ফের লকডাউন অর্থনীতিকে আরও বিপদগ্রস্ত করবে
করোনাভাইরাসের সংক্রমণঝুঁকি কমাতে রোববার থেকে এলাকাভিত্তিক আবারও লকডাউনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, তাতে অর্থনীতি আরও বিপদগ্রস্ত হবে বলে মন্তব্য করেছেন মহাজোট সরকারের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
সরকারের সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের অব্যবস্থাপনার কারণেই করোনাঝুঁকি বেড়েছে।’
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণের ব্যাপকতা বিবেচনায় নিয়ে রাজধানীসহ দেশের কিছু এলাকাকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করে এলাকাগুলো লকডাউন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আগামীকাল রোববার (৭ জুন) থেকে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু এলাকা এর আওতায় আসতে পারে।
রেড জোন বিবেচিত এলাকার সবাইকে ঘরে থাকতে হবে, একান্ত প্রয়োজন না থাকলে কেউ বাইরে বের হতে পারবেন না। ওই এলাকার মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিস সরবরাহেরও ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। বেশি আক্রান্ত এলাকাকে রেড, অপেক্ষাকৃত কম আক্রান্ত এলাকাকে ইয়োলো এবং একেবারে কম আক্রান্ত বা আক্রান্তমুক্ত এলাকাকে গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। রেড জোনকে লকডাউন করা হবে, ইয়োলো জোনে যেন আর সংক্রমণ না বাড়ে সেই পদক্ষেপ নেয়া হবে। সতর্কতা থাকবে গ্রিন জোনেও।
ফের লকডাউন প্রসঙ্গে জাগো নিউজের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয় রাশেদ খান মেননের কাছে। তিনি বলেন, ‘আমরা করোনা মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সময় পেয়েছিলাম। অন্তত তিন মাস আমাদের হাতে ছিল। সরকার কাজে লাগাতে পারেনি। উদাসীন থাকার পর যখন পরিস্থিতি বেসামাল, সরকার তখন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করল। সরকারের কেউ বলল, সাধারণ ছুটি। কেউ বলল, লকডাউন। সাধারণ মানুষকে সচেতন না করে উল্টো আতঙ্কিত করে তোলা হলো।’
‘মানুষ কিছুই বুঝতে পারল না। ছুটি পেয়ে বাড়ি চলে গেল। পরিবহন বন্ধ না করে ছুটি দিল। যেখানে ঘরবন্দি থাকার কথা, সেখানে সবাই গ্রামে চলে গেল। গার্মেন্ট শ্রমিকদের ছুটি নিয়ে তামাশা করা হলো। বিপদের মধ্যে ছুটি দিয়ে পাঠানো হলো। আবার তাদের চরম ঝুঁকির মধ্যেই কারখানায় ফিরিয়ে আনা হলো। এগুলো তো সরকারের সহায়ক সিদ্ধান্তের কারণেই হলো।’
বামপন্থী এই রাজনীতিক বলেন, ‘শহরের মানুষদের গ্রামে পাঠানোর ব্যবস্থা করে গ্রামের মানুষগুলোকে আক্রান্ত করা হলো। অথচ, সরকার চাইলে গ্রামগুলো নিরাপদ রাখতে পারত। চারিদিকে যখন সমন্বয়হীনতা, তখন সেনাবাহিনী, পুলিশ মাঠে নামানো হলো। ততক্ষণে সর্বনাশ যা হবার, তা-ই হলো। এখন মানুষ মরছে। মৃত্যুর ঝুঁকিতে গোটা দেশ। রাষ্ট্রীয় এই অব্যবস্থাপনা নিয়ে যে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন। সর্বশেষ ঈদ উপলক্ষে শপিংমলগুলো খুলে দিল। কে খুলে দেয়ার নির্দেশনা দিল, তা কেউ বলছে না। প্রধানমন্ত্রীর কথা বলল অনেকেই। আদৌ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল কিনা, জানি না। অথচ, ঈদের মার্কেটেই আক্রান্ত বেশি হয়েছে বলে বিশ্বাস করি।’
“‘ঢাকাতেই সাড়ে সাত লাখ লোক করোনায় আক্রান্ত’ বলে দ্য ইকোনোমিস্ট যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তা অমূলক নয়” উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চরম অব্যবস্থাপনার কারণে এমন হওয়াই স্বাভাবিক। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার এবার অঞ্চলভিত্তিক লকডাউনের ঘোষণা দিচ্ছেন। তাতে কী ফল আসবে জানা নেই। তবে এতে করে অর্থনীতি আরও বিপদগ্রস্ত হবে। সাধারণ মানুষ না খেয়ে মরবে। ইতোমধ্যে গার্মেন্টকর্মীদের ছাঁটাই করার ঘোষণা দিয়েছে, যা অর্থনীতি, সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করবে।’
এএসএস/এমএআর/জেআইএম