নিরাপত্তাহীনতায় দেশ ছাড়ছেন ব্লগাররা
দেশে নিজের জীবন অনিরাপদ মনে করছেন মুক্ত চিন্তার লেখক `ব্লগাররা`। একের পর এক প্রকাশ্য হত্যাকাণ্ডে রীতিমতো চিন্তত তারা। আর এ কারণে দেশ ছাড়ছেন অনেক ব্লগার। যদিও আইনশৃংখলা বাহিনীকে খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের নিরাপত্তা দেয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু এতেও আশ্বস্ত হতে পারছেন না ব্লগাররা। তাই জীবন বাঁচানোর তাগিদে পাড়ি জমাচ্ছেন ভিনদেশে।
রাজীব, অভিজিৎ রায়, অনন্ত বিজয়, ওয়াশিকুর বাবুর পর সর্বশেষ নিলাদ্রী নিলয়। ব্লগাররা জানান, এ পর্যন্ত ৩০ জনের বেশি দেশ ছেড়েছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ব্লগারদের মধ্যে ২০ জন যুক্তরাজ্য, জার্মানি, সুইডেনসহ ইউরোপের দেশগুলোতে রয়েছেন। বাকিরা পাড়ি জমিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডাতে।
নিভরযোগ্য সূত্রগুলো এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তারা বলছে, অভিজিৎ রায়ের হত্যার পর থেকে শুরু হয় ব্লগারদের দেশ ছাড়ার প্রক্রিয়া।
দেশ ছাড়ার বিষয়ে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার জাগো নিউজকে বলেন, নিরাপত্তা চাওয়ার পরেও একের পর এক ব্লগারকে হত্যা করা হচ্ছে। পুলিশের কাছে ব্লগারদের হত্যার হুমকির তালিকা থাকা সত্ত্বেও তাদের নিরাপত্তা দিতে পাড়ছে না। তাই নিরাপত্তার খোঁজে হয়তো তারা বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে।
ব্লগারদের নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগের বিষয়টি জানতে চাইলে পুলিশের মিডিয়া ও পাবলিক রিলেসনন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, যারা আমাদের কাছে নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জানিয়েছে, আমরা তাদের নিরাপত্তা দিচ্ছি। পুলিশ প্রোটেকশন দেয়া হয়েছে। অনেককে প্রকাশ্যে, অনেককে আড়ালে থেকে (গোপনে) নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে।
এ বছরের মার্চে ৮৪ জন ব্লগারকে হত্যার একটি তালিকা প্রকাশ করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও তালিকাটি সংগ্রহ করেছে। ২০১৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তালিকার ১১ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এদের মধ্যে ব্লগার রাজীব, জগৎ জ্যোতী তালুকদার, অনন্ত বিজয় দাস, ওয়াশিকুর বাবু, নিলাদ্রী নিলয় উল্লেখযোগ্য।
ইমরান এইচ সরকার আরো জানান, আনসারুল্লাহ’তো ৮৪ জন ব্লগারের তালিকা দিয়েছে। এ তালিকা বড় হচ্ছে। মাজারের পীর, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরাও তাদের শিকার হচ্ছেন। এটি পুলিশের গাফলতির কারণে হয়েছে।
দেশ ছাড়ার তালিকায় ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন, ওমর ফারুক লুক্স, অনন্য আজাদ, মশিউর রহমান বিপ্লব ও রাসেল পারভেজও রয়েছেন।
মন্ত্রণালয়ের কাছে তালিকা থাকা সত্ত্বেও কেনো তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেয়া হয়নি -জানতে চাইলে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এডিশনাল আইজি) সমমর্যাদার এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ব্লগারদের হত্যার ‘তালিকায়’ অধিকাংশ ব্লগারের ফেসবুকের নাম আর ব্লগিং আইডি দেয়া আছে। সবার আইডির নাম খুঁজে বের করে নিরাপত্তা দেয়া সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই যাদের নাম ওই তালিকায় রয়েছে তারা যদি নিজেরাই পুলিশের কাছে এসে নিরাপত্তার বিষয়টি জানায় তাহলে ভালো হয়।
মৃত্যুর কয়েকদিন আগে ব্লগার নিলাদ্রী নিলয় এক ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ করেছিলেন, নিরাপত্তা চেয়ে থানায় গেলে তিনটি থানার কেউ তাকে নিরাপত্তা দেয়নি। সম্প্রতি বাংলাদেশে ব্লগারদের পুলিশি নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে জার্মান ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যমে ডয়েচ ভেলি’তে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বিদেশে বসবাসরত কয়েকজন ব্লগার। সাক্ষাৎকারের প্রতিবেদনটিতে তারা, ব্লগারদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশের অনাগ্রহ আর গাফলতির কথা উল্লেখ করেছেন।
এ বিষয়ে পুলিশের মিডিয়ার ডিসি বলেন, ‘ব্লগারদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। আর যারা পুলিশের নিরাপত্তা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করছেন তারা বিষয়টি গণমাধ্যমের কাছে না জানিয়ে আমাদের জানালে ভালো হয়।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আলাদা একটি সেল ব্লগারদের মন্তব্যের উপর নিয়মিত নজরদারি করছে। ব্লগাররা ব্লগে স্পর্শকাতর কোন বিষয়ে মন্তব্য করছে কি-না, কারো অনুভূতিতে আঘাত দিচ্ছে কি-না -সেগুলো খেয়াল রাখছে সেলটি।
এ বিষয়ে ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘ব্লগারদের হত্যার পরও যখন সরকার তাদের শাসানোর জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কিভাবে আশ্বস্ত হবো? তাইতো বিদেশ চলে যাচ্ছে।`