ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

হিসাব কষছে ইসলামী দলগুলো

প্রকাশিত: ০৩:৩৯ পিএম, ২৭ অক্টোবর ২০১৫

সরকারবিরোধী বড় দলগুলো মাঠে সক্রিয় হলে এবং তাদের মাঠে নামার পরিবেশ সৃষ্টি হলে পরিস্থিতি বুঝে মাঠে নামতে নতুন করে হিসেব কষছে ইসলামী দলগুলো। এছাড়াও ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ইস্যুতে আন্দোলনকারী ইসলামপন্থি দলগুলোও মাঠে নামার জন্য তৈরি হচ্ছে। তবে আপাতত একা আন্দোলন করে নতুন করে হামলার মুখে পড়তে নারাজ তারা। পাশাপাশি প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে অঘোষিত সুসম্পর্ক ও রাজনৈতিক ময়দানে নমনীয়তা রক্ষা করেও চলবে ওই দলগুলো।

দলগুলোর নেতারা বলছেন, এই সরকারের গত মেয়াদে সংবিধানের মূলনীতি থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসের কথা উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে; জাতীয় শিক্ষানীতিতে ধর্মীয় শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি; আদালত নির্দেশ দিয়েছেন বোরকা পরা বাধ্যতামূলক করা যাবে না এবং নারীনীতিতে কোরআনবিরোধী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ইস্যুগুলোকে সামনে এনে আন্দোলন করা হবে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী :
এ দলটির বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে রয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ। ইতোমধ্যে কয়েকজন যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে সাজাপ্রাপ্তও হয়েছে। তাদের নেতাদের মুক্তি ও সরকারবিরোধী ইস্যুতে গত কয়েক বছর ধরে একা একা আন্দোলন করে জামায়াত আশানুরূপ ফল না পেয়ে হামলা-মামলায় বিপর্যস্থ হয়ে এখন কৌশল পরিবর্তন করেছে।

এদিকে এক বছর যাবৎ ২০ দলীয় জোটের প্রধান দল বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক তেমন ভালো যাচ্ছে না জামায়াতের। এতোদিন এ বিষয়টি অন্তরালে থাকলেও এখন তা প্রকাশ্যেই চলে এসেছে। এ নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতা হামিদুর রহমান আযাদ গণমাধ্যমে বিবৃতিও দিয়েছেন। এছাড়া সরকার পরিবর্তনের সম্ভাবনা না দেখে এ অবস্থায় দলকে এবং দলের শীর্ষ নেতাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এমনকি স্বাভাবিক জীবনযাপনের স্বার্থে নিরব থাকার কৌশলকেই ভালো মনে করছে তারা।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, জামায়াত মাঠে ছিলো, আছে এবং থাকবে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার হীন উদ্দেশ্যেই অনেকেই ভিত্তিহীন মিথ্যা অভিযোগ করছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

ইসলামী ঐক্যজোট :
এ দলটির কার্যক্রম ৪ বছর যাবৎ তেমন একটা নজরে পড়ে না। জোটের বৈঠকগুলোতে এ দলটির চেয়ারম্যানকে দেখা গেলেও কর্মসূচিতে তাদের দেখা যায় না। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিক ইসলামী ঐক্যজোটের (একাংশ) চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, সরকারবিরোধী দলগুলোকে রাজপথে নামতে দেওয়া হচ্ছে না।

খেলাফত মজলিস :
২০ দলীয় জোটের অংশীদার এ দলটির কার্যক্রম তেমন একটা দেখা যায় না। অন্যান্য দলগুলো রাজপথে কার্যক্রম না চালালেও বক্তৃতা কিংবা বিবৃতির মধ্যে থাকে। কিন্তু এ দলটিকে তাতেও দেখা যায় না। দলটির আমির অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বর্তমানে অসুস্থ থাকায় দলীয় কার্যক্রম তেমন একটা দেখা যায় না। মূলত এ সংগঠনটির কার্যক্রম চলে ২০ দলীয় জোটের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে।

দলের আন্দোলন প্রস্তুতির কথা জানতে চাইলে খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, দেশে আন্দোলন করার কোনো পরিবেশ নেই। তাই রাজপথে কেউ নামতে সাহস পাচ্ছে না।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম :
২০-দলীয় জোটের এ শরিক দলটির অবস্থাও একই। এ দলটির সঙ্গে বিএনপি এবং অন্যান্য দলের নেতাদের তেমন একটা যোগাযোগ নেই বলেই জানান দলটির কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ আরমান।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ :
প্রধান দুই জোটের বাইরে অন্যতম শক্তিশালী দল মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। প্রতিদিনই কিছু না কিছু কর্মসূচি পালন করছে এ দলটি। যদিও সরকারবিরোধী আন্দোলনে তেমন একটা দেখা যায় না এ দলটিকে। রাজনৈতিক মাঠে কথিত আছে যে এ দলটি সরকারের সঙ্গে না থাকলেও মূলত সরকারেরই অংশ। তাই অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর উপর সরকারের নজর এক রকম থাকলেও এ দলটির সঙ্গে আচরণ কিছুটা ভিন্ন। যদিও দলীয় সরকারের অধীনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি তারা।

ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আহমদ আবদুল কাইয়ূম জানান, একটি কর্মসূচি দিলে পুলিশের অনুমতির জন্য শতবার যেতে হয়। তাও অনুমতি পাওয়া যায় না।

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন :
অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখনও মিটিয়ে উঠতে পারেনি হাফেজ্জী হুজুরের ইন্তেকালের পর তার প্রতিষ্ঠিত দল বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে এ সংগঠনটি। হাফেজ্জী হুজুর প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী কামরাঙ্গীরচর জামিয়া নুরিয়া মাদ্রাসা, মসজিদ কমপ্লেক্স ও দোকানের ভাড়া বাবদ মাসিক প্রায় ১০ লাখ টাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এ সংকট এখনও চলমান। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী খেলাফত আন্দোলনের দায়িত্বে যারা থাকবেন তারাই মাদ্রাসারও দায়িত্বে থাকবেন।

জানা যায়, ইতোমধ্যে মাওলানা আহমাদুল্লাহ আশরাফ ও হাবীবুল্লাহ মিয়াজীর নেতৃত্বাধীন ‘খেলাফতে আহমদিয়া’ আতাউল্লাহ ও জাফরুল্লাহ খানের নেতৃত্বাধীন ‘খেলাফতে জাফরিয়া’ আবার আবদুল মালেক চৌধুরী ও ফিরোজ আশরাফীর নেতৃত্বাধীন ‘খেলাফতে মালেকিয়া’র পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছেন স্ব স্ব গ্রুপের সমর্থকরা। তবে প্রত্যেকেই নিজেদের মূল বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন বলে দাবি করছেন।

জানতে চাইলে জাফরুল্লাহ খান জাগো নিউজকে বলেন, সবইতো জানেন, তা হলে আমার মুখ দিয়ে বলার কি দরকার?

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস :
মরহুম শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস দুই জোটের বাইরে আরেকটি অন্যতম শক্তিশালী ধর্মীয় দল। আজিজুল হক মারা যাবার পর এ দলটি ক্রমশ ঝিমিয়ে পড়ছে। তাদের দাবি সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম নিয়মিতই হচ্ছে তবে সরকার তাদেরকে সভা-সমাবেশের জন্য কখনই অনুমতি দেয় না।

সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুল হক হেলাল জানান, আমরা আন্দোলনের মধ্যেই আছি। সভা-সমাবেশের জন্য প্রশাসনের অনুমতি পাই না।

তরীকত ফেডারেশন :
সরকারি দলের অংশ ১৪-দলীয় জোটের শরিক একমাত্র ইসলামী সংগঠন তরীকত ফেডারেশন, যারা নৌকা প্রতীকে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেয়। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে তরীকত ফেডারেশনের দায়ের করা মামলাতেই। জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের জন্য আইনি এবং রাজপথে লড়াই করে যাচ্ছে এ সংগঠনটি।

দলটির মহাসচিব এম এ আউয়াল বলেন, জামায়াত-শিবির সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদী দল। জামায়াত নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। যদিও দলীয় তেমন একটা কর্মসূচি দেখা যায় না এ দলটিরও।

হেফাজতে ইসলাম :
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দলগুলোর বাইরে শক্তিশালী সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। অর্থনৈতিক কারণে সংগঠনটির ভিতরেই চলছে কোন্দল। সরকারের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগে তাদের নেতাদের মধ্যেই দেখা দিয়েছে অবিশ্বাস। সংগঠনটির প্রধান আল্লামা শাহ আহমদ শফীর কার্যক্রমও এখন চট্টগ্রামের হাটহাজারী এলাকার মাদ্রাসায় সীমাবদ্ধ। রাজধানীতে এখন আর নতুন করে কোনো সভা-সমাবেশ করতে পারছে না তারা। লালবাগ মাদ্রাসায় মাঝেমধ্যে তাদের কিছুটা তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়।

এছাড়াও আরো কিছু ইসলামী দলের মধ্যে রয়েছে- জাকের পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট (একাংশ), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত, ওলামা-মাশায়েখ তৌহিদী জনতা সংহতি পরিষদ, ইসলামী ঐক্য আন্দোলন, বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, গণতান্ত্রিক ইসলামী ঐক্যজোট ও ইউনাইটেড ইসলামী পার্টিসহ বেশকিছু ইসলামী সংগঠন।

এএম/একে/এমএস