ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

আউশ-আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়াতে চাই

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৯:৩৪ পিএম, ১৭ মে ২০২০

ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী। একই সঙ্গে বর্তমান ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। দায়িত্ব নিয়ে দেশের খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কৃষি মন্ত্রণালয়কে সফলতার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। করোনা-সংকুল পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশ যখন খাদ্য নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তখন এই কৃষি-বিজ্ঞানীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি একটি শক্তিশালী অবস্থানে দাঁড়িয়েছে।

টাঙ্গাইল- ১ (মধুপুর-ধনবাড়ি) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত সংসদ সদস্য আব্দুর রাজ্জাক। কৃষির সমসাময়িক বিষয় নিয়ে টেলিফোনে ড. রাজ্জাকের সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজ’র নিজস্ব প্রতিবেদক মাসুদ রানা

জাগো নিউজ : করোনা পরিস্থিতিতে কৃষিক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?

আব্দুর রাজ্জাক : আমাদের প্রধান খাদ্য চাল, এটা আমরা ধান থেকে পাই। চালের তিনটি মৌসুম- আমন, বোরো ও আউশ। বোরোটা হলো সবচেয়ে বড়, দুই কোটি টনেরও বেশি শস্য আমরা এখান থেকে পাই। এবার বোরো ঘরে তোলা নিয়ে হাওরে একটা ঝুঁকি ছিল। হাওরের ধানটা কাটা হয়ে গেছে। সমতলে তেমন ঝুঁকি নেই। আশা করি, বড় কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে ইনশাআল্লাহ চাষীরা ধান ঘরে তুলতে পারবেন। অনেকটা এগিয়েও গেছে।

কৃষিতে করোনাভাইরাসের প্রভাব এড়াতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহে জরুরি সহায়তা বাবদ প্রথম পর্যায়ে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদানের মাধ্যমে ৮০৩টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ৪০০টি রিপার এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদানের মাধ্যমে ৫১৯টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ৫০৮টি রিপারসহ সর্বমোট ১৩২২টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ৯০৮টি রিপার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এসব কৃষি যন্ত্রপাতির মধ্যে হাওর অঞ্চলে ৩৭০টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ৪৫৫টি রিপার ধান কাটায় ব্যবহার করা হয়।

সফলভাবে ও নিরাপদে হাওর অঞ্চলের বোরা ধান দ্রুত কর্তনের জন্য উত্তরাঞ্চলসহ দেশের প্রায় চারটি কৃষি অঞ্চল হতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ব্যবস্থাপনায় এবং সরকার ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় প্রায় ৩৮ হাজার কৃষি শ্রমিককে হাওরে পাঠানো হয়।

করোনাভাইরাস উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় কৃষকের অনুকূলে প্রণোদনা সুবিধার আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক শস্য ও ফসল খাতে ৪ শতাংশ রেয়াতি সুদে প্রায় ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা কৃষিঋণ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া ফুল ও ফল চাষ, মৎস্য চাষ, পোল্ট্রি খাতে ৪ শতাংশ সুদে আরও পাঁচ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা স্কিম গঠন করা হয়েছে। ফলে কৃষি খাতে সর্বমোট প্রায় ১৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ঋণ প্রবাহ সৃষ্টি হবে। এ ঋণের সদ্ব্যবহার করে কৃষি খাতের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

Agriculture Minister

জাগো নিউজ : কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে আরও কী কী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন?

আব্দুর রাজ্জাক : এখন আমাদের পরবর্তী ফসলগুলো কী? বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ডব্লিউএফপি (জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি), ইফ্রি (ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট), জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা- সবাই বলেছে যে, করোনার প্রভাবে অনেক দেশেই অর্থনীতিতে একটা সংকট আসতে পারে। এর প্রভাব খাদ্য উৎপাদনের ওপর পড়বে। খাদ্য সংকট হবে, এমনকি দুর্ভিক্ষও হতে পারে। সেদিক বিবেচনায় রেখে আমাদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে হবে। যাতে কিছুতেই আমাদের কৃষি উৎপাদন কমে না যায়, যাতে উৎপাদন আরও বাড়ে। আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো আঘাত আসলেও আমরা যেন তা সহ্য করতে পারি।

সেগুলো নিয়েই আমরা কাজ করছি। খাদ্যশস্যের মজুত বাড়াতে কাজ করছি। পরবর্তী ফসল আমাদের আউশ, আউশের জন্য প্রস্তুত হয়ে আমরা মাঠে বীজ, সার প্রণোদনা হিসেবে চাষীকে দিয়েছি। আবাদের এলাকা বাড়িয়েছি। গত বছর আউশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৭ লাখ টন, এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩৫ লাখ টন।

আমরা পাটের বীজ দিয়ে দিয়েছি। গ্রীষ্মকালীন সবজির বীজও বিতরণ করা হয়েছে।

এরপরের ফসল হলো আমাদের আমন। আগামী জুনের মধ্যে বীজতলা করতে হবে। এরও প্রস্তুতি চলছে। আমনেরও লক্ষ্যমাত্রা বাড়াতে চাই, আবাদের এলাকাও বাড়াতে চাই। এজন্য আমরা পর্যাপ্ত বীজ দেব, বীজতলা করব এবং প্রণোদনা দেব। যাতে আমরা অতীতের চেয়ে অনেক বেশি আমন উৎপাদন করতে পারি।

এরপর অক্টোবরে আসবে রবি ফসল। রবি ফসলের মধ্যে রয়েছে- ভুট্টা, গম, আলু, ডাল, সরিষা এবং অন্যান্য শাকসবজি। এগুলোর জন্যও আমাদের প্রস্তুতি চলছে। সবগুলোরই টার্গেট এরিয়া ইনশাআল্লাহ আমরা বাড়াবার চেষ্টা করব।

জাগো নিউজ : মার্কিন কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ ইন্দোনেশিয়াকে পেছনে ফেলে তৃতীয় অবস্থানে এসেছে…

আব্দুর রাজ্জাক : মার্কিন কৃষিবিভাগ বলেছে যে, আমাদের খাদ্যের উৎপাদন বেড়েছে। আমরা ধান উৎপাদনে চতুর্থ ছিলাম, ইন্দোনেশিয়াকে ছাড়িয়ে আমরা এখন তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছি। এটা অত্যন্ত ভালো খবর। আমাদের উৎপাদন বাড়ছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।

Agriculture Minister

প্রতি বছর ২২ লাখ নতুন মুখ আমাদের জনসংখ্যার সঙ্গে যোগ হচ্ছে। সেটা অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে নিয়ে খাদ্য উৎপাদনের বৃদ্ধির ধারা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। আরও বেগবান, আরও ত্বরান্বিত করতে হবে।

জাগো নিউজ : করোনা পরীক্ষায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থার গবেষণাগারের পিসিআর ল্যাবগুলো ভূমিকা রাখছে। এ বিষয়ে কী বলবেন?

আব্দুর রাজ্জাক : কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পিসিআর ল্যাবগুলো পরীক্ষার জন্য ধার হিসেবে দেয়া হয়েছে। এগুলো করোনা চিকিৎসায় ভূমিকা রাখছে। গবেষণাগারের এই যন্ত্রগুলো জাতীয় সম্পদ, এর মালিক দেশের সবাই। জাতীয় দুর্যোগের সময় এগুলোকে আমরা কাজে লাগিয়েছি।

জাগো নিউজ : করোনা মোকাবিলায় কৃষককে ঋণ প্রণোদনা দেয়া হবে। অভিযোগ থাকে, প্রণোদনার অর্থ কৃষকদের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছায় না…

আব্দুর রাজ্জাক : আমরা বলেছি, কৃষি বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে যাতে প্রণোদনার এই ঋণ বিতরণ করা হয়।

জাগো নিউজ : ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। এর কারণে মাঠে থাকা বোরোর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি-না?

আব্দুর রাজ্জাক : ঘূর্ণিঝড় আম্ফান এখনও অনেক দূরে, সেভাবে আমাদের এখানে আঘাত করবে বলে মনে হয় না। আঘাত করলেও সাধারণত উপকূলীয় এলাকায় করবে। উপকূলীয় এলাকায় বোরো কম হয়। তাই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বোরোর তেমন ক্ষয়ক্ষতির আশংকা করছি না।

আরএমএম/এমএআর/এমএস