ঈদের আকাশপথে যাত্রীর হাহাকার
>> ঈদের ১৫ দিন আগেই শেষ হতো প্লেনের টিকিট
>> এবার বিশেষ ছাড়েও দেখা মিলছে না যাত্রীর
>> লড়ছে দুই এয়ারলাইন্স, অফারে যাত্রী টানার চেষ্টা
ট্রেন-বাসের মতো হাঁকডাক, লাইন ধরা বা কোনো হৈ-চৈ ছাড়াই প্রতি বছর ঈদের সময় নীরবে বিক্রি হতো আকাশপথের টিকিট। বাস-ট্রেন বা লঞ্চের টিকিট ছাড়ার আগেই শেষ হয়ে যেত সেগুলো। তবে এবার চিত্র ভিন্ন। করোনা মহামারির কারণে ঈদের নয়দিন বাকি থাকলেও অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইটগুলোতে যাত্রীর দেখা মিলছে না। নানা অফার আর মূল্যছাড় দিয়েও কাঙ্ক্ষিত টিকিট বিক্রি হচ্ছে না।
এয়ারলাইন্সগুলো বলছে, গত চার-পাঁচ বছর ধরে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মাসখানেক আগেই সুপার সেভার বা ইকোনমি প্রোমো ক্লাসের কম দামের টিকিটগুলো বিক্রি হয়ে যেত। ১৫ দিন আগেই বিভিন্ন গন্তব্যের ফ্লাইটের সব টিকিট শেষ হয়ে যেত। অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনার ব্যবস্থা করতো এয়ারলাইন্সগুলো। তবে এবার ঈদের আর মাত্র নয়দিন বাকি থাকলেও কোনো একক ফ্লাইটের টিকিট শেষ হয়নি।
ঈদের আগে সাধারণত ঢাকা থেকে যশোর, সৈয়দপুর ও বরিশাল ফ্লাইটে টিকিটের চাহিদা বেশি থাকত। ঈদের পর কক্সবাজার ও সিলেটে যাত্রী বেশি যেত। এবার কোনো রুটেই তেমন যাত্রী নেই।
‘বাংলাদেশের কোথাও মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। তাই আগামী ১ আগস্ট, শনিবার দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে’— জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির মঙ্গলবারের সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১ আগস্ট পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। তবে এবার ঈদের সঙ্গে অতিরিক্ত কোনো ছুটি যোগ হচ্ছে না। নিজ নিজ কর্মস্থল ত্যাগ না করতে সরকারি চাকরিজীবীদের নির্দেশনাও দিয়েছে সরকার। এছাড়া করোনার কারণে অতি প্রয়োজন ছাড়া গন্তব্য পরিবর্তন করছেন না ঢাকাবাসী। এসব কারণে এবার টিকিটের চাহিদা কম বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত বছর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ঈদ উপলক্ষে প্রায় ৪০ হাজার যাত্রী আকাশপথে ঢাকা ছাড়েন। কিন্তু এবার সেই সংখ্যা অর্ধেকেরও কম হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নভোএয়ারের সিনিয়র ম্যানেজার (মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস) এ কে এম মাহফুজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বিগত বছরগুলোতে ঈদের ১০-১৫ দিন আগের তারিখের টিকিটও শেষ হয়ে যেত। এবার আমরা তেমন যাত্রী পাচ্ছি না। নানা অফার দিলেও আকাশপথে আগের মতো টিকিটের চাহিদা নেই।
‘ঈদের আগে সাধারণত রাজশাহী, যশোর, সৈয়দপুর ও বরিশালের টিকিটের চাহিদা বেশি থাকত। ঈদের পরে কক্সবাজার ও সিলেটের চাহিদা থাকত বেশি। আমরা (নভোএয়ার) পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে এসব রুটে ঈদের আগে অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চেয়ে আবেদন করে রেখেছি। অনুমোদন পাওয়ার পর যদি যাত্রী থাকে তাহলে অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করব।’
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এতদিন অভ্যন্তরীণ রুটে টিকিটের যে চাহিদা ছিল ঈদের চার-পাঁচ দিন আগে সেই চাহিদা কিছুটা বাড়তে পারে। বিগত বছরগুলোতে ঈদের আগে সাধারণত যশোর, সৈয়দপুর ও বরিশাল রুটে যাত্রীর সংখ্যা বেশি থাকত। এবার তেমনটি দেখা যাচ্ছে না। যদি শেষ মুহূর্তে টিকিটের চাহিদা বাড়ে, তাহলে এই রুটগুলোতে অতিরিক্ত ফ্লাইট দেয়া যেতে পারে। তবে এবার ঈদে অতিরিক্ত ছুটি না থাকায় চাহিদা আগের বছরগুলোর তুলনায় কম হতে পারে।
এদিকে টিকেটিং এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা থেকে চলতি বছর যাত্রীর সংখ্যা কম থাকলেও ২৯ জুলাইয়ের টিকিটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চাহিদা ৩০ জুলাইয়ের টিকিটের জন্য। বিভিন্ন গন্তব্য থেকে আগস্টের ৬, ৭ ও ৮ তারিখে ঢাকায় ফেরার টিকিটের চাহিদা বেশি।
লড়ছে দুই এয়ারলাইন্স, অফারে যাত্রী টানার চেষ্টা
যাত্রী সংকটের কারণে অভ্যন্তরীণ সব রুটে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রেখেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এছাড়া বেসরকারি এয়ারলাইন্স রিজেন্ট এয়ারওয়েজ মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে তিন মাসের জন্য সবধরনের ফ্লাইট চলাচল স্থগিত রেখেছে। তবে স্থগিতের চার মাস হলেও ফ্লাইট চালু করতে পারেনি সংস্থা দুটি।
যাত্রী টানতে টিকিটের দাম কমিয়ে নানা প্রমোশনাল অফার দিয়েছে ইউএস–বাংলা ও নভোএয়ার। অভ্যন্তরীণ সব রুটে ভাড়ার ওপর ১২ শতাংশ মূল্যছাড় দিয়েছে ইউএস–বাংলা এয়ারলাইন্স। করোনা পরিস্থিতিতে তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কিংবা মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে টিকিট কেনা যাবে। তাদের এই সুযোগ পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত চলবে।
নভোএয়ার তাদের টিকিটের মূল্যে ১০ শতাংশ ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে। এই অফারে ৩১ জুলাই পর্যন্ত স্মাইলস সদস্যরা নভোএয়ারের বিক্রয়কেন্দ্র, ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট কিনতে পারবেন।
কোভিড-১৯ মহামারিকালীন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, যশোর, সৈয়দপুর, রাজশাহী ও বরিশাল রুটে ফ্লাইট চলাচল করছে। শুধু কক্সবাজার রুটটি এখনও চালু হয়নি।
এআর/এমএআর/এমএস