুক্তিতে দলের প্রবীণ নেতাদের অভ্যস্ত করতে সহযোগিতা করছেন পরিবারের তরুণ সদস্যরা। তারাই মূলত ভার্চুয়াল সভাগুলোতে প্রবীণদের যুক্ত করে দিচ্ছেন। কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত সমাধানও করে দিচ্ছেন। যদিও সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খানসহ আরও কয়েকজন প্রবীণ নেতা আছেন, যারা বহু বছর ধরে ফেসবুক-টুইটার ব্যবহার করে আসছেন।

প্রথম জুম মিটিংয়ে যুক্ত হওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে সম্প্রতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমি এখন জুম মিটিং করতে পারি। জুমে বসে নাতি-নাতনিদের সঙ্গে কথা বলছি। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে প্রযুক্তির এই ব্যবহার সবাইকে শিখতে হবে।’

শুধু ঢাকার সভা-সেমিনার নয়, ঢাকার বাইরে বড় শহরগুলোতেও বিএনপির পক্ষ থেকে যেসব অনুষ্ঠানের আয়োজন হচ্ছে, সেগুলোতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইন্টারনেটের মাধ্যমে যুক্ত হচ্ছেন। জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে বক্তব্য এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড এমনকি কমিটি পুনর্গঠনের কাজও ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে চালুর নির্দেশ দিচ্ছেন তিনি।

bnp

বিএনপির ঘুরে দাঁড়ানোর প্রসঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ঘুরে দাঁড়ানোর পথে একধরনের সংশয় ও সংকট রয়েছে। কোথায় যেন সমন্বয়ের অভাব! তবে দলের রাজনৈতিক পলিসি নিয়ে আলোচনা চলছে। বাকিটা ভবিষৎ বলে দেবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পরিবর্তনের রাজনীতি শুরু হয়েছে ভিশন-২০৩০ ঘোষণার সময় থেকেই। এখন সংগঠনকে যুগোপযোগী করার চেষ্টা চলছে। তবে সরকারের জুলুম-নির্যাতন এবং মামলা-হামলার কারণে বিএনপির ঘুরে দাঁড়াতে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে।

বিএনপির ঘুরে দাঁড়ানোর প্রসঙ্গে কয়েকদিন আগে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় সদ্য প্রয়াত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদের। তার বক্তব্য ছিল, “বিএনপির ‘পয়েন্ট অব ভিউ’ কী সেটা খুঁজে বের করা এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি। ঘুরে দাঁড়াতে হলে মুক্তিযুদ্ধ, ভূ-রাজনীতি এবং বৈশ্বিক পরিবর্তন-কে বিবেচনায় রেখে দলের পলিসি নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়া দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান নিশ্চিতে এবং সুশাসনের বিষয়ে জনগণের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্য অবস্থান তৈরি করতে হবে। দলের ভেতরে শীর্ষপর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত এক নীতিতে চলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।”

কেএইচ/এমএআর/জেআইএম